বাঙালির চিরঞ্জীব অনুপ্রেরণার মহাকাব্য
‘স্বাধীনতা’ এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো! বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে উপজীব্য করে সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম খ্যাতিমান কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়–
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’
৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ রাজনীতির কবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমর সৃষ্টি– বাঙালি জাতির চিরঞ্জীব অনুপ্রেরণার এক মহাকাব্য। যে মহাকাব্যটি বাঙালির হাজার বছরের সংগ্রামের ধারা ও স্বাধীনতার লালিত স্বপ্ন থেকে উৎসারিত হয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একমাত্র বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই এমন মহাকাব্যিক ভাষণ উচ্চারণ সম্ভব ছিল। কেননা তিনিই ছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ইতিহাস আর কাউকে সেই অথিউরিটি প্রদান করে নাই।
পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা রাজনৈতিক ভাষণের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের অনন্য সাধারণ ভাষণটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পৃথিবীর অন্য সব সাড়া জাগানো ভাষণ ছিল লিখিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোনও প্রকার লিখিত পাণ্ডুলিপি বা নোটস ছাড়াই অবলীলায় যেন রাজনীতির এক কবিতা পাঠ করেছিলেন সেদিন। ১১০৫ শব্দের প্রায় ১৮ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে, মিনিটের হিসেবে গড়ে ৪৮ থেকে ৫০টি শব্দ বের হয় বঙ্গবন্ধুর মুখ থেকে। কোনও প্রকার শব্দের পুনঃউচ্চারণ ও বাহুল্যবর্জিত এ ভাষণটি শুধু বাঙালির শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাসের বিবৃতি ও স্বাধীনতার ঘোষণাই নয়, একই সাথে শব্দচয়ন ও স্বতঃস্ফূর্ত বাক্য বিন্যাসে গাঁথা যেন কোনও বাকশিল্পীর একটি মহাকাব্য। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর মনের সমস্ত কথা জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন। প্রায় ১৯ মিনিটের ভাষণ বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন জনতাকে ‘আপনি’ সম্বোধনের মধ্য দিয়ে। বলেছিলেন ‘আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন’। তিনি জনতাকে তাঁর সহযাত্রী মনে করেছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলার জনগণ এবং বঙ্গবন্ধু একই অনুভূতিতে একাকার হয়ে গিয়েছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ঐতিহাসিক ৭ মার্চ