আগামী নির্বাচনের আগের গল্পটা কী
আরব্য রজনীর শেহেরজাদের চেয়ে বেশি কিচ্ছা আর কে জানত? তাকে বলা হয় সব গল্পের জননী। রাত ভোর হয়ে যেত, কিন্তু তার গল্প ফুরাত না। পরের রাতে পুরোনো গল্পের লেজ থেকে বেরোত টান টান নতুন আরেক গল্প। এত তুখোড় কেচ্ছাকার হয়েও শেহেরজাদের গল্প-কাহিনির রাত এক হাজার একটির বেশি ছিল না। অথচ আমাদের ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিনিধিরা কত হাজার রাত ধরে যে গল্প বলে চলেছেন, সেই ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে, তাঁদের গল্প বলা কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। আরব্য রজনীর শিক্ষাটা তাঁরা ভালোভাবেই নিয়েছেন। তাঁদের এই মহিমার কথা আমাদের স্বীকার করা উচিত। বিশেষ করে সরকারি দলের কয়েকজন নেতার প্রশংসা করতে হয়, যাঁরা প্রতিদিন গল্প বলেন এবং ভোরের সূর্যের মতো তা একই সঙ্গে পুরোনো ও নতুন।
গল্প চলল তো ক্ষমতাও চলবে। ইংরেজরা প্রায় ২০০ বছর ধরে সভ্যতা ও আইনের গল্প শুনিয়ে পরাধীন রেখেছিল আমাদের। অথচ পাকিস্তানিদের মুসলিম মিল্লাতের গল্প ২৪ বছরও টেকেনি। জর্জ বুশ বিশ্বকে টুইন টাওয়ারের গল্প শুনিয়ে শুধু ইরাক-আফগানিস্তানই দখল করেননি, সেই গল্পের আকর্ষণে গণহত্যা মেনে নিতে বাধ্য করেছিলেন বিশ্বকে। মোক্ষম গল্পের রেশমি সুতায় মানুষকে বেঁধে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে।
শিশুরাই গল্প শুনতে বেশি ভালোবাসে, এটা সত্য নয়। গল্প আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ভালোবাসে। আবার অনেক সময় শুনতে না চাইলেও শুনতে হয়। যে দেশের মানুষের বলার অধিকার সীমাবদ্ধ, সে দেশে শোনার অধিকার অবারিত।
আমাদের দেশের অবস্থাও অনেকটা তেমনই। সরকার নতুন নতুন গল্প বলে চলেছে। কিন্তু কোনোটাই শেষ করছে না। তাদের ভান্ডারে গল্পের যত বড় মজুত আছে, তত গল্প ঠাকুরমার ঝুলিতেও নেই। মুশকিল হলো এই, এসব গল্পের বেশির ভাগই অতীতকেন্দ্রিক। দ্বিতীয়ত, যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কিংবা ২১ আগস্টের ভয়াবহ নাশকতার বিরুদ্ধে, তাঁরা ভাবছেন অপরাধীদের বদলে জনগণ কেন শাস্তি পাবে? আর ইতিহাস দিয়ে তো বর্তমানের জীবনযুদ্ধ সামলানো যায় না। রাজনৈতিক বাস্তবতা মোকাবিলা মানে যদি ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হওয়া হয়, তাহলে অতীতের গল্প বেশি কাজ করার কথা নয়।