করোনামুক্ত মানেই ‘মুক্তি’ নয়
‘বিশ্বাস করতে পারবেন না। এটা এমন একটা রোগ দেখতে পাচ্ছেন না, কামড়ও দিচ্ছে না। কিন্তু মরণ কামড় দিয়ে যাচ্ছে। দু মাস হলো করোনামুক্ত হলেও মুক্তি মেলেনি’ —বলছিলেন সুমিত। ৪৪ বছর বয়সী সুমিত কখন-কিভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন জানেন না। কিন্তু প্রচণ্ড জ্বরের ঘোরে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। কানে আসছিল, ‘অক্সিজেন কমে যাচ্ছে’। বুকে ধরে আসছে, পাঁজর ভেঙে যাবে যেন। আর দুচোখে কেবল অন্ধকার। সুমিত বলেন, ‘যার একবার করোনা হয়েছে তাকে আর সতর্ক করতে হবে না। বেশিরভাগই মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করেছে’।
করোনার পর এক-তৃতীয়াংশ মস্তিষ্কের রোগে ভোগেন: গবেষণা
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর সেরে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মস্তিষ্কের নানা রোগে ভোগেন। গতকাল মঙ্গলবার ‘দ্য ল্যানসেট সাইকিয়াট্রি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, করোনায় সংক্রমিত তিনজনের মধ্যে একজনের দীর্ঘস্থায়ী মানসিক স্বাস্থ্য বা স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ রয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা ৩৪ শতাংশ ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে স্নায়বিক বা মানসিক সমস্যা ধরা পড়ছে।
করোনা থেকে সেরে ওঠার পর অনেকের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ টিকে থাকাকে ‘পোস্ট-কোভিড সিনড্রোম’ বলেন বিজ্ঞানীরা। এ রোগীরা সেরে উঠলেন, এরপর মাসের পর মাস কিছু উপসর্গের সঙ্গে লড়াই করতে হয় এ রোগীদের। এমনটি ঘটল খ্যাতনামা এক চিত্রগ্রাহকের জীবনে। একদিন সকালে উঠে দেখলেন, জ্বর আর বুকে প্রচণ্ড চাপ যেন হাতি বসেছে বুকের ওপর। দু’সপ্তাহ অসুস্থ, গৃহবাস। ব্যথার ওষুধ খেয়ে সারল। কিন্তু কাহিনী এখানে শেষ হল না। এ রকম কাহিনী আরও আছে। অনেকের হল ‘কোভিড টো’, কারও মাথায় কেশহানি, কারও স্বাদ ও ঘ্রাণ চেতনা নাছোড় হয়ে থাকল। কারও হল মিনি স্ট্রোক। কারও ডায়াবেটিস সূচিত হল।
করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠতে কত দিন লাগে?
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হবার পর হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। তার সেরে উঠতে সময় লেগেছে তিন সপ্তাহেরও বেশি, এবং সোমবারই তিনি কাজে ফিরে এসেছেন।
তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সবারই যে সেরে উঠতে একই সময় লাগবে – এমন কোন কথা নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ কেউ খুব দ্রুতই সেরে উঠতে পারেন, আবার অন্য কারো ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ দেহে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
করোনার দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা: যুক্তরাজ্য-ইতালিতে পুনর্বাসন কেন্দ্র
করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির দেহে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে ক্লান্তি, অবসাদ ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও যারা নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তাদের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হচ্ছে পুনর্বাসন কেন্দ্র। সিএনএন জানায়, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গুরুতর করোনা রোগী ছাড়াও যাদের শরীরে করোনার মৃদু উপসর্গ ছিল, যারা হালকা অসুস্থ হয়েছিলেন তারাও দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতার মুখে পড়ছেন।
সুস্থ হলেও কেন করোনার সমস্যা চলতে থাকে?
আমাদের অভিজ্ঞতায় জানি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ ব্যক্তিই কিছু দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। অনেকের হাসপাতালেও যেতে হয় না। কিন্তু আবার কেউ কেউ করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও নানা ধরনের জটিলতায় ভোগেন। যেমন দুর্বলতা, খাওয়ায় অরুচি, এমনকি শ্বাসকষ্টও হয়। সুস্থ হওয়ার পর মাসখানেক বা তারও বেশি সময় ধরে শারীরিক সমস্যা চলতে থাকে। এর কারণ কী? এটা কি স্বাভাবিক? করোনার এই দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এবং এর চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা চলছে। এ বিষয়ে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’–এ (১২ অক্টোবর ২০২০) একটি বিস্তৃত লেখা ছাপা হয়েছে।