কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ওয়ার্কিং ফ্রম হোম!

সারাক্ষণ জাকারিয়া স্বপন প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১১:১৮

‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’ টার্মটি প্রথম আমি শুনি সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করতে গিয়ে। প্রথম প্রথম বিষয়টি খুব কানে লাগত। সবেমাত্র বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি। কাজ করতে হয় অফিসে গিয়ে। বাসায় বসে আবার কাজ করে কীভাবে! কিছুতেই মাথায় ঢুকছিল না।

চাকরিতে কয়েক বছর চলে গেলেও কোনো দিন সাহস হয়নি বাসা থেকে কাজ। সকালে ঘুম ভেঙে প্রস্তুত হয়ে অফিসে যাব; তারপর সারা দিন কাজ করব; ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরব। এটাই ছিল রুটিন। মাঝে মাঝে এতই ক্লান্ত যে, ফেরার পথে পিৎজা বা কেএফসি থেকে কিছু একটা নিয়ে কোনোরকমে বাসায় পৌঁছে যাওয়া।

আমেরিকার অন্যান্য জায়গার চেয়ে সিলিকন ভ্যালিতে কাজের চাপ বেশি- এটা ধরে নিয়েই মানুষ ওখানে যায়। আমেরিকার অন্যান্য রাজ্যে পাঁচটা বাজলেই পার্কিং লট খালি। কিন্তু সিলিকন ভ্যালিতে রাত আটটার সময়ও পুরো ভবনে লাইট জ্বলতে দেখা যায়। পার্কিং লট পূর্ণ না থাকলেও একদম খালি হয়ে যায় না। সবাই এই কালচারের সঙ্গে পরিচিত। সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করাটা বেশি ভাগ স্টার্টআপগুলোই আশা করে।

এমন একটা পরিবেশে গিয়ে শুনলাম ‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’। যখন কোনো টেলিকনফারেন্সে যোগ দিয়েছি, নয়তো দুপুরের খাবারে গিয়ে সহকর্মীদের কেউ কেউ অনুপস্থিত- তখন শুনতাম ‘হি ইস ওয়ার্কিং ফ্রম হোম টুডে’। বাহ, বেশ মজার তো!

আমার টিমের মার্ককে একদিন বললাম, তুমি তো মাঝে মাঝে ওয়ার্কিং ফ্রম হোম করো। আমিও কি করতে পারি?

মার্ক হেসে দিয়ে বলল, তোমার প্রয়োজন হলে করবে। সমস্যা কী?

আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, কারো অনুমতি নিতে হবে না?

মার্ক অবাক হয়ে বলল, কার অনুমতি নিতে হবে!

আমিও অবাক হয়ে বললাম, নাহ ধরো, ডেভিড নয়তো ভিপির?

মার্ক বলল, এখানে তো কেউ কাউকে মাইক্রোম্যানেজ করে না। তোমার প্রয়োজন থাকলে বাসা থেকে কাজ করবে। আমার বাড়িতে কোনো প্যাকেট ডেলিভারি থাকলে আমাকে উপস্থিত থাকতে হয়। তখন অফিস থেকে আবার বাসায় ড্রাইভ করে যাব কেন? সময় নষ্ট।

আমি বোকার মতো জিজ্ঞেস করলাম, কেউ যদি কাজে ফাঁকি মারে?

মার্ক হাসতে হাসতে বলল, যারা ওপরে উঠতে চায় তারা কাজে ফাঁকি মারে না। বরং বাড়তি কাজ করে। আর যারা ফাঁকি মারে, তারা অফিসে বসেও মারে! যার যা টার্গেট!

আমি হেসে দিয়ে বললাম, তাহলে তুমি সাহস দিচ্ছো, আমিও মাঝে মাঝে বাসা থেকে কাজ করতে পারি?

মার্ক কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ না করেই জবাব দিল, ওহ ইয়াহ! শুধু গ্রুপে একটা ই-মেইল করে রেখো বাকিরা জানে তুমি ডেস্কে নেই। নইলে তারা তোমাকে খুঁজে পাবে না। ওদের সময় নষ্ট হবে।

আমি মুচকি হেসে বললাম, শিওর। এক দিন করে দেখি কেমন লাগে!

মার্কও হেসে দিয়ে বলল, নট এ বিগ ডিল!

দুই.

যদিও মার্ক আমাকে সাহস দিল, তবু ততটা সাহস বাংলাদেশি মানসিকতায় বেড়ে ওঠা আমার ভেতর কাজ করল না। আমি প্রথাগত নিয়মে অফিস করতে থাকি।

কিন্তু একদিন আমরাও বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো। তখনো টেলিফোন লাইন দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। মোবাইল ইন্টারনেট তো তখনো সাধারণের জন্য আসেনি। বাসায় হাইস্পিড ইন্টারনেট নেয়ার জন্য অফিসের মাধ‌্যমে ডিএসএল (এখন আর এটা জনপ্রিয় মাধ্যম নয়) অর্ডার করলাম। এটিএন্ডটি থেকে লোক এসে বাসায় ডিএসএল কানেকশন দিয়ে যাবে- ১.৫ মেগাবিটস/সে.। চরম উত্তেজনা। এত স্পিড দিয়ে কী করব? ফাইবার অপটিক তখনো বাসায় দেয়া শুরু করেনি।

আগের দিন ম্যানেজারকে বললাম, কালকে আমার বাসায় ডিএসএল লাগাবে।

ডেভিড হেসে দিয়ে বলল, যাক তোমাকে আমরা শেষ পর্যন্ত হাইস্পিডে আনতে পারছি।

আমি বললাম, কাল আমাকে তখন বাসায় থাকতে হবে।

ডেভিড বলল, অবশ্যই। তুমি যেন বাসা থেকে কাজ করতে পারো, সেই জন্যই তো ডিএসএল দেয়া হচ্ছে তোমাকে।

আমি মুচকি হেসে দিয়ে বললাম, কানেকশন পাওয়ার পর তোমাকে ই-মেইল করবো নে!

