পানির দাম তিন গুণ, এমডির বেতন বৃদ্ধি সোয়া চার গুণ
কোনো পণ্য কম দামে কেনা গেলে অনেকেই টেনে আনেন 'পানির দর'-এর উদাহরণ। সাদাচোখে সবার ধারণা, পানি খুব সহজলভ্য, দামও মামুলি। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকা ওয়াসার এখনকার প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম আবাসিকে ১৫.১৮ টাকা আর বাণিজ্যিক দর ৪২ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে ঢাকা ওয়াসার সঞ্চিত মুনাফা ৮৯২ কোটি টাকা থাকার পরও এই দাম অন্তত ২০ শতাংশ বাড়াতে দৌড়ঝাঁপ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে গত ১২ বছরে পানির দাম ১৩ বার বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
এদিকে, বারবার পানির দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের ঘাড়ে বাড়তি খরচের বোঝা চাপানো হলেও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের বেতন বাড়ছে অবিশ্বাস্য গতিতে। এক যুগে পানির দর বেড়েছে অন্তত ৩০০ শতাংশ আর ওয়াসা এমডির বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ।
ঢাকা ওয়াসার 'কীর্তি' এখানেই শেষ নয়; দেশের অন্য তিনটি ওয়াসা যে দরে গ্রাহককে পানি দেয়, সেখানে ঢাকা ওয়াসা পানি বেচে দুই থেকে তিন গুণ দরে। ঢাকা ওয়াসার প্রতি ইউনিট আবাসিক পানির দাম ১৫.১৮ টাকা, বাণিজ্যিকে ৪২ টাকা। রাজশাহী ওয়াসার আবাসিকের দর মাত্র ৬.৮২ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৩.৬২ টাকা। খুলনা ওয়াসার আবাসিকে ৮.৯৮ টাকা, বাণিজ্যিকে ১৪ টাকা। চট্টগ্রাম ওয়াসার আবাসিকে ১২.৪০ টাকা, বাণিজ্যিকে ৩০.৩০ টাকা।
এদিকে, অন্য তিন ওয়াসার চেয়ে ঢাকা ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচও বলা হচ্ছে দুই থেকে তিন গুণ। রাজশাহী ওয়াসার প্রতি ইউনিট পানি উৎপাদনে খরচ পড়ে ৯ টাকারও কম। খুলনা ওয়াসা ১৭ টাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার খরচা হয় ২০ টাকা। অথচ ঢাকা ওয়াসায় উৎপাদন খরচ প্রায় ৩০ টাকা। ঢাকা ওয়াসা-সংশ্নিষ্টরা দাবি করেন, রাজধানীতে যে কোনো কাজের নির্মাণ খরচ তুলনামূলক বেশি। তাই পানি উৎপাদন খরচও বেশি পড়ে।
গ্রাহকরা মনে করেন, করোনা অতিমারির মধ্যেও পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা, যা ছিল অমানবিক। রাজধানীতে অন্যান্য খরচ বেশি। তাই বলে এত বেশি নয় যে তিন গুণ বেশি নিতে হবে। দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণেই বাড়ছে ঢাকার পানির উৎপাদন খরচ। এখন আবার ২০ শতাংশ হারে ঢাকার পানির দাম বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষের জন্য সেটা হবে 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'।