মানুষের অবিশ্বাস দূর করতে হবে
কলকাতা থেকে একবার রাজধানী এক্সপ্রেসে দিল্লি আসছিলাম। সহযাত্রী ছিলেন ঢাকার এক ছাত্র। পড়াশোনার কারণে তিনিও হাওড়া থেকে দিল্লি আসছিলেন। বিকেলবেলা ট্রেনে উঠেছিলাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে ছুটন্ত ভারত দেখতে দেখতে সেই তরুণ আমাকে বলেছিলেন, ‘দাদা, আপনাদের দেশ কত বড়! সেই কাল কখন ট্রেনে উঠেছি, এখনো শেষ হলো না। দেশটা চলছে তো চলছেই। ’ আমি বললাম, হ্যাঁ, অতীতের ভারতবর্ষ আজকের ‘ইন্ডিয়া’ ভৌগোলিক আয়তনে নিশ্চয়ই অনেক বড়। তরুণটি বললেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ তো আপনাদের কাছে খুবই ছোট একটা দেশ। ’ আমি বললাম, আয়তনে ছোট; কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের গুরুত্ব অনেক অনেক বড়। বাংলাদেশের কাছে আমাদের প্রয়োজনও প্রকাণ্ড।
আজ বহু বছর পর এই ছোট্ট ঘটনাটা মনে পড়ে গেল। এটা প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। কিন্তু আজ যখন ইউক্রেন নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে সাঁড়াশি আক্রমণ চলছে আর ভারতের নাভিশ্বাস উঠছে। দিল্লির সাউথ ব্লকের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। যখন পাকিস্তান আর আফগানিস্তান গলা জড়াজড়ি করে ভারতের দুটি ফ্রন্ট থেকে আক্রমণের শাসানি দিচ্ছে, সেই সময় ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো মজবুত করার জন্য হিমাচল প্রদেশের রাজধানী সিমলা শহরে দুই দেশের মধ্যে তিন দিন ধরে একটা ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা হয়েছে। এই ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনাটা কতটা ট্র্যাক টু আর কতটা ট্র্যাক ওয়ান, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তার কারণ দুই দেশেরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, হাইকমিশনাররা ছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, সেটা হলো এই বৈঠকে ভারতের বিশিষ্ট কিছু আরএসএস নেতা ছিলেন, যেখানে রাম মাধব এবং ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থা এই আয়োজনের মধ্যমণি। আবার এম জে আকবরের মতো বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশের বন্ধু। তাঁর উপস্থিতিও তাৎপর্যপূর্ণ। এই সম্মেলনের তাৎপর্য আমরা আজকে আলোচনা করব; কিন্তু তার আগে বলি, ভারত আর বাংলাদেশের সম্পর্কটা আজকে খুব বেশি প্রয়োজন। আবার এটাও বলা প্রয়োজন যে এই সম্পর্ক ও অতীতের ঐতিহ্যের যে গরিমা, তা ম্লান করে দিয়ে এই বন্ধুত্বে ফাটল ধরাতে চাইছে কেউ কেউ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মানুষের আস্থা
- আস্থা অর্জন