
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ২২ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ
‘আজি নুংসি নুপাং মনহান্ন আপনাগাছির মুঙে আহিলু। আপনাগাছি হাবিয়ৌ হারপারাইতা বারো বুঝরাইতা।’ এ দুটি বাক্য বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের ভাষায় লেখা। এর অর্থ স্বভাবতই বাংলাভাষী তো বটেই, দেশের অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছেও বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। তবে বাক্য দুটি বাংলায় লিখলে সহজেই বোঝা যাবে। কারণ এটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের সেই অমর ভাষণটির শুরুর দুই বাক্য। তা হলো, ‘আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন, সবই বোঝেন।’
শুধু বিষ্ণুপ্রিয়াদের ভাষায় নয়, দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২২টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনুবাদ হয়েছে। এ কাজ করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (সিল)। আজ মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলায় এ ভাষণসংবলিত একটি বইয়ের প্রকাশনা হবে। দেশে এতগুলো জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণের অনুবাদ এই প্রথম।
যে ২২টি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনুবাদ হয়েছে, সেগুলো হলো বম, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, চাকমা, গারো, হাজং, খাসি, খিয়াং, কোচ, কোল, লুসাই, মাহালে, মেইতে মণিপুরি, ম্রো, মুন্ডা, ওঁরাও কুরুখ, ওঁরাও সাদ্রি, পাহাড়ি, পাংখোয়া, সাঁওতাল, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা ও কোডা। সংখ্যায় বেশি বা পরিচিত চাকমা, গারো, সাঁওতাল ভাষার পাশাপাশি সংখ্যা একেবারে কম পাংখোয় এবং কোডাদের ভাষায় এ ভাষণ অনুবাদ হয়েছে।
এ উদ্যোগকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যে কাজ করা উচিত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই, তা করা হলো স্বাধীনতার ৫০ বছর পর। কিন্তু যত দেরিই হোক, এর মাধ্যমে দেশের বাংলাভাষী নন, এমন জাতির মানুষের কাছে আমাদের দায় কিছুটা হলেও শোধ হলো।’
ইউনেসকোর একটি উপদেষ্টা কমিটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ২০১৭ সালে। সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকস (সিল) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষার সুরক্ষায় গবেষণার কাজ করে। বিশেষ করে যেসব ভাষা বিপন্ন, সেগুলোর প্রয়োজনমতো বর্ণমালা বা ব্যাকরণ তৈরির কাজও করে প্রতিষ্ঠানটি।