পশ্চিমা বিশ্বের উস্কানি ও ভ্রান্ত নীতির পরিণতি
ইউক্রেন সংকট ঘিরে রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে যে শত্রুতা তৈরি হয়েছে; সেটি বলা যায় পুরোনো সংকটের নতুন রূপ। ইউক্রেন সংকট বোঝার জন্য দেশটির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং এর আগের ইতিহাস দেখা প্রয়োজন। আমরা জানি, ইউক্রেন কেবল রাশিয়ার প্রতিবেশীই নয়, বরং দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নেরও সদস্য ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতার পর ইউক্রেন স্বাভাবিকভাবেই সিআইএস (কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস)-এর সদস্য। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার প্রতিবেশী হওয়ায় ইউক্রেনের অবস্থান ও নিরাপত্তার সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত স্বার্থ জড়িত। বস্তুত আমরা দেখছি, রাশিয়াকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার অংশ হিসেবেই ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব এক ধরনের খেলা শুরু করেছে।
বলাবাহুল্য, ইউক্রেন প্রসঙ্গে রাশিয়া ও পশ্চিমের শক্তির মাঝে চলমান বৈরিতার কেন্দ্রে রয়েছে নিরাপত্তা জোট ন্যাটো। রাশিয়া স্বাভাবিকভাবেই চাইছে, তাদের প্রতিবেশী ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম শরিক ইউক্রেন কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের ওপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে রাশিয়া সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাশিয়া ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে পূর্ব ইউরোপের সব ধরনের সামরিক সম্প্র্রসারণ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে। রাশিয়ার দাবি, ন্যাটো পুরো অঞ্চলকে নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের যুক্তি, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রনীতিতে রাশিয়া নাক গলাতে পারে না। তারা যদিও ন্যাটোর 'খোলা দরজা নীতি'র কথা বলছে; অর্থাৎ যে কোনো ইউরোপীয় রাষ্ট্র ন্যাটোর সদস্যপদ চাইতে পারে কিন্তু তার পেছনের উদ্দেশ্য আসলে রাশিয়াকে বেকায়দায় ফেলা। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ইউরোপজুড়ে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ১৯৪৯ সালে যে ন্যাটো গঠিত হয়; সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পরও সংস্থাটি তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এ সময়ে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই শক্তিশালী হয়। আমরা দেখেছি, ন্যাটো পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে মনোযোগ দেয়। যেগুলোর অনেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য ছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন-পরবর্তী রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের নেতৃত্বের দুর্বলতায় ন্যাটো শক্তিশালী হয়। পরবর্তীকালে যখন ভদ্মাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেননি। রাশিয়ার 'নিয়ার অ্যাবরোড' নীতি তথা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্রগুলোর সুরক্ষা নীতির কারণে ইউক্রেনে অন্যদের হস্তক্ষেপ কিংবা তাদের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়টি রাশিয়া ভালোভাবে নিচ্ছে না। বলাবাহুল্য, সেটি রাশিয়ার নিরাপত্তার দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী হিসেবে ইউক্রেনে পশ্চিমাদের আধিপত্য রাশিয়ার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। তা ছাড়া ইউক্রেনের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ভাষার দিক থেকে রাশিয়ান।
- ট্যাগ:
- মতামত
- চলমান সংকট
- উস্কানি
- ইউক্রেন সংকট