আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার প্রতি শুভেচ্ছা জানাই। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য 'টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য'। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জন্য তা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে বিষয়টির তাৎপর্য কতটুকু অনুধাবিত হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে দিবসটি পালনের সাফল্য। ২০ শতকের যে সময়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন শুরু হয়, তখন বিশ্বের কোথাও নারীর ভোটাধিকার ছিল না। তাই তখন এর প্রধান লক্ষ্য ছিল নারীর সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা।
আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নারীরা পুরুষের মতোই ভোটাধিকার ভোগ করেন; যদিও কোনো কোনো অঞ্চল আছে, যেখানে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে পরিবারপ্রধান হিসেবে পুরুষের মতকেই মেনে চলতে হয়। কোথাও কোথাও ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণেও নারীরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তবে আজকের দিনে যে বিষয়টার উল্লেখ বিশেষভাবে দরকার তা হলো, পুরুষতন্ত্রের এ প্রতাপ বহু ক্ষেত্রে আরও দোর্দণ্ডরূপে বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের 'উইমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল ২০২২' শীর্ষক প্রতিবেদনের কথা বলা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৪। চলাচলের স্বাধীনতা, কর্মক্ষেত্র, বেতন, বিয়ে, অভিভাবকত্ব, উদ্যোক্তা, সম্পদ ও পেনশন- এই আটটি সূচকের ওপর ৩৫টি প্রশ্নের ভিত্তিতে স্কোর নির্ণয় করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্কোর ১০০-এর মধ্যে অর্ধেকের কম, ৪৯ দশমিক ৪। ২০২১ সালেও বাংলাদেশের স্কোর একই ছিল। প্রতিবেদনটির এই চিত্রও হতাশাজনক। তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান একমাত্র আফগানিস্তানের ওপরে। দেখা যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৫। সেই হিসাবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আর্থিক সুযোগের সমতায় বাংলাদেশের নারীর অবস্থানে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।