নির্বাচনে বিজেপির রাজনৈতিক ইস্যু এনআরসি
ভারতের মতো একটা বিশাল দেশে এত অঙ্গরাজ্য যে সব সময়ই কোনো না কোনো রাজ্যে ভোট হতেই থাকে। বিধানসভা নির্বাচন হয়। তার পরই উপনির্বাচন এসে যায়। এখন পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামে শুধু নয়, কেরালা, পন্ডিচেরি, তামিলনাড়ুসহ মোট পাঁচটা রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। আবার এই নির্বাচন চলতে চলতে রাজস্থানে বেশ কয়েকটা আসনে উপনির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত। কিন্তু সেই দেশের আবার দুটি রাজ্য বাংলাদেশের একেবারেই সীমান্তবর্তী। পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের কথা বলছি। এই দুটি রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে সেই কারণে বাংলাদেশের মানুষের উৎসাহ বেশি। আর প্রাসঙ্গিকতা এবং তাৎপর্যও বেশি। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে এলো, না এআইডিএমকে এলো সেটা সম্পর্কে যে আগ্রহ ঢাকার মানুষের আছে, তার চেয়ে নিশ্চয় বেশি আগ্রহ আসামে বিজেপি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারছে কী পারছে না। সেখানে কংগ্রেসের তরুণ গগৈ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দল কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে কি না; আর অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেখানে বিজেপি আসবে কি না এই বিষয়গুলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে আগ্রহের। এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছে অর্থাৎ শাসকদলের কাছেও বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ।
এবারে খুব সহজ ভাষায় আমি কিছু সোজাসাপ্টা কথা বলি। একটা ধারণা সাধারণভাবে আছে যে যদি ত্রিপুরার মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি ক্ষমতায় এসে যায়। সে ক্ষেত্রে যেটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর তত্ত্ব বলছেন। তাহলে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ মানে কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের ইঞ্জিন যদি কাজ করে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে তিস্তার চুক্তির ব্যাপারে সম্মতি আদায় করাটা নরেন্দ্র মোদির কাছে এক সেকেন্ডের ব্যাপার হবে। সেখানে আর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোর যে বিবাদ, সেই বিবাদভঞ্জন হয়ে যেতে পারে। সেখানে ক্ষমতায় আসার পরে সঙ্গে সঙ্গে করে নিলে অন্তত ভোট পর্যন্ত আর দেরি না করে, সেটা কৌশলগতভাবে বিজেপির জন্যও ভালো। বাংলাদেশের জন্যও ভালো। যেমন ত্রিপুরায় বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর খুব সহজে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু বোঝাপড়ার জন্য, সেটা একটা যৌথভাবে সেতু নির্মাণের জন্য হোক বা অন্যদিকে রেল যোগাযোগ, বিদ্যুৎ প্রকল্প—এগুলো এখন অনেক সহজে ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাই নরেন্দ্র মোদি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন এই তত্ত্বকে। ত্রিপুরা, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক বেশি ইতিবাচক দিক পালন করছে। যেটা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে হচ্ছে না। তার কারণ পশ্চিমবঙ্গ এ ব্যাপারে সব সময় নেতিবাচক ভূমিকা নিয়েছে। যেটা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ত্বরান্বিত করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এটা ভারতের নির্বাচনের ভেতরেও বিজেপির দিক থেকে এটা পশ্চিমবঙ্গে প্রচারের বিষয়বস্তুও হয়েছে।