সিসি ক্যামেরাই যথেষ্ট নয়, জরুরি তিজা ব্যুনিয়িনিও
ঘানায় অপরাধ দমন বিষয়ে একটি দর্শন ও নীতিমালা আছে। ঘানার ভাষায় এটি ‘তিজা ব্যুনিয়িনি’ বা ‘আমরা সবাই মিলেই এক আত্মা’ দর্শনটির মূল কথা, ‘আমার এলাকায় অপরাধকর্ম ঘটেছে মানে আমিও অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত।’ অন্য কথায়, ‘আমার এলাকায় অপরাধ ঠেকানোর দায়িত্বটুকুও আমার তোমার সবার।’ ঘানার সর্ব পশ্চিমের জনবহুল এলাকাগুলোতে জনতার চোখই রাডারের মতো। অপরাধী শনাক্ত করার জন্য তাই তাদের সিসি ক্যামেরার ওপর নির্ভর করতে হয় না। আদিকালে যখন সিসি ক্যামেরা ছিল না, তখন যেমন, এখনো তেমন। জনতাই অপরাধ দমনের বড় সূত্র।
থানা-পুলিশের ওপর তাদের নির্ভরতা কম। লাতিন আমেরিকার একসময়ের সমাজতান্ত্রিক দেশ কোস্টারিকা এখনো পৃথিবীর প্রথম সারির অপরাধমুক্ত দেশ। ফলে শান্তির দেশও বটে। দেশটির পরিচিতি ‘লাতিন আমেরিকার সুইজারল্যান্ড’ নামে; কিন্তু দেশটিতে কোনো জাতীয় সশস্ত্র সেনাবাহিনী নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য যথেষ্ট মনে করা হয়। কারণ, অপরাধ দমনের কাজে জনগণ বড় ভূমিকা পালন করে। নীতিমালা ঘানার ‘তিজা ব্যুনিয়িনি’র মতোই। জনগণই অপরাধী শনাক্ত করা ও দমনের কাজে সক্রিয় থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ দমনের অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত। বলা বাহুল্য, পেছনের কারণ, দেশটির সুশাসন। ফলে জনগণ নির্ভয়। চলে বুক চিতিয়ে।
বিশ্বে আরও ৩০টি দেশ আছে কোস্টারিকা আদলের। এর মধ্যে কয়েকটি কোস্টারিকা দ্বারাই অনুপ্রাণিত। এসব দেশের কোনো সশস্ত্র জাতীয় সেনাবাহিনীই নেই। যেমন গ্রিনল্যান্ড, ডমিনিকা, গ্রানাডা, আইসল্যান্ড, কিরিবাতি, মরিশাস, মোনাকো, নাউরু, পানামা, সান ম্যারিনো, টুভ্যালু, সলোমন আইল্যান্ড, ইত্যাদি। দেশগুলো বিশেষ প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকে সেনাবাহিনী ভাড়া করে। বিস্ময়ের বিষয়, এই ৩০ দেশও কোস্টারিকার মতোই পৃথিবীর সবচেয়ে কম অপরাধপ্রবণ দেশের তালিকার শীর্ষে থাকে সব সময়। ‘তিজা ব্যুনিয়িনি’ দর্শন এসব দেশেও কার্যকর। তাদের কাছ থেকে সামাজিক ব্যবস্থাপনায় অপরাধ দমনের পাঠ নিয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকার ধনী দেশগুলো।