পশ্চিমাদের যুদ্ধের দামামা বাজানোর উদ্দেশ্য কী?
পশ্চিমা শক্তি আবার যুদ্ধের দামামা বাজাতে শুরু করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর কয়েকটি রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তাদের মধ্যে ছিল ইউক্রেন। ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বাধীন হওয়া ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে ২০১৪ সালে। পশ্চিমা শক্তিগুলোর ইচ্ছা ছিল, ইউক্রেন ও ক্রিমিয়াকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করে সেখানে রাশিয়াকে জব্দ করার জন্য সামরিক কমান্ড স্থাপন করবে। ক্রিমিয়া রাশিয়াতে ফিরে যাওয়ার সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। এখন তারা চাইছে ইউক্রেনকে ভিত্তি করে রাশিয়াবিরোধী সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এটা মেনে নেননি। তিনি দাবি জানান, রাশিয়াসংলগ্ন ইউক্রেনে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা চলবে না এবং সেখানে পশ্চিমা সামরিক তৎপরতা বন্ধ রাখতে হবে। পশ্চিমা শক্তিগুলো এই দাবি মেনে নেয়নি। তারা ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে থাকে। রাশিয়া নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে তার ফৌজ মোতায়েন করেছে। ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গভাবে সামরিক তৎপরতা চালাতে না পেরে তারা এখন ক্ষুব্ধ এবং ন্যাটো রাশিয়াকে প্রতিরোধ করার নামে বিপুল সামরিক প্রস্তুতি শুরু করেছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ ইউক্রেনে সামরিক সরঞ্জাম পাঠাতে শুরু করেছে। সর্বশেষ যুদ্ধ প্রস্তুতি হলো, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন থেকে তাদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে। সর্বত্র একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। মস্কো এটাকে আখ্যা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তির হিস্টেরিয়া। রাশিয়া সীমান্তে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে। এটা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের কোনো প্রস্তুতি নয়। রাশিয়ার এই সামরিক প্রতিরোধের মুখে পশ্চিমা শক্তি একটা অজুহাত খাড়া করে পূর্ণাঙ্গভাবে ইউক্রেনে ঢুকতে চায়। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে একটা যুদ্ধ বাধাতে চায়, যাতে ইউক্রেনকে সাহায্যের নামে তারা সেখানে সৈন্য পাঠিয়ে সরাসরি ঘাঁটি স্থাপন করতে পারে। এটা সহজেই বোঝা যায়, রাশিয়া পশ্চিমা শক্তির এই যুদ্ধের ফাঁদে পা দেবে না। কিন্তু তারা তাদের সীমান্তে ন্যাটোকে মোকাবিলা করার সামরিক প্রস্তুতি অব্যাহত রাখবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার আগে ইউক্রেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া এখন এ অঞ্চল তাদের বলে দাবি করতে পারে। কিন্তু পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা এটা চায় না। তারা চায় না, রাশিয়া আবার একটি বৃহৎ শক্তি হয়ে উঠুক। তাই রাশিয়া শক্তিশালী হয়ে ওঠার আগেই তার ওপর হামলা চালাতে চায়। তারই প্রস্তুতি এখন দেখা যাচ্ছে কিয়েভ থেকে কূটনীতিক প্রত্যাহার এবং সেখানে পশ্চিমা শক্তির সামরিক সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রে। এখানে ইরাক যুদ্ধের একটা পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।