আমরা যেন 'মৌসুমি বাঙালি' না হই
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা মামলার রায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মহামান্য আদালত 'ভাষার মাসের সম্মানার্থে' বাংলায় লিখেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৫-২০ বছর আগে আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি কাজী ইবাদুল হক বাংলায় একাধিক রায় লিখেছেন। হয়তো কোনো কোনো সচেতন বিচারপতি তারও আগে এই মহৎ কর্মটি করেছেন, যা আমাদের স্মৃতিতে নেই অথবা ধূসর হয়ে এসেছে।
১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের পর প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, এ দেশে ব্রিটিশ রাজত্বের অবসান সময়ের ব্যাপার মাত্র। তখন থেকেই এ দেশের সম্ভাব্য রাষ্ট্রভাষা নিয়ে আলোচনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভারতের সমস্যা ছিল অপেক্ষাকৃত জটিল। পাকিস্তানে এ সমস্যা সৃষ্টি করেছিল ভারত থেকে হিজরতকারী উর্দুভাষী প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ। তাদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। উর্দু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেরই ভাষা নয়। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানে বাংলাভাষীর সংখ্যা ছিল ৫৬ শতাংশ। এর পরও পাকিস্তানের 'কায়েদে আযম' ১৯৪৮ সালে ঢাকায় সদম্ভ ঘোষণা করলেন- 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা'। জিন্নাহর ঘোষণা অগ্নিস্ম্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে ঢাকাসহ বাংলার গ্রাম-গঞ্জে। বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা অনুধাবন করলেন- ভারত, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বঙ্গবিভক্তি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির কোনো মঙ্গল তো করেইনি, বরং হাজারো অমঙ্গলের দ্বার খুলে দিয়েছে।