ডেভিড বলল, ভিপিএন নিয়েছো?

আমি বললাম, হুম, আমার ল্যাপটপে ইনস্টল করা আছে।

ডেভিড বলল, গুডলাক।

আমার ভেতর চরম উত্তেজনা। ৬৪ কেবিপিএস থেকে ১.৫ এমবিপিএস! বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা সেটা বুঝবে না। কারণ তাদের জীবন শুরুই হচ্ছে ফাইবার অপটিক নয়তো থ্রি-জি দিয়ে। ফেরারি চালিয়ে যার অভ্যাস, সে কি জানে রিকশাচালকের কষ্ট! নাকি সেটা আদৌ সম্ভব!

রাতে একটু ঘুমও কম হলো। কত কিছু স্বপ্নে এসে ভিড় করল! এখন আর টেলিফোন সংযোগ দিয়ে ডায়াল করতে হবে না। সারাক্ষণই ইন্টারনেটে যুক্ত থাকবে আমার বাসার পিসি নয়তো ল্যাপটপ। অফিসে যেমন স্পিড পাই, তেমন স্পিড পাব বাসায় বসেই। কত রকমের সাত-পাঁচ ভেবে দুপুরে একজন লাইনম্যানের সাহায্যে হাইস্পিড ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হলো আমার অ্যাপার্টমেন্ট। একই তার দিয়ে টেলিফোনে কথা বলা যায়, আবার ইন্টারনেটও ব্যবহার করা যায়। খুবই অবাক করা প্রযুক্তি!

সংযোগ নিয়ে প্রথমেই অফিসে টিমকে জানালাম, ‘জাস্ট গট দ্য ডিএসএল কানেকশন, ওয়ার্কিং ফ্রম হোম রেস্ট অব দ্য ডে’।

তিন.

ওপরের ঘটনাটি বেশি দিন আগের নয়। এই মাত্র ১৫-২০ বছর আগেই এমন ছিল। এখন একটি বাসায় ফাইবার অপটিক দিয়ে ১ জিপিবিএস কিংবা তারও বেশি গতি দেয়া হচ্ছে। লাইভ ট্রিমিং করা যাচ্ছে বাসা থেকে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে থ্রি-জি ফোর-জির গতি। বাসাবাড়ি থেকে ফ্রিক্সড টেলিফোন লাইন যেমন হারিয়ে গেল, তার সঙ্গে মারা গেল ডিএসএল! নতুন কিছু এসে পুরোনোকে মেরে ফেলবে, এটাই হলো প্রযুক্তি!

তখন আমরা মাসে এক দিন ওয়ার্কিং ফ্রম হোম করতে পারলে সেই দিনটাকে মনে হতো ঈদ। তবে আমাদের আসল ঈদের দিন যদি ওয়ার্কিং ডে-তে পড়ে যেত, তখন অবশ্যই ‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম’ বলে দিনটা নিজেকে উপহার দেয়া হতো বৈকি! তখন কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ম করে কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে দিত। তবে সেগুলো নিয়ে সংবাদ হতো। যারা এই ধরনের ফ্লেক্সিবিলিটি দিত, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিন্নভাবে দেখা হতো! কিন্তু এই করোনাকালে কীভাবে পাল্টে গেল জীবন, কনসেপ্ট এবং কাজের ধরন!

আট মাসের বেশি সময় ধরে আমরা বাসা থেকে ফুলটাইম কাজ করছি। এখন কেউ অফিসে গেলে উল্টো বলতে হয়, আমি কিন্তু আজ অফিসে বসে কাজ করছি! পরিস্থিতি কীভাবে পাল্টে দেয় সবকিছু!

আজ সকালে ছোট একটা প্রেজেন্টেশন ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২০ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সাহেব বললেন, এবারের ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে তিনি অনলাইন কুইজ করতে চান। আমাদের একটি কুইজের প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। সেই কুইজের বিষয়ে বলতে গিয়েই আমার উপস্থাপনা। করোনার জন্য আমি বাইরে যাচ্ছি না। তাই বাসা থেকেই যুক্ত হলাম ভিডিও কনফারেন্সে। আমি বাসার ল্যাপটপে। আর ওখানে অডিটোরিয়ামে বিশাল পর্দায় দেখাচ্ছে আমার স্লাইড! আবার সেটা একই সঙ্গে লাইভ হচ্ছে ফেসবুকে! আমারই এক সহকর্মী আবার সেই লাইভ থেকে ছবি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছে। কতটা পাল্টে গেল এই পৃথিবী। আর সেই গ্রহের সঙ্গে পাল্টে গেল বাংলাদেশও। এই দেশটি উন্নয়নের অনেক প্যারামিটারে পৃথিবীর অনেক দেশের কাছেই বিস্ময়। এই করোনার সময়ও শতকরা ৫ ভাগের বেশি হারে গ্রো করছে, যা অনেক দেশেরই নেই। বর্তমান সময়ে ছেলেমেয়েরা কতটা সৌভাগ্যবান- সেটাই ভাবছিলাম সারাটা দিন জুড়ে। আগামী ২০ বছর পর আরো কতটা পথ হাঁটবে এই পৃথিবী! তার সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়েগুলোও এগোবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও