মানসিক স্বাস্থ্য ও পাগলের প্রলাপ

ডয়েচ ভেল (জার্মানী) প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২০, ১৯:০৯

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভারতে গত এক দশকে অনেক কাজ হয়েছে৷ তাও সমাজ মানসিক সমস্যাকে পাগলের প্রলাপ বলেই মনে করে৷ আধ্যাত্মবাদেও মনের মানুষের খোঁজে নানান তত্ত্বকথা আছে৷ সব প্রাণীরই শরীর আছে, কিন্তু উন্নত মন আছে শুধু মানুষের৷ মানুষ চিন্তা করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে, ধ্বংসও করতে পারে৷ উন্নত মন আর চিন্তাশীলতাই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে৷

শারীরিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রাণীকেও মানুষ বশ করেছে তার বুদ্ধি দিয়ে, কৌশল দিয়ে৷ কার গায়ে কত বেশি জোর আছে, তা দিয়ে কখনোই শ্রেষ্ঠত্ব মাপা হয় না; মাপা হয় মনের সৃজনশীলতা দিয়ে, মানবিক চিন্তা দিয়ে৷ এ যুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং শারীরিকভাবে প্রায় অচল ছিলেন৷ কিন্তু তাও তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী৷ কারণ তিনি চিন্তা করতে পারতেন৷ তার মানে শরীরের চেয়ে মন কখনো কখনো বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷ শরীর আর মন দুটি আলাদা বিষয়৷ কখনো কখনো আমাদের শরীর খারাপ থাকে, কখনো কখনো মনও খারাপ থাকে৷ কিন্তু আমরা শরীরের সুস্থতা নিয়ে যতটা চিন্তিত, মনের বিষয়টি ততটাই উপেক্ষিত৷ শরীর খারাপ হলে আমরা উতলা হয়ে যাই, মন খারাপকে পাত্তাই দিতে চাই না৷ নিজেরা তো মনকে পাত্তা দেইইনা, কেউ যদি মনের অসুখটা ধরিয়ে দেন, আমরা কৃতজ্ঞ হওয়ার বদলে তার ওপর ক্ষেপে যাই৷ শরীরের যেমন ডাক্তার আছে, মনেরও ডাক্তার আছে৷ কাউকে মনের ডাক্তারের কাছে যেতে বললে তিনি রেগে যান, মুখের ওপর বলে বসেন, আমাকে কি পাগল মনে মনে হয়? মন নিয়ে এই মানসিকতা আমাদের বিপদে ফেলে দেয়৷ সমস্যা অল্প থাকতে ডাক্তারের কাছে যাই না৷ কিন্তু সত্যি সত্যি যখন আমরা ‘পাগল' হয়ে যাই, তখন পাগলের মত ছুটে যাই মনের ডাক্তারের কাছে৷ তখন অনেক দেরি হয়ে যায়৷

মানসিকভাবে অসুস্থ লোকদের আমরা সহজে ‘পাগল' বলে সম্বোধন করি৷ শহরের শিক্ষিত, সচেতন মানুষেরই যেখানে মন নিয়ে কোনো ভাবনা নেই, সেখানে গ্রামের লোকজন তো মনের অস্তিত্বই মানতে চান না৷ কিন্তু শহরের শিক্ষিত লোকদের যেমন মনের অসুখ হয়, গ্রামের অশিক্ষিত লোকদেরও হয়৷ গ্রামের এই মনের অসুখে ভোগা মানুষদের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়৷ যেহেতু মনের আলাদা অস্তিত্ব নিয়েই তারা সংশয়মুক্ত নন, তাই আলাদা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না৷ মনের অসুখে ভোগা গ্রামের মানুষদের যেতে হয় নির্মম ‘চিকিৎসা পদ্ধতি'র মধ্য দিয়ে৷ সেই চিকিৎসা কোনো ডাক্তার দেয় না৷ ওঝা, কবিরাজ, ভন্ড বাবারা মানসিকভাবে অসুস্থ সেই মানুষগুলোকে চিকিৎসার নামে কী নির্মম নির্যাতন করে তা অবিশ্বাস্য৷ নির্যাতনের ধরনটা এতটাই ভয়াবহ তাতে যে কোনো সুস্থ মানুষই শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন৷ ছেলেবেলায় জ্বিনে ধরা একাধিক নারীর এমন ‘চিকিৎসা পদ্ধতি' দেখার দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে৷ চার দশক পরে এসেও আজ লিখতে বসে আমি সেই স্মৃতি মনে করে শিউড়ে উঠছি৷ এখন টের পাচ্ছি, মানসিক রোগীর সেই চিকিৎসা মানসিকভাবে আমাকেও খানিকটা অসুস্থ করে ফেলেছে৷ এখনও যখনই মনে হয়, আমি আঁতকে উঠি৷ একজন মানুষকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার যত ‘সৃজনশীল' পদ্ধতি আছে, সব যেন গ্রামের সেই ওঝা, কবিরাজ আর ভন্ড বাবাদের আবিস্কার৷ মরিচ পুড়িয়ে নাকে ঢুকিয়ে দেয়া, খুন্তি গরম করে লাগিয়ে দেয়া, লাঠি দিয়ে আঘাত করা, হাত-পা বেধে পেটানো, বন্ধ ঘরে ধোয়ায় অন্ধকার করে নির্যাতন, শেকল দিয়ে বেধে রাখা, মল-মুত্র পান করানো- বীভৎস সব ভাবনা৷

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও