মৃৎশিল্পীদের লোকায়ত জ্ঞান ও মৃৎশিল্পে নারীর অবস্থান
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রত্নস্থান অনুসন্ধান ও উত্খননের মাধ্যমে অনেক ধরনের প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়, যার মধ্যে মৃৎপাত্র ও মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ অন্যতম। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এরই মধ্যে উয়ারী-বটেশ্বর, মহাস্থানগড় থেকে শুরু করে গুপ্ত, পাল, সেন এবং পরবর্তী সময়ে মুসলিম শাসনামলের বেশকিছু মৃৎপাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। তথাকথিত বিলাসী এবং অনেক বেশি মসৃণ মৃৎপাত্রের মধ্যে রয়েছে উত্তর ভারতীয় মসৃণ মৃৎপাত্র (NBPW)। এছাড়া উজ্জ্বল বর্ণের লাল মৃৎপাত্র, কালো মসৃণ মৃৎপাত্র ইত্যাদি ধরন এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ মৃৎশিল্প বিকাশের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের খুব কমই প্রত্নস্থান আছে, যেখানে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ পাওয়া যায় না। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ অঞ্চলের মাটির গুণগত মান মৃৎশিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মৃৎশিল্প ও মৃৎশিল্পীদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে অবস্থিত প্রাণনাথপুরের মৃৎশিল্পীদের ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালিত হয় সম্প্রতি। প্রাণনাথপুর ছাড়াও শাহজাদপুরের নরিনাতে মৃৎশিল্পীরা বাস করেন। উল্লেখ্য, মৃৎশিল্পে যুক্ত পেশাজীবীদের বেশির ভাগই নিজেদের ‘পাল’ হিসেবে দাবি করেন। পর্যবেক্ষণে লক্ষ করা গেছে প্রাণনাথপুরে মোট ২০ ঘর পাল পরিবার বাস করে, যাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সংখ্যা ৫০ এবং নারীর সংখ্যা ৩০। এই ৮০ জন মানুষ প্রত্যক্ষভাবে মৃৎশিল্প নির্মাণের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন, যেখানে পুরুষের পাশাপাশি ৩০ জন নারীও সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন।