কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আর বিভেদ নয়, আসুন একতার কথা বলি

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৪:২৫

.tdi_2_6c5.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_6c5.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); রাজধানীর বুকে মাতা-পুত্রের ক্রীড়ামোদের নির্ভেজাল আনন্দে পানি ঢেলে দিয়েছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে নানামুখী বিতর্কের ঢল। পুত্রকে আনন্দ দিতে ক্রিকেট ব্যাট হাতে মাঠে নামায় মায়ের ঝুলিতে অভিনন্দন জুটেছে সামান্যই। সুশীল সমাজের কাঠগড়ায় মা। আপাদমস্তক আবৃত সেই মায়ের ওপর আক্রমণ আসছে দু’দিক থেকেই। ধর্মান্ধরা প্রশ্ন তুলছেন ঘরের বাইরে গিয়ে ছেলের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠার বৈধতা প্রসঙ্গে। মজার ব্যাপার- প্রগতিবাদীদের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে নয় এবার। মাতা-পুত্রের আনন্দ উল্লাসে আপত্তি না থাকলেও শুধুমাত্র পোশাকের কারণে এককালের ক্রীড়াবিদ মাকে নিয়ে যে অশালীন মন্তব্য করে যাচ্ছেন তাঁরা, তা কোনভাবেই রুচিশীলতার পরিচয় বহন করেনা, প্রগতিশীলতার সাক্ষ্য দেয় না। ওয়াজ মাহফিলে খোলামেলা পোশাকের নারীদেরকে নিয়ে যেমন কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়, ঝর্না আক্তার চিনি নামের এই মাকে নিয়ে পোশাকি প্রগতিবাদীরা সেরকম মন্তব্যের ঝড় তুলে চলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দুটো মতাদর্শই কিন্তু চরমপন্থী, একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোধগম্য হবে সহজেই। ভিন্ন মত অগ্রাহ্য কেবল নয়, নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যত উভয় সমপ্রদায়। ঝড়ের তোড়ে আমরা ভুলেই গিয়েছি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে চলছে মহামারীর কাল। মহামারী বলে থেমে নেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল। হাসপাতালের ‘বার্ন ইউনিট’- এ পোড়া লাশের সারি। নৌকাডুবি, ট্রলার ডুবি চলছে নদী মাতৃক বাংলাদেশের নানান নদ-নদীর বুকে। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সহিংসতায় লাশ পড়ার সংবাদ আসছে প্রতিদিন, প্রতি জনপদ হতে। বিচার বহির্ভূত হত্যা, রহস্যজনক মৃত্যু থেমে নেই একদিনের জন্য। সরকারী কর্মকর্তা নিরাপদ নন সুরক্ষিত সরকারী বাসভবনে। নিহত হবার ঘটনা যেখানে এত সহজ, এত স্বাভাবিক- সেখানে আহত’র সংবাদ বলে লেখার খাতা ভারী না করাই বাঞ্ছনীয়। করোনাকালীন দুর্নীতির খবর এতদিনে অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। প্রতারণার দৌড়ে পিছিয়ে নেই আমাদের মেয়েরা! এতসব খবরের ভিড়ে আরব দেশ থেকে সদ্য উড়ে আসা কফিনে চতুর্দশী কন্যা উম্মে কুলসুমের মৃতদেহের কথা আমাদের চোখেই পড়ে না। তের বছর বয়সকে দিব্যি ছাব্বিশ বানিয়ে দিয়ে নকল জন্মসনদ ও পাসপোর্ট তৈরি করে তাকে পাঠানো হয় মৃত্যুপুরীতে, মাসে মাসে বাবা মাকে বিশটি হাজার করে টাকা পাঠাবে এই স্বপ্ন দেখিয়ে। কুলসুম ২০১৭ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৩.