কৃষিঋণ বিতরণ কোন পথে
৫ মার্চ একটি বাংলা দৈনিকে কৃষকের সাড়ে চার লাখ ব্যাংক হিসাব কমেছে মর্মে খবর প্রকাশ করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র দাবি করেছে, 'সংশ্নিষ্ট বিভাগের' তথ্য অনুযায়ী কৃষকের ব্যাংক হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই বিভাগের দুই রকম পরিসংখ্যান কেন হলো তা বোধগম্য নয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য একটি সূত্রের মতে, দুটি সরকারি ব্যাংকে কৃষকের হিসাব সঠিকভাবে হালনাগাদ না করায় সংখ্যার গরমিল হয়েছে। সম্পূর্ণ বিষয়টি এখনও দারুণভাবে বিভ্রান্তিকর। কৃষিঋণ ব্রিটিশ আমল থেকেই দেওয়া হতো। তখন গুটিকয়েক ব্যাংক বড় শহরেই ছিল। এ জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রথা চালু হয়। এ ঋণের নাম ছিল তাকাভী ঋণ।
মূলত কৃষিঋণ-সংক্রান্ত দুটি আইন যথাক্রমে ১৮৮৩ ও ১৮৮৪ সালে প্রণীত হয়। একটির নাম ছিল ল্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট লোনস অ্যাক্ট (১৮৮৩)। অন্যটির নাম ছিল এগ্রিকালচারিস্ট লোনস অ্যাক্ট (১৮৮৪)। সংক্ষেপে এদের বলা হতো লিলা ও আলা। লিলার আওতায় কুয়া, পুকুরের সংস্কারসহ সেচের পানির বিতরণ ব্যবস্থা, পানি নিস্কাশন ও বন্যার পানি রোধ করার লক্ষ্যে বাঁধ নির্মাণসহ নদীভাঙন বন্ধ করার জন্য ঋণ দেওয়া হতো। আলার আওতায় উপরোক্ত ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও দুস্থ চাষিদের কৃষি উপকরণ ক্রয়ের জন্য ঋণ দেওয়া হতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, আলা ও লিলার আওতায় যে ঋণ দেওয়া হতো, তার প্রভাব সামান্যই ছিল। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত সময়ে পাঞ্জাব, তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) ও ভারতে কৃষিঋণ নিয়ে সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে বেশিরভাগ কৃষিঋণ প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে বিতরণ করা হলেও অন্যান্য সূত্রের ঋণের উৎস নিতান্ত কম ছিল। এ সমস্যা নিরসনে ১৯৫২ সালে কৃষিতে অর্থায়নের জন্য এক বিধিবদ্ধ সংস্থা সৃষ্টি করা হয়। এর নাম ছিল এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন বা সংক্ষেপে এডিএফসি। পরে ১৯৫৬ সালে কৃষি ব্যাংক কেন্দ্রীয় সরকার স্থাপন করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে অবস্থিত কৃষি ব্যাংকের গুটিকয়েক শাখা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক স্থাপিত হয়।