বিতর্কের মুখেই ইসি গঠন বিল পাস হচ্ছে আজ
সংসদের ভেতরে-বাইরে অব্যাহত বিতর্কের মধ্যেই বহুল আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন বিল আজ বৃহস্পতিবার সংসদে পাস হতে যাচ্ছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে বিলটির দুটি ধারায় আংশিক পরিবর্তনের সুপারিশ করে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার সংসদের বৈঠকে সুপারিশসহ বিলটির ওপর সংশোধিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার। এর আগে ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত খসড়া আইনটি নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর গত রোববার সংসদের বৈঠকে তা বিল আকারে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। উত্থাপনের পর আপত্তি জানান বিরোধী দল বিএনপির সদস্য হারুনুর রশীদ।
গতকাল রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়েও এই বিলের সমালোচনা করেন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দুই সদস্য ফখরুল ইমাম ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। সমালোচনা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া সংসদের বাইরেও এই বিলের বিভিন্ন ত্রুটি ও অপূর্ণতা নিয়ে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন মহল জোরালো বক্তব্য দিয়ে আসছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ইসি গঠন করবেন- এমন নির্দেশনা থাকার পরও দীর্ঘ ৫০ বছরে কোনো সরকারই এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি। দেশে ইসি গঠনে প্রথমবারের মতো একটি নতুন আইন হতে যাচ্ছে।
এর আগে রোববার ৭ দিনের সময় দিয়ে বিলটি সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল। কমিটি দুই ঘণ্টার এক বৈঠকে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। আজ বৃহস্পতিবার বিলটি পাসের জন্য সংসদের বৈঠকে উত্থাপন করতে যাচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল সংসদ সচিবালয়ের ওয়েবসাইটে আজ বৃহস্পতিবারের কার্যসূচি থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন আইনের খসড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের যোগ্যতা-অযোগ্যতার অংশে দুটি পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদে উত্থাপিত বিলে সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রন্ত ৫(গ) ধারায় বলা আছে, সিইসি ও কমিশনার হতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অনূ্যন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি 'স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়' শব্দ দুটি যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
অর্থাৎ সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে সার্চ কমিটি এমন কাউকে সুপারিশ করবে, যার কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অনূ্যন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে। আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬ (ঘ) ধারায় বলা আছে, নৈতিক স্খলজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অনূ্যন দুই বছরের কারাদে দি ত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না।
এই ধারায় 'দুই বছরের কারাদ ' শব্দের পরিবর্তে শুধু কারাদে র সুপারিশ করেছে কমিটি। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে যে কোনো মেয়াদের সাজা হলেই তিনি সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এদিকে গতকাল সংসদের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার দেরিতে হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন এনেছে। কিন্তু আইনটি অসম্পূর্ণ এবং এটা সংশোধন করতে হবে। না হলে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে।
- ট্যাগ:
- রাজনীতি
- বিল পাস
- নির্বাচন কমিশন গঠন