শেখ হাসিনাকে আরো সাহসী হতে হবে
যাঁরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁদের ইদানীংকালের প্রশ্ন—দেশের এই বৃহত্তম দলটির বর্তমান অবস্থা কী? সোজা উত্তর—ভালো নেই। ১৩ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকতে থাকতে মনে হয় দলের অনেক কলকবজা নড়বড়ে হয়ে গেছে। অনেক নেতা ক্লান্ত। ব্যতিক্রম সম্ভবত দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
সদ্যঃসমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল দেখলে তা-ই মনে হয়। দলের মনোনীত ৪০ শতাংশের বেশি চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা মার্কা নিয়ে হেরেছেন। বেশির ভাগ আসনে জিতেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী, যাঁরা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন। স্থানীয় মানুষের মতে, এই বিদ্রোহী প্রার্থীরা ছিলেন আওয়ামী লীগের আসল নেতা, যাঁদের মনোনয়ন দিলে এমন হতাশাব্যঞ্জক চিত্র দেখতে হতো না।
সাধারণ মানুষের ধারণা, এবার অনেক স্থানীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মোটা অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন কিনেছেন। বঞ্চিত হয়েছেন দলের প্রকৃত নেতারা। যখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার একটি উপজেলায় জামায়াতের একজন রোকন, যিনি কাদের মোল্লার গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেছেন, তিনি নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেন তখন সাধারণ মানুষের মনে এই বিশ্বাস আরো বদ্ধমূল হয়।
এই ঘটনার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলে বলেছেন, তাঁরা সেই ব্যক্তির নাম মনোনয়ন বোর্ডে পাঠাননি। তিনি অবাক হয়েছেন এই ব্যক্তি কিভাবে মনোনয়ন পেলেন। অবশ্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। সারা দেশে এমন মনোনয়ন পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী অথবা বিরোধীদলীয় প্রার্থীর কাছে হেরেছেন অসংখ্য প্রার্থী। কারণ এই প্রার্থীদের মনোনয়ন পাওয়ার কথা নয়।
প্রধানত এলাকায় তাঁদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। যাঁদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁরা মনোনয়ন না পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন। সাধারণ জনগণ বিশ্বাস করে এবার এসব মনোনয়ন অনেক ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে। কারা এই মনোনয়ন বিক্রি করলেন—এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মুখে মুখে।
দলের প্রধান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এই করোনাকালে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে তেমন একটা বের হন না। বাইরের মানুষ বা দলীয় কোনো নেতানেত্রী তাঁর সঙ্গে তেমন একটা দেখা করতে পারেন না। অনেক সময় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এর ফলে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বঙ্গবন্ধুর করা আইন পর্যন্ত ভঙ্গ করে অনেকের পদায়ন হয়েছে।