এত মুভমেন্ট পাস কারা নিলো?
গাড়িতে গ্যাস নিতে বের হয়েছিলেন জাকির হোসেন। রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টে পড়েন জেরার মুখে। বলেন, গাড়িতে গ্যাস ভরে রাখতে বের হয়েছেন। তার কাছে ছিল না মুভমেন্ট পাস। তারপরও বিভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছিলেন। শেষে কিছুতেই ছাড় পেলেন না। তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।
যাঁদের ‘মুভমেন্ট পাস’ লাগবে না
করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতিতে সারা দেশে চলছে লকডাউন। কাজে ও চলাচলে আরোপ করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। তবে ব্যাংক, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালে কাজ চলছে। জরুরি সেবা খাতগুলোও খোলা রয়েছে। কারা বের হতে পারবেন, কারা পারবেন না, এ নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝির ঘটনাও ঘটছে। পুলিশ এমন অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যাঁরা জরুরি সেবার আওতায় পড়েছেন।
মুভমেন্ট পাস পেতে ৪৬ ঘণ্টায় ১৬ কোটি হিট
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন দিয়েছে সরকার। যা বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে। লকডাউন চলাকালে নাগরিকরা যাতে জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারেন সেজন্য পুলিশ চালু করেছে বিশেষ সেবা ‘মুভমেন্ট পাস’।
পুলিশের এই ‘মুভমেন্ট পাস’ পেতে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ২২ হাজার ৬৫ বার হিট বা নক করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে হিট হয়েছে ১৪ হাজার ১৪ হাজার ২৬টি।
মুভমেন্ট পাস: জরিমানা পরিশোধ করতে হবে না সেই চিকিৎসককে
দেশে শুরু হওয়া ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রথম দিন কর্মস্থলে যাওয়ার পথে স্কয়ার হাসপাতালের যে চিকিৎসককে জরিমানা করা হয়েছিল, তাকে সেই অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিয়ে কথা ওঠার পর এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে ওই চিকিৎসককে যে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল, তা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। “তাকে ট্রাফিক অফিসে এসে বিষয়টি সমাধান করতে হবে।”
সরকারের প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার কথা বলা হলেও বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের চিকিৎসক নাজমুল হককে হাই কোর্টের সামনে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে আটকানো হয়।
মুভমেন্ট পাস নিয়ে আজও কঠোর পুলিশ
সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন আজ। গতকাল পহেলা বৈশাখের ছুটির পর ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই আজ খোলা। ফলে সকাল থেকেই রাস্তায় দেখা গেছে অফিসগামী যাত্রীদের। তবে যথারীতি রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ও চেকপোস্টে পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জরুরি সার্ভিসে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য যারা রাস্তায় বের হয়েছেন তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কিনা সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত করছেন। মুভমেন্ট পাস না থাকলে অফিসের পরিচয়পত্র দেখেও অনেককে যেতে দেওয়া হচ্ছে।
সকাল থেকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় গতকালের তুলনায় রাস্তায় অনেক লোকজন বের হয়েছেন। যাদের অফিস খোলা তাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন পুলিশ সদস্যরা। তবে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হয়েছেন কিনা সে বিষয়টি তারা জিজ্ঞেস করছেন।
আজও মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট, বেড়েছে গাড়ির চাপ
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে গাড়ির চাপ বেড়েছে। গতকাল প্রথম দিনে কড়াকড়ি থাকলেও দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্টে খুব একটা কড়াকড়ি দেখা যায়নি। তবে কোথাও কোথাও গাড়ি থামিয়ে 'মুভমেন্ট পাস' আছে কিনা চেক করছে পুলিশ।
২ লাখ ৫০ হাজার মুভমেন্ট পাস ইস্যু
লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে বাংলাদেশ পুলিশের মুভমেন্ট পাস ওয়েবসাইটে আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত হিট হয়েছে প্রায় আট কোটি বার। যা প্রতি মিনিটে ২১ হাজারেরও বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানানো হয়, মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে বুধবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৭ কোটি ৮১ লাখ হিট হয়েছে। প্রতি মিনিটে হিট হয়েছে ২১ হাজার ৩৩৭টি। এ পর্যন্ত অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৩ লাখ ১০ হাজার জন। যাদের মধ্যে দুই লাখ ৫০ হাজার মুভমেন্ট পাস ইস্যু করা হয়েছে।