কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হিমেলের মৃত্যু এবং প্রশাসনের দায়

সমকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মো. মাসুদ পারভেজ রানা প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৯

হৃদয়ে অসম্ভব রক্তক্ষরণ নিয়েই লিখতে হচ্ছে কথাগুলো। গভীরভাবে দগ্ধ আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। গতকাল ঝরে গেল হিমেল নামের একটি প্রাণ। খালি হলো এক মায়ের কোল, বাবা হারাল তার স্বপ্নের ভবিষ্যৎ, ছোট্ট বোনটি হারাল তার ভাইকে! আর কদিন পরই আসবে ফাল্কগ্দুনের মধুমাখা ভালোবাসার দিন। অপরূপ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছেয়ে যাবে বাহারি রঙের ফুলে ফুলে। ফুটে থাকা ফুলগুলো হয়তো হিমেল হিমেল করে ডাকবে। মাতৃভাষা দিবসে যাদের আমরা স্মরণ করি সেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ভাইয়েরাও হয়তো তাকে খুঁজে বেড়াবে। না, হিমেল আর আসবে না। মঙ্গলবার রাতে একটি ট্রাক তার শরীরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে তাজা প্রাণটাকে নিয়ে গেছে। 


হিমেল চারুকলার চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তার চলে যাওয়ার সংবাদে ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ। সারা ক্যাম্পাস আন্দোলনে মুখরিত। স্লোগানে স্লোগানে ধ্বনিত হচ্ছে 'আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই'। প্রশাসন কী জবাব দেবে? গত কয়েক মাস ধরে নির্মাণকাজ শুরুর ফলে সারা ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে, প্রশাসন কি তা জানত না? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীরা কী জানতেন না, অধিক ভার বহনকারী ট্রাকগুলো ক্যাম্পাসের রাস্তায় চললে তার পরিণাম কী হবে? নির্মাণসামগ্রী চলাচলের জন্য বিশেষভাবে রাস্তা নির্মাণ না করেই ট্রাকগুলো ঢুকতে দেওয়া হলো কেন? রাত কটা থেকে কটা পর্যন্ত বড় ট্রাকগুলো ঢুকবে তার কি কোনো নিয়মনীতি ছিল- এই প্রশ্নগুলো শুধু একটি প্রাণ চলে যাওয়ার পরই সামনে এলো তা কিন্তু নয়। এর আগেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মরণ করে দিয়েছিল। বিনিময়ে আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। জনসাধারণের চলাচলের জন্য ভিন্ন রাস্তার পরিকল্পনা যদি থাকত তাহলে আজ হিমেলকে হারাতে হতো না।


উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। হিমেলের প্রাণনাশের ঘটনা অবশ্যই একটি হত্যাকাণ্ড। এটাকে বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা বললে হিমেলের আত্মাকে কষ্ট দেওয়া হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মতো হিমেলও চেয়েছিল আবাসিক হলগুলো থেকে সব ভবনে যেন নির্বিঘ্নে চলাচল করা যায়। কারণ প্রতিনিয়তই তাকে চলাচলের অনুপযোগী রাস্তা দিয়ে শামসুজ্জোহা হল থেকে চারুকলা ভবনে যাতায়াত করতে হতো। সাম্প্রতিক সময়ে যারা শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে দিয়ে অথবা জগদীশ চন্দ্র বোস ভবনের পেছন দিয়ে কৃষি অনুষদ এবং চারুকলা অনুষদের দিকে গেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন, রাস্তার কী অবস্থা।


নতুন নির্মাণ প্রকল্প আসছে, উন্নয়ন হবে ইত্যাদি বলেই দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাগুলো ভালো করা হয়নি। যাও একটু চলাচল উপযোগী ছিল, তাও নতুন আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজ শুরুর সময় এক রাতেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন- প্রশাসন কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াবে। রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সেগুলোকে চলাচলের উপযোগী করার জন্য কি কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? মেয়েদের হলগুলো থেকে যে হাজার হাজার শিক্ষার্থী কৃষি ও চারুকলা অনুষদে ভাঙা রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে, প্রশাসন কি সে খবর রাখে? সন্ধ্যা হতে না হতেই আলোর স্বল্পতার জন্য এই রাস্তাগুলোতে ছিনতাই শুরু হয়ে যায়! এর জন্য প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে?


বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতে ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে না- এ অভিযোগ তো নতুন নয়। তাহলে আর কত আশ্বাস শিক্ষার্থীদের শোনানো হবে? কতজন হিমেল ঝরে গেলে আমাদের চৈতন্যোদয় হবে? আমরা কি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে দুঃখ প্রকাশ করতেই থাকব?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও