ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের পথে বড় দুর্বলতা
মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ইন্টেলিজেন্স, টেস্টিং অ্যাপ্লিকেশনস ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ওকলার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ‘স্পিড টেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’ প্রতিবেদনে মোবাইল ইন্টারনেটের গতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা সত্যিই হতাশাজনক। ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। সরকার বিগত বছরগুলোয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে যে অর্জনের দাবি করেছে, তার সঙ্গে এ প্রতিবেদনের তথ্যের মিল নেই। এ সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট, ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং, ই-এডুকেশন, ই-বুক, ই-ভোটিং, ই-হেলথ সার্ভিস, ই-ফাইলিং, ই-পেপার ইত্যাদি ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হলেও অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা বহুগুণে বেড়েছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা দূর করে প্রকৃত অর্থেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইন্টারনেট এখন কোনো বিলাসিতা নয়, বিশ্বের উন্মুক্ত জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশপথের চাবিকাঠি। এর গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও অপরিসীম। আর ইন্টারনেটের গতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর সব কর্মকাণ্ড। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি, শিল্প, ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক বেশি ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর। অনলাইনে পাঠদান, এমনকি টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণেও অনলাইন নির্ভরতা বেড়েছে। বিশ্ব যেখানে অপারেশন পরিচালনা করছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেখানে বাংলাদেশ চিকিৎসা পরামর্শও ঠিকভাবে দিতে পারছে না। প্রশ্ন হলো, এত কম গতির ইন্টারনেট নিয়ে বাংলাদেশ এগোবে কীভাবে? দ্রুতগতির ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রকৃত মানবসম্পদ তৈরিতে উচ্চগতির ইন্টারনেট এখন একটি মৌলিক অনুষঙ্গ। ইন্টারনেটের গতি দ্রুত করার পাশাপাশি দেশের সব মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে হবে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম তুলনামূলক কম। কিন্তু সেবার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল ইন্টারনেট সেবা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেলে না। এজন্য মোবাইল অপারেটরদের পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনেরও (বিটিআরসি) দায়িত্ব রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও এখনো মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দিতে পারেনি সংস্থাটি। ওকলার প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে সেটা যে নতুন, তা কিন্তু নয়। ভোক্তা পর্যায়ে গ্রাহকরা সবসময় তা অনুভব করছেন। আর এ সত্যিটা টেলিকমিউনিকেশনের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষেরও অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু এ অবস্থা সরকার ঘোষিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নীতির সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।