০৮ পেয়েছিল। আরব দেশে পাড়ি দেবার আগে স্থানীয় নূরপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গুনিয়াউক ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের উম্মে কুলসুমকে গৃহকর্মী হিসেবে দূরদেশে পাঠানোর তোড়জোড় চলছিল এমন এক সময়ে, যখন সৌদি আরব থেকে পাঠানো কফিনের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যদিও আমাদের মান্যবর জনপ্রতিনিধিগণ বরাবরই সংখ্যাগুলোকে নগণ্য বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের কাজের শেষ নেই। গৃহকর্মীদের জীবন মৃত্যু নিয়ে তাঁদের বিব্রত করা হয়তো সাজে না। কিন্তু এত সাজগোজ আয়োজন করে, তের বছরের কিশোরীকে ছাব্বিশ বছরের নারী বানিয়ে মৃত্যুর মঞ্চে তুলে দেওয়ায় বাব-মায়ের কোন দায় কী নেই? জন্মসনদে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির অনুমোদন প্রয়োজন। তিনিই বা দায় এড়াবেন কীভাবে? বিমানবন্দরে তিন স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের চোখেও কিশোরী ও নারীর বয়সের হেরফেরটা ধরা পড়েনি! দালাল চক্রের কথা তুলে লেখার কলেরব আর বাড়াতে চাইনা। পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এই চক্রের জাল বিস্তার করা আছে। সবই জানা- সবার কাছে। তবে প্রতিকারের কোন প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়। কারণ উম্মে কুলসুমদের জীবন খরচযোগ্য। উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রাপথে বাংলাদেশের অভিযাত্রায় কুলসুম, সুমি আক্তার, আবিরনদের মতো কয়েক হাজার মেয়ে লাশ হয়ে ফিরে এলেও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ওরা যখন আরবের ধনকুবেরদের ঘরে ঘরে লাঞ্ছিত হয়েও দীনার দিরহাম পাঠিয়ে আমাদের রাজকোষ বৈদেশিক মুদ্রায় ভরিয়ে তোলে, তখনই ওদের আমরা গ্রাহ্য করিনা। মরে গেলে মাতম করার কী আছে! প্রচুর সংখ্যক দুঃস্থ নারী কিশোরী মজুদ আছে বাংলামায়ের ঘরে-ঘরে। আরব দেশে গৃহকর্মী সরবরাহে কোন ছেদ পড়বে না। আমরা, সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত নাগরিকরা বিশেষ বিশেষ দিবসে গোলাপি, বেগুনি রঙের শাড়ি পরে নারীমুক্তির গান গাইব গলা ছেড়ে। সৌন্দর্যের অধিকারের লড়াই নিয়ে মঞ্চ কাঁপিয়ে তুলব, আলো ছড়াব। আধুনিকতা ও প্রগতির নামে ঐতিহ্যের গলায় ছুরি বসিয়ে দেব। সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতির জয়গান গেয়ে যাব। সংস্কৃতির কথা ওঠায় মনে পড়ে গেল; সংস্কৃতিটা আসলে কী? কেমন দেখতে এই সংস্কৃতি? এটা কী আকাশ থেকে নেমে আসা কোন বিধিমালা ? সাধারণভাবে আমাদের চারপাশের মানুষজন সংস্কৃতি বলতে মনে করে নাচ,গান, কবিতা, নাটক, সিনেমা নিয়ে থাকা। এবং এই সব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত শিল্পীদেরকেই কেবল সংস্কৃতিমনা বলে মনে করা হয়। বাদবাকি সবাই অসংস্কৃতিবান কিংবা ‘আনকালচার্ড’। কিন্তু সংস্কৃতির ব্যাপ্তি যে কত বিশাল, তা আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও ভুলে থাকেন প্রায়শ। সেকারণেই বিনোদন আর সংস্কৃতিকে আমরা এক করে ফেলি। সংস্কৃতির অসংখ্য শাখা প্রশাখার মাঝে বিনোদন একটা ছোট্ট উপাদান