এরদোয়ান কি এবার ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ হতে চাইছেন
ইসরায়েল মুসলমানদের কাছে মসজিদুল আকসা দখলকারী। ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমিও ইতিহাস থেকে প্রায় মুছে দিয়েছে তারা। সেই ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টকে তুরস্কে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। কিছুদিন আগেও তুরস্ক বলত, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তেল আবিবের আচরণের ওপর। সেই আচরণে বড় কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি কারও, কিন্তু মুসলিম বিশ্বের অন্যতম নেতা এরদোয়ানের ইসরায়েল নীতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে।
অনেকে এতে বিস্মিত। কেউ কেউ বলছেন, এটা অস্বাভাবিক নয়। মুসলিম-প্রধান দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কই প্রথম ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। ২০০৫ সালে খোদ এরদোয়ানও ইসরায়েল সফর করেছিলেন। সেই সফরে নির্বিঘ্নেই হাত মিলিয়েছিলেন সাবরা-শাতিলা গণহত্যার খলনায়ক কুখ্যাত এরিয়েল শ্যারনের সঙ্গে। ফলে এখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট বা প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগকে স্বাগত জানাতে কুণ্ঠিত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই।
কিছুদিন আগেও ইসরায়েলকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী’ মনে করতেন এরদোয়ান
ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে গত ১৩ বছর প্রকাশ্যে কূটনীতিক যোগাযোগ নেই। এই জানুয়ারিতে সেই দূরত্বের অবসান হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তা হয়েছে। এটা এখন দুনিয়াজুড়ে বড় খবর। অতি উৎসাহীরা একে উভয় দেশের সম্পর্কের ‘রেনেসাঁ’ বলেছে। বিশ্ব গণমাধ্যমের এই মৃদু হইচইয়ের কারণ—এরদোয়ান ক্ষমতায় এসে প্রায় জিহাদে নেমেছিলেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। অথচ অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেশ দুটির মধ্যে ‘কাছে থাকার’ বিবরণই কেবল পাওয়া যায়। তেল আবিবে যেমন বরাবর তুরস্কের দূতাবাস ছিল, তেমনি সে দেশের অন্তত দুই জায়গায় ইসরায়েলেরও কূটনীতিক দপ্তর আছে। ২০০৭ সালে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস তুরস্কের জাতীয় পরিষদে ভাষণ দেওয়ার বিরল সুযোগ ও সম্মান পেয়েছিলেন।
তবে ২০০৯ সালে গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা এবং পরের বছর তাদের নৌ-কমান্ডোদের হাতে গাজামুখী তুরস্কের শান্তিবাদীদের এক জাহাজে ১০ জনকে খুন দেশটির সঙ্গে বন্ধুত্ব চালিয়ে যেতে এরদোয়ানের জন্য অস্বস্তির কারণ ঘটায়। গাজার অবরোধ ভাঙতে চাওয়া তুরস্কের শান্তিবাদীদের ওই খুনকে এরদোয়ান একাধিকবার ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এও বলেছিলেন, ইসরায়েলের এই সন্ত্রাস দুই দেশের সম্পর্কে সংশোধন-অযোগ্য ক্ষতি করেছে। ২০১৩ সালের মার্চে জাতিসংঘে দাঁড়িয়ে এরদোয়ান এও বলেন, ইহুদিবাদের অপর নাম ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’। গত বছর মে মাসে আল-আকসায় ইসরায়েলি সৈনিকদের অবরোধকালেও এরদোয়ান দেশটিকে আরেকবার ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবে উল্লেখ করেন।