বইমেলা চালু কেন, বইমেলাতেই প্রশ্ন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা লকডাউনের মধ্যে বইমেলা চালু রাখা হলেও ক্রেতা-দর্শনার্থী ছিল না বললেই চলে।
লকডাউনের প্রথম দিন সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেলে ৫টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা রাখা হয়। হাতেগোনা দুয়েকজন ক্রেতা-দর্শনার্থীকে মেলাপ্রাঙ্গণে ঘুরতে দেখা গেলেও অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়ন ছিল ক্রেতাশূণ্য।
বেশ কিছু স্টল এদিন বন্ধ রাখতেও দেখা যায়। অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নে বিক্রয় কর্মী ছিল সীমিত, স্টলের এক পাশে বই প্রদর্শন করা হলেও অন্যপাশ বন্ধ রাখা হয়।
সংক্রমণ কমাতে লকডাউন দিয়ে তার মধ্যেই আবার বইমেলা সীমিত সময় খোলা রাখার অনুমতি দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে খোদ প্রকাশকরাই প্রশ্ন তুললেন।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আজ থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ (লকডাউন) শুরু হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত অফিস-আদালত ও বেসরকারি অফিসের জরুরি প্রয়োজনে নিজস্ব পরিবহন সীমিত চলছে।
এবার সরকার ১১টি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা চলছে।
আজ অমর একুশে মেলার ১৯তম দিন। আর লকডাউনে প্রথম দিন। মেলার আজকের দিনে পাঠক-দর্শনার্থী একেবারে শূন্য। দেখা গেছে, দুপুর ২টা পর্যন্ত মেলার অধিকাংশ স্টল বন্ধ ছিল। গত রাতের বৃষ্টিতে ভিজে গেছে অনেক বই। বৃষ্টির পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্যাভিলিয়নের মেঝে এবং সেখানে থাকা বইগুলো।
সব কিছু বন্ধ রেখে কেবল বইমেলা চালিয়ে যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা। তারা প্রশ্ন তোলেন, যোগোযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হলে পাঠকরা বইমেলায় কিভাবে আসবেন? করোনা সংকট মোকাবিলায় যখন সবকিছু সীমত করা হচ্ছে, ঠিক তখনই বইমেলা চালিয়ে নেয়ার খবর।
বইমেলার প্রাণ পাঠকরা বলছেন, যোগযোগ বন্ধ রেখে বইমেলা চালিয়ে যাওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা বলেন, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বইমেলা জরুরি কাজ নয়। গাড়ি না চললে মানুষ মেলায় আসবে কিভাবে? লেখকরাও বইমেলা চালিয়ে নেয়া আত্মঘাতী বলে মনে করেন।
লকডাউনে বইমেলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, সরকার সারা দেশে নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়ে লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এই লকডাউন আগামীকাল সোমবার থেকে কার্যকর হবে। সরকার বলছে, আদেশ আমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে, বইমেলার লেখক-প্রকাশকরা আশায় থাকবেন; পাঠক মেলায় বই কিনতে আসবেন। কারণ, লকডাউনের মধ্যেও চলবে বইমেলা। বাড়ানো হয়েছে মেলার সময়ও। এখন থেকে প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
দেশে করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সরকারের দেওয়া নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলা চলবে বলে জানিয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রোববার (৪ এপ্রিল) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন নাহার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এর কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।