কান খাড়া করে রাখি কখন সাইরেন বাজে
রাশিয়ার হামলার আতঙ্কে পুরো ইউক্রেন এখন থমথমে। কি শহর, কি গ্রাম- সর্বত্রই উৎকণ্ঠা, দমবন্ধ পরিস্থিতি। চরম উদ্বেগে কাটছে প্রতিটি মুহূর্ত। বেশিরভাগ মানুষ ঘরে থাকছে। ভয়ার্ত পরিবেশে কাটছে আমাদের দিন।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আছি ৩৮ বছর। টাঙ্গাইলের বাসাইল থেকে রাশিয়ায় পড়াশোনা শেষে এখন ইউক্রেনে বসবাস করছি। স্ত্রী ও দুই সন্তান আমার সঙ্গেই থাকে। ওরা পড়াশোনা করছে। মেয়েটি ছোট। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো, আমার মেয়ের মতো ছোট শিশুরাও আতঙ্কে ভুগছে। নানাভাবে ওরা খবর পাচ্ছে, যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। রুশ নেতারা এই শিশুদের মানসিক অবস্থা কি জানেন?
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া অঞ্চল কেড়ে নেওয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের মনোভাব ব্যাপক বদলে গেছে। আগে থেকেই রুশ শাসনের প্রতি বেশিরভাগ ইউক্রেনীয়র অনাস্থা ছিল। তবে বিভিন্ন কৌশলে রুশপন্থি সরকার ক্ষমতায় বসিয়ে সেই ভাবাবেগ দমন করেছে মস্কো। এসব কথা ইউক্রেনীয়রা জানে ও বোঝে। ফলে ক্ষোভ ছিলই। তবে এবার যখন সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করল রাশিয়া, তখন থেকে ইউক্রেনীয়দের সেই ক্ষোভ আর চাপা নেই, বিস্ম্ফোরিত হয়েছে।
ডিসেম্বর মাস থেকে সীমান্তের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাওয়ায় ইউক্রেন সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতাদের সহযোগিতা নিচ্ছে। প্রচুর অস্ত্র ও বিপুল অর্থ আসছে বলে শুনেছি। এর প্রভাব পড়েছে নাগরিকদের ওপর। পুরো ইউক্রেনবাসী এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাট্টা। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট দল করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ, তার মধ্যে ৭০-৮০ বছর বয়সী নারী-পুরুষও আছেন। বহু কিশোর-তরুণ অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
সামরিক চিত্রের উল্টো আছে ভয়ের পরিবেশ। কয়েক সপ্তাহ হলো রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় ব্যস্ততা নেই। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হন না। আমরা কান খাড়া করে থাকি- এই বুঝি যুদ্ধের সাইরেন বেজে উঠল!
- ট্যাগ:
- প্রবাস
- ইউক্রেন সংকট
- যুদ্ধের আশঙ্কা