একাকীত্ব শুধু সামাজিক নয় জনস্বাস্থ্য সমস্যাও
একাকীত্ব বোধের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অবসাদের। অবসাদ অনেক সময় মৃত্যু ডেকে আনে। এই একাকীত্ব, আত্মহত্যা বা হত্যার কারণ সর্বোত মানসিক এমনটাও নয়। একাকীত্ববোধ প্রত্যেকের নিয়তি। পিতৃ-মাতৃহীন ছেলেমেয়ে, বিপত্নীক পুরুষ, বৃদ্ধাশ্রমে প্রেরিত বাবা-মা, ঋণজর্জর ব্যর্থ ব্যক্তি – সবারই অবসাদ আসতে পারে। একাকীত্ব এক অদৃশ্য শক্তিমান দৈত্য। কখন, কার ঘাড়ে চেপে বসে, তাকে দিয়ে কী করিয়ে নেয় সেটা বড় অনিশ্চিত।
আবু মহসিন খান তেমনই একজন। আত্মহত্যার আগে ব্যক্তিজীবনের নানা হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি যা স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের নজরে আসেনি কখনও। তার সমস্যাগুলো বোঝা গেল মারা যাওযার পর। তিনি নিঃসঙ্গতায় ভুগছিলেন। ঘরবন্দি ছিলেন। তাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই এবং নিজেও হয়তো যেতেন না। ফোনে কথা বলার কেউ ছিল না তেমন। অনেকদিন প্রিয়জনের মুখ দেখেননি। আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। অবসাদে আর মনোবৈকল্যে আকুল এই মানুষটার মানসিক স্বাস্থ্য চুরমার হয়ে গিয়েছিল কখন তা কেউ জানতে পারেনি।
তিনি ছিলেন একা ও নিঃসঙ্গ। এই নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব তিনি স্বেচ্ছায় বরণ করেন নি। হয়তো এই একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা নানা কারণে অনিবার্য হয়ে উঠেছিল তার জন্য। তিনি বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। অনেক ব্যস্ততা ছিল। আয় করেছেন অনেক, স্বজন আর বন্ধুদের দিয়েছেন অনেক। অতি ব্যস্ততা মানুষের এই ব্যক্তিগত সময়কে কখন হরণ করে নেয় সে টেরও পায় না। নিজের মুখোমুখি বসবার, চিন্তা করবার সময় ছিল না হয়তো। এবং একটা সময় সহজ জীবন হতে অনেক দূরে নিতান্ত একা হয়ে গিয়েছিলেন যা তিনি বুঝতে পারেন নি। এই বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির পরিপন্থী। কিন্তু সেটাই ঘটে আমাদের জীবনে। মহসিন খান বিচ্ছিন্নতার নির্মম দূরত্বের জন্য আক্ষেপ করে নিজেই নিজেকে খুন করেছেন।