বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর তুলনামূলক পর্যালোচনা
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে এক নদী রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ ছিল একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ও চরম দারিদ্র্যকবলিত দেশ, যেখানে জনসংখ্যার ৮২ শতাংশই ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠী। সুতরাং ওই পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত হলেও বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে জীবনযাত্রার মানে অনেকখানি এগিয়ে ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীর আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মানের তুলনা করলেও যে বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে সেগুলো হলো, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষ বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনামলে যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ায় এবং অপারেশন বর্গার মতো কৃষি সংস্কারের সুফল পাওয়ায় বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের চেয়ে জীবনযাত্রার মানে আরো এগিয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে যে ১ কোটি ৩০ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশ যেহেতু গ্রামের মানুষ, তাই তাদের পাঠানো ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সের অর্থপ্রবাহ এ দেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনে সচ্ছলতার একটা বড়সড় উপাদান নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এই একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে এতখানি পেছনে ফেলে দিয়েছে যে এখন বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অর্থনীতির চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল ও সচ্ছল হয়ে উঠেছে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে গড় মাথাপিছু জিএনআইয়ের দিক থেকেও বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণ পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জনগণকে পেছনে ফেলে দিয়েছে (জিএনআই হলো জিডিপি ও নিট রেমিট্যান্সের যোগফল)। পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু জিএনআই ভারতের গড় মাথাপিছু জিএনআইয়ের সমান হলেও ওখানকার গ্রামীণ মাথাপিছু জিএনআই অনেক কম। কলকাতা, দুর্গাপুর, খড়গপুর, হলদিয়া, বর্ধমান ও শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মূল সমৃদ্ধি কেন্দ্র রয়ে গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- যুদ্ধবিধ্বস্ত
- ঔপনিবেশিক