বঙ্গবন্ধু হত্যার অসমাপ্ত বিচার
অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বিচারিক আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ছয়জনের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। কয়েকজন দণ্ড মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। পালিয়ে থাকা পাঁচজনের দণ্ড কার্যকর করতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই পাঁচজনের দণ্ড হয়তো সামনের দিনগুলোতে কার্যকর হবে। প্রশ্ন হলো, এর মাধ্যমেই কী বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সমাপ্ত হবে? আমার মূল্যায়নে অবশ্যই না। কিছু অপরাধের বিচারে আদালতের দণ্ডই যথেষ্ট হয় না। ইতিহাসের কাঠগড়ায় এর বিচার হতে হয়। মীরজাফরের বিচার কোনো আদালতে হয়নি। তবু মীরজাফর ইতিহাসে এক ঘৃণিত ব্যক্তি। মুর্শিদাবাদে মীরজাফরের ধ্বংসপ্রায় প্রাসাদে ঢোকার প্রধান ফটকটি ইতিহাসে, সরকারি দলিলে এবং ট্যুরিস্ট গাইড বইয়ে ‘নেমক হারাম দেউর’ বা ‘বিশ্বাসঘাতকের গেট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। কোনো বেঈমান বা বিশ্বাসঘাতককে গালি দিতে ব্যবহৃত হয় ‘মীরজাফর’ শব্দটি। বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিশব্দ মীরজাফর একটি জঘন্য গালি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আদালতের রায়ে সম্পূর্ণ হতে পারে না। আদালত বড়জোর ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করতে পারেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ত্যাগ, সাহসিকতা, অতল ভালোবাসা, দূরদর্শী নেতৃত্ব, অটল আদর্শ ও একবারের জন্য পাওয়া জীবনের সব ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ-স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি মুজিবকে অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। বিশ্বের নিপীড়িত, মুক্তিকামী মানুষের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু হয়েছেন। তিনি একটি জাতির জনক ও রাষ্ট্রের স্থপতি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কি কয়েকজন আত্মস্বীকৃত খুনিকে শাস্তি দিলেই সম্পন্ন হয়ে যায়? খুনিরা মধ্যম সারির সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। কয়েকজন সামরিক বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত ছিলেন।