মাত্র- সেকথাও ভুলে যাই আমরা। আর সেকারণেই গাঁও গেরামে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করে চলেছে যে বিশাল গেঁয়ো জনগোষ্ঠী- মাটির মানুষ, জলের মানুষ তাদেরকেও আমরা অবলীলায় আনকালচার্ডদের কাতারে ফেলে দেই। আলো ঝলমলে শহর জুড়ে ভাসমান শ্রমজীবী জনসাধারণ, টুকরি আর কাস্তে কোদাল কিংবা ছেঁড়া ফাটা ঝোলাই যাদের জীবন, তারা তো পোকামাকড় বৈ অন্যকিছু নয়। আমাদের সংস্কৃতিতে ওদের অবস্থান কোথায়? সংস্কৃতির ওরা কী-ইবা জানে? প্রশ্ন উঠতে পারে, সংস্কৃতি কী স্থবির না চলমান? চিরন্তন না কী নিয়ত পরিবর্তনশীল? কেউ যখন নিজস্ব গন্ডির সীমানা পেরিয়ে নতুন জনপদে পা রাখে, তখন সে সঙ্গে করে নিয়ে যায় তার সংস্কৃতি; তার মূল্যবোধ ও বিশ্বাস। অচেনা জনপদে চেনাজানা হয় ধীরে ধীরে। মানিয়ে নিতে নিতে সময় আসে বিদায় বলার। ফেরার সময় সে কিন্তু খালি হাতে ফেওে না। ভিনদেশী সংস্কৃতি থেকে কিছু না কিছু গ্রহণ করে ফেলে, হয়তো নিজের অজান্তেই। আবার ভিনদেশীদেরকে দিয়েও আসে, কিছু না কিছু, নিজের সংস্কৃতি থেকে। সংস্কৃতির এই আদান প্রদান যুগ যুগ ধরে চলছে পৃথিবী জুড়ে। দেশের ভেতরে আঞ্চলিক কিংবা স্থানীয় সংস্কৃতিতেও সংমিশ্রণ ঘটছে এমনি করে। তবে স্বকীয়তা ধরে রেখে গ্রহণ বর্জনের বিষয়টা নির্ভর করে অবশ্যই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শিক্ষা, মূল্যবোধ ও রুচিবোধের ওপর। এই রুচির প্রশ্নে মানুষমাত্রই সর্বাঙ্গীণ স্বাধীন। প্রগতির জামা পরে রক্ষণশীলদের প্রতি অসহিষ্ণুতার আঙুল তুলে আমরা কিন্তু নিজের রক্ষণশীলতাকেই তুলে ধরছি। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক পাড়ি দিতে চলেছে বিশ্বব্রহ্মান্ড। বিশ্বের বুকে নিজস্ব মানচিত্র ও পতাকা নিয়ে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের অর্ধশতক পূর্ণ করতে চলেছে অনেক দাম দিয়ে কেনা বাংলাদেশ। প্রযুক্তি এখন পৃথিবীটাকে আমাদের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। বিশ্ব আসরে নিজেদের অবস্থান কোথায়, তা বোঝা দুঃসাধ্য কিছু নয়। কোভিড পরবর্তী শুদ্ধতম পৃথিবীতে আর কোন কুলসুম, আবিরন পরিবারের মুখের ভাত যোগাতে আরব দেশে পাড়ি জমাবে না- সে নিশ্চয়তা দাবি করতেই পারি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। অতিমারি আমাদের ভাবনা ও স্বপ্নযাত্রায় বাধ সাধলেও, আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে এক জনমের শিক্ষা। আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী চাইলে আমাদের ভাবনা চিন্তায় সংবেদনশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার সমন্বয় একান্ত জরুরী। রাজনৈতিক বিভাজন তো আছেই জন্মলগ্ন হতে। অর্থনৈতিক বিভাজনও বোধ করি শেষ হবার নয় ইহজগতে। এমন দিনে আমরা কী একতা ও মিলনের কথা বলব, না ধর্ম নিয়ে, পোশাক নিয়ে সর্বোপরি সংস্কৃতি নিয়ে বিভেদের বিষ ছড়িয়ে জাতিকে আরও পিছিয়ে দেব, সে ভাবনা আমাদেরকেই ভাবতে হবে। এবং কাজে নেমে পড়তে হবে; কাল নয়, আজই।.tdi_3_333.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_333.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে