বাকি যাত্রীরা যাবেন কীভাবে?
করোনার বিস্তার ঠেকাতে অর্ধেক কর্মী দিয়ে অফিস চালানোর নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গণপরিবহনেও শুরু হয়েছে অর্ধেক যাত্রী বহন। এদিকে রাইড শেয়ারিংও নিষিদ্ধ। আর তাই যাত্রীদের একটি অংশ পড়েছে বিপাকে। যানবাহন না পেয়ে রিকশায় উঠতে হচ্ছে অনেককে। সিএনজি অটোরিকশাও হাঁকাতে শুরু করেছে দ্বিগুণ ভাড়া। বুধবার (৩১ মার্চ) বর্ধিত ভাড়া আড়ায়ের প্রথম দিন দেখা গেছে এমন চিত্র।
বুধবার সকাল থেকে সারাদেশে ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন শুরু করে পরিবহন মালিকরা। দুই সপ্তাহ এ আদেশ বলবৎ থাকবে। সকাল থেকে কোনও পরিবহনে অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করতে খুব একটা দেখা যায়নি। ফলে অফিসগামী মানুষরা পড়েছে ভোগান্তিতে।
রাইড শেয়ারিং বন্ধ করায় মোটরসাইকেল চালকদের বিক্ষোভ-অবরোধ
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাইডশেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে মোটরসাইকেলে যাত্রী তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েশ’ মোটরসাইকেল চালক তাদের যান রাস্তায় রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।
পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগ এলাকা অবরোধ করেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা।
দ্বিতীয় দিনেও যাত্রী দুর্ভোগ চরমে
ইয়াছিন আরাফাত কাজ করেন পল্টনের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। থাকেন শনিরআখড়া এলাকায়। প্রতিদিন সকাল ৯টায় অফিসে যোগ দিতে হয় তার। গতকাল সরকার নির্দেশিত বর্ধিত ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল শুরু করে। ওইদিন তিনি সাড়ে সাতটায় সড়কে এসে পরিবহনে ওঠার চেষ্টা করেন। তবে সময়মতো উঠতে পারেননি। প্রায় ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর কাঙ্খিত বাসে উঠতে পারেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দ্বিতীয় দিনটি তার জন্য হয়ে ওঠে আরও দুর্ভোগের। এদিন তিনি গতকালের অভিজ্ঞতায় সকাল সাতটায় শনিরআখড়া বাস স্টপেজে এসে দাঁড়ান। কিন্তু প্রতিটি বাসই স্টপেজে আসার আগেই যাত্রীতে ভরপুর। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি একটি বাসে উঠতে পেরেছেন।
সড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে: স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনযাত্রায়। সরকার বাসের প্রতি দুই আসনে একজন বসার শর্তে ভাড়া বাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ। বুধবার বাড়তি ওই ভাড়া আদায় করা হলেও রাজধানীর বেশিরভাগ বাসে দুই আসনে একজন যাত্রী বসানোর শর্ত মানেননি পরিবহণ শ্রমিকরা। অনেক বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
মহামারী: মোটর সাইকেলে রাইড শেয়ারিং বন্ধ রাখার নির্দেশ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় মোটর সাইকেলে রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বুধবার এক চিঠিতে রাইড শেয়ারিং সেবার কোম্পানিগুলোকে বলেছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত (আপাতত দুই সপ্তাহ) এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
পাশাপাশি অন্যান্য মোটরযানে রাইড শেয়ারিং সেবার ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
বাড়তি ভাড়ায়ও বাসে ওঠার জন্য মরিয়া, সংঘাত-সংঘর্ষ
কাজে যেতে হবে বলে করোনা নিয়ে ভাবার সময় নেই, যে করে হোক বাস পেতে হবে৷ এ নিয়ে বুধবার সকালে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গার বাসের স্টাফদের সাথে যাত্রীদের সংঘর্ষ হয়েছে৷ সকালে আজিমপুর, কুড়িল বিশ্বরোড, ভিক্টোরিয়া পার্ক, যাত্রাবাড়ি ও মাওয়াসহ আরও কয়েকটি এলাকায় যাত্রীরা বাসে উঠতে না পারায় পরিবহন শ্রমিকদের সাথে হাতাহাতি ও মারামারি হয়েছে বলে জানান পরিবহন মালিকেরা৷
এমনকি বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা তাদের না নেয়ায় বাস আটকে দেয়া হয়৷ যাত্রীরা বলছেন, অফিসে যেতে হবে৷ সিট না থাকলেও নিতে হবে৷ পুলিশ পরে ওইসব এলাকায় সব যাত্রীকে বাসে উঠতে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়৷ দুপুরে সরেজমিন কারওয়ান বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা যায়৷ যাত্রী রুবেল মিয়া ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারছেন না৷
১ এপ্রিল থেকে ট্রেনের টিকিট বিক্রির নতুন নিয়ম
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে যাত্রীবাহী ট্রেনের টিকিট ইস্যুর ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বুধবার (৩১ মার্চ) রেলওয়ের উপ-পরিচালক (টিসি) মো. নাহিদ হাসান খানের সই করা এক চিঠিতে নতুন এ নিয়ম জারির বিষয়টি জানানো হয়। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারি প্রজ্ঞাপনের আলোকে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট ইস্যুর ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে ওই চিঠিতে বলা হয়।
নতুন সংশোধনীগুলো হলো >> বাংলাদেশ রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মোট আসনসংখ্যার ৫০ শতাংশ টিকিট একই সঙ্গে অনলাইন, মোবাইল অ্যাপ ও কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে অগ্রিম ব্যবস্থাপনায় ইস্যু করা হবে। >> আগামী ১১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা।
লঞ্চ ভাড়া বাড়বে, চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে লঞ্চ। এজন্য ভাড়াও বাড়বে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। আজ বুধবার সচিবালয়ে ঈদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘লঞ্চ মালিকরা বাসের মতো ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত জানাব। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে গেলে যাত্রী পরিবহণ কমাতে হবে।