কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের নারী

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:০৯

.tdi_2_4cc.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_4cc.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); “ক্ষুধার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম চট্টগ্রাম : বীর চট্টগ্রাম! বিক্ষত বিধ্বস্ত দেহে অদ্ভুত নিঃশব্দ সহিষ্ণুতা আমাদের স্নায়ুতে স্নায়ুতে বিদ্যুৎপ্রবাহ আনে, আনে আজ চেতনার দিন। চট্টগ্রাম : বীর চট্টগ্রাম! … জানি তুমি আঘাতে আঘাতে এখনও স্তিমিত নও, জানি তুমি এখনো উদ্দাম হে চট্টগ্রাম!”–সুকান্ত ভট্টাচার্য চট্টগ্রাম! বরাবরই বীর প্রসবিনী। এ ভূমিতে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন শত সহগ্র বীর। তাঁদের রক্তে স্নাত হয়েছে এ পবিত্র ভূমি। শত শত মায়ের অশ্রুতে জন্ম নিয়েছে নব নব ইতিহাস। তেমনি এক ইতিহাস চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ। ১৭৫৭ বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্ত গেলে প্রায় ১০০ বছর বাঙালি সে শোকে মূহ্যমান ছিল। ১৮৫৭ সালে সিপাহিবিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকদের মনে ভয় ধরানো গেলেও এ বিপ্লব দমিয়ে ফেলতে ব্রিটিশ সরকার সমর্থ হয়। এরপরে বিচ্ছিন্নভাবে কখনো কখনো এ বাংলার যুবকেরা গর্জে উঠেছে।১৯০৫ সালে বোমারু বারীন ও শ্রী অরবিন্দর বিপ্লব প্রচেষ্টা,১৯১১ সালে বাঘা যতীনের নেতৃত্বে সশস্ত্র আন্দোলন এবং কয়েক বছর বিরতি দিয়ে ১৯২২ সাল থেকে বোমা পিস্তলের গর্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে এ জনপদ।এরই সূত্র ধরে চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় যুববিদ্রোহ। এ যুববিদ্রোহে শত শত কিশোর-তরুণ বিপ্লবী যেমন সামিল হয়েছিলেন, তেমনি এগিয়ে এসেছিলেন কিছু অকুতোভয় নারীও। আজ আমার এ শ্রদ্ধার্ঘ্য তাঁদের স্মৃতির প্রতিই নিবেদিত। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত নারীদের তালিকা করতে গেলে প্রথমেই যে নামটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয় তিনি হলেন ব্রিটিশ রমণী এডিথ এলিন গ্রে। পরবর্তীতে যিনি নেলী সেনগুপ্তা নামে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর জন্ম ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ শহরে। বাবা ফ্রেডরিক উইলিয়াম গ্রে, মা এডিথ হেনরিয়েটা গ্রে। চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব যাত্রামোহন সেনগুপ্তের পুত্র যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ক্যামব্রিজে পড়তে গিয়ে ভালোবেসে বিয়ে করেন এডিথ এলিন গ্রেকে। বিয়ের পরে তাঁর নাম রাখা হয় নেলী সেনগুপ্ত। স্বামীর স্বদেশকে তিনি এতটাই ভালোবেসেছিলেন যে তাঁর সমস্ত জীবনটাই দেশপ্রেমে উৎসর্গ করেন। ১৯২১ সালে আসাম বেঙ্গল রেল কর্মচারী ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত। এ কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বামীর অবর্তমানে এ আন্দোলনের নেতৃত্বের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন নেলী সেনগুপ্ত।”স্বদেশি পণ্য গ্রহণ এবং বিদেশি পণ্য বর্জন” শ্লোগানকে ধারণ করে তিনি চট্টগ্রাম শহরে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে এক অভূতপূর্ব আন্দোলন গড়ে তোলেন। সে সময় এক ইংরেজ মহিলার এ দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখে সাধারণ জনগণও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। নেলী সেনগুপ্ত ছিলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের যোগ্য সহধর্মিনী। তিনি স্বামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকতেন। ১৯২৭ সালের ১৭ নভেম্বর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সাইমন কমিশন নামে এক কমিশন নিযুক্ত করলো।ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এ কমিশনকে বয়কট করে। এ কমিশনের বিরোধীতা করে এক বিশাল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ও নেলী সেনগুপ্ত। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য কংগ্রেসনেতা যতীন্দ্রমোহনকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে।কিন্তু এতে কখনোই ভেঙে পড়েননি এ মহীয়সী নারী। স্বামীর অবর্তমানে সম্মুখভাগে থেকে বার বার নেতৃত্ব দিয়েছেন এ ইংরেজদুহিতা। জেল থেকে মুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করতে পাটনা,বারানসি, লক্ষ্মৌ,কানপুর,এলাহাবাদ প্রভৃতি স্থানে ঘুরে বেড়াতেন যতীন্দ্রমোহন। আর তাঁরই পাশে অবধারিতভাবে উপস্থিত থাকতেন নেলী সেনগুপ্ত।১৯৩০ সালে স্বামী জেলে থাকা অবস্থায় আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার কারণে অরুণা আসফ আলীর সাথে গ্রেপ্তার হন নেলী সেনগুপ্ত।১৯৩১ সালে মুক্তি পেয়ে আবারও আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৩ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে কংগ্রেসের প্রায় সব নেতাই কারাগারে অন্তরীণ হলেন। এসময় অন্যান্য নেতাদের অনুরোধে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন তিনি। অধিবেশনে পুলিশ হামলা করে এবং নেলী সেনগুপ্ত গ্রেপ্তার হন। ১৯৩৩ সালের ২২ জুলাই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মাত্র ৪৮ বছর বয়সে যতীন্দ্রমোহন সেনের মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর নেলী সেনগুপ্ত আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতা কর্পোরেশন এর অন্ডারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালে এবং ১৯৪৬ সালে তিনি চট্টগ্রাম থেকে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। দেশভাগের পর এ মহীয়সী নারী চট্টগ্রামেই থেকে যান। আমৃত্যু তিনি নানা জনহিতকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম এর ছিল অনন্য ভূমিকা। চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহ সারা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছিল চট্টগ্রামের তরুণ-তরুণীরা কী করতে পারে। এ আন্দোলনের সাথে সূর্য সেন নামটি যেমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তেমনি আরেকটি নামও ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করা আছে। তিনি হলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রাম শহরের আসকার দিঘির পাড়ে তাঁর জন্ম।বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার,মা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতার,ডাক নাম ছিল রাণী। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব মেধাবী এবং পড়ুয়া। বাংলা এবং ইংরেজিতে প্রবন্ধ,নাটক লিখে তিনি সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন। তিনি ১৯২৭ সালে ডা. খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৯ সালে তিনি আই.এ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হন এবং মাসিক বিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স করতে যান।এক জ্ঞাতি দাদার কাছ থেকে তিনি প্রথম সূর্য সেনের দলের বিপ্লবীদের সম্পর্কে জানতে পারেন। তারপর ‘ক্ষুদিরাম’,’বাঘা যতীন’,’কানাই লাল’,’দেশের কথা’ প্রভৃতি বইগুলো পড়ে তিনি নিজেকে দেশের কাজে সঁপে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেসময় বিপ্লবীরা নারীদের সঙ্গ এড়িয়ে চলতো।তারা মনে করতো নারীদের সংস্পর্শে গেলে মনে দুর্বলতা জন্মাবে এবং এতে দেশের কাজে বাধা সৃষ্টি হবে। স্বয়ং সূর্য সেন পুষ্পকুন্তলাকে বিয়ে করেও ত্যাগ করে এসেছিলেন।কিন্তু পরবর্তীতে সূর্য সেন দলের অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এক বৈঠকে তিনি বলেন,”… আমার মনে হয়,বিপ্লবের সব কাজে মেয়েদের না নিতে পারলেও,অনেক বিশ্বস্ত ও গোপনীয় কাজে সাহায্যের জন্য তাদের আমরা আনতে পারি।” এভাবেই সময়ের প্রয়োজনে প্রীতিলতা বিপ্লবী দলের সাথে যুক্ত হন। প্রীতিলতা বুঝেছিলেন আন্দোলনকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নারীশক্তিকে জাগাতে হবে। তাই তিনি জেলা রাজনৈতিক সম্মেলন,জেলা যুব সম্মেলন,জেলা ছাত্র সম্মেলনের অনুকরণে জেলা নারী সম্মেলনের আহ্বান জানান জেলা বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের কাছে। সূর্য সেন তাতে সম্মতি জানান।এ সম্মেলনের আয়োজনে ছিলেন প্রীতিলতা,কল্পনা দত্ত,সরোজিনী পাল,কুমুদিনী রক্ষিত। সভানেত্রী মনোনীত হন তৎকালীন বিশিষ্ট মহিলা কংগ্রেস নেত্রী মিসেস লতিকা বোস। এ নারী সম্মেলন বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করে। এখানে অনেক মুসলিম নারীও যোগদান করেন। পরবর্তীতে অনেক নারী তাঁদের স্বর্ণালংকার ও জমানো টাকা পয়সা বিপ্লবীদের জন্য দান করেন। ১৯৩০ সালের ১৯ এপ্রিল প্রীতিলতা তাঁর ছাত্রীনিবাসেই পত্রিকা মারফত খবর পান চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের। এ বিদ্রোহ তাঁর মনে আগুন জ্বেলে দিলো। তিনি নিজেও কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করলেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ছিল ব্রিটিশ শাসনমুক্ত।২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদল এবং ব্রিটিশ সেনা ও পুলিশের সাথে যে সন্মুখ যুদ্ধ হয় তাতে ৬৪জন ইংরেজ নিহত হয়। বিপ্লবী শহিদ হন ১২ জন। ১২ জনের মধ্যে অর্ধেন্দু দস্তিদার নামে প্রীতিলতার এক জ্ঞাতি দাদাও ছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুতে তিনি প্রতিশোধের নেশায় জ্বলে উঠলেন। অস্ত্রাগার লুণ্