ইসলামি ব্যাংকিংয়ের প্রসারে ভূমিকা রেখেছে মানুষের বিশ্বাস
প্রথম আলো: ইসলামি ব্যাংকিং ও পাশ্চাত্যের ব্যাংকিংয়ের মধ্যে আসলে তফাত নেই, কথাটা কতটা সত্য?
মোহাম্মদ কবির হাসান: ধরুন, একটি দম্পতি একত্রে বসবাস করছেন, আরেক দম্পতি বিয়ে না করে। দৃশ্যমান ফলাফল অভিন্ন, কিন্তু তফাত হলো বৈধতার। ইসলাম বলছে, রিবা হারাম। আর সেই পদ্ধতিগত বিষয়টি ইসলামি ব্যাংকিং ঠিক রেখেছে। প্রথাগত ব্যাংকে গিয়ে বলবেন, গাড়ি কিনব। তারা বলবে, টাকা নিন। গাড়ি আমাদের কাছে বন্ধক থাকবে। ইসলামি ব্যাংকে যান, আপনাকে বলবে, আমরা টাকা দিতে পারব না। তবে গাড়িটা আমরা কিনব। আর গাড়ি যদি এখনই চান, তাহলে ব্যাংক ১০০ টাকায় কিনবে। আপনার কাছ থেকে ১১০ টাকা নেবে। ১০ টাকা তার লাভ। আর এক বছর পরে নিলে আপনার সঙ্গে তার একটা চুক্তি হবে। তখন তাকে আরও ২০ শতাংশ লাভ দিতে হবে। এই চুক্তির সঙ্গে প্রচলিত ব্যাংকের ২০ শতাংশ সুদ নেওয়ার ঋণচুক্তির তফাত নেই। মৌলিক তফাতটা হলো ইসলামি ব্যাংক আপনাকে টাকা দিচ্ছে না, গাড়ি দিচ্ছে। আবার ঋণ শোধ দিতে না পারলে ইসলামি ব্যাংক আপনার ওপর অতিরিক্ত চার্জ করবে না। কিন্তু প্রচলিত ব্যাংক আপনার ওপর অতিরিক্ত চার্জ করবে।
প্রথম আলো: অস্পষ্টতা একটু থাকছেই।
কবির হাসান: এ জন্য লোকে ভাবে, কথা তো একই। আসলে কথা এক নয়। তাই আমি দুটির পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে বলি, ইসলামি ব্যাংকিংয়ে আদলটা হলো শরিয়াহর। ফল বা সারবস্তু অনেকটা প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে মিলে যায়। শরিয়াহ মেনে চলায় ইসলামি ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মূল জায়গায় আলাদা হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ অনেক সময় একই ধরনের ব্যাংকিং দেখে যে অভিযোগ করেন, সেটাও অসার নয়। অর্থায়নের ক্ষেত্রে গরিব লোক হলে উভয়েই আগে জেনে নেবে তার সম্পদ আছে কি না। তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, ইসলামি ব্যাংকিং কল্যাণমুখী হলো কী করে। খালি চোখে তো আমি কোনো পার্থক্যই দেখতে পাচ্ছি না। আবার এটাও সত্য যে ইসলামি ব্যাংকগুলো শরিয়াহ লঙ্ঘন করছে না। এ বিষয়ে আমার অবস্থান হলো ইসলামি ব্যাংকিং দিয়ে ইসলামি অর্থায়ন হবে না। ব্যাংকিং আর ইসলামিক অর্থায়ন দুই বিষয়। ইসলামিক অর্থায়ন অনেক বড় বিষয়। ইসলামি ব্যাংকিং তার অংশমাত্র। ইসলামি ব্যাংকগুলো অনেকটা প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের প্রক্রিয়াই অনুসরণ করেছে। এর উপাদানগুলোও অনেকটা একই। তাই বিভ্রান্তি দেখা দেয়।