গৃহকর্মীর মর্যাদা
পারিবারিক জীবনে আমরা কম-বেশি সবাই গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। দিন দিন বাড়ছে এই নির্ভরতা। আমাদের ছোট ছোট পরিবারের কর্তা এবং কর্ত্রী দু’জনই চাকরিজীবী। তাই তাদের বাসার বাইরে থাকতে হয়। ঘরের এবং শিশুদের দেখাশোনার পুরো কাজটি গৃহকর্মীদেরই করতে হয়। বর্তমান সমাজবাস্তবতায় গৃহকর্মীরা পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের সহযোগিতায় আমাদের পরিবার সচল এবং ছন্দবদ্ধভাবে চলতে থাকে। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই কম। বাসাবাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রেও একচোখা নীতি দেখা যায়। বাসাবাড়িতে অনেকে কুকুর-বিড়াল পোষেণ। কুকুর ও বিড়ালের যেভাবে যত্ন নেন, ভালো-মন্দের খোঁজখবর রাখেন, তার ছিটেফোঁটাও গৃহকর্মীর বেলায় দেখা যায় না। আমরা গৃহকর্মীর ভালো-মন্দের ব্যাপারে উদাসীন। অথচ গৃহকর্মী পরিবারেরই অংশ। বাসার যে জায়গাটা সবচেয়ে বেশি বিদঘুটে অন্ধকার, আলো বাতাসের সুবিধা নেই, এমন জায়গায় তাদের থাকতে দেয়া হয়। সেখানে একজন মানুষ কষ্ট করে হয়তো থাকতে পারে, কিন্তু হাত-পা ছড়িয়ে একটু আরাম করে ঘুমানোর সুযোগ নেই। আমরা যে সময় গভীর ঘুমে বিভোর থাকি ঠিক সে সময় ভোরবেলা তাদের উঠে আমাদের অফিসের জন্য খাবার তৈরি করতে হয়। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে হয়। অথচ আমরা তাদের সাথে একটু সুন্দর ব্যবহার করতে পারি না। বরঞ্চ সামান্য একটু এদিক-সেদিক হলেই অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। ভালো ব্যবহার, ভালো খাবার, একটু ভালো কাপড়চোপড়, অসুস্থতার জন্য চিকিৎসাটুকু তারা পান না। শুধু কি তাই! এক দিন, এক মাস কিংবা ৩৬৫ দিনেও তাদের ভাগ্যে ছুটি জোটে না। এরপরও তাদের নির্যাতনের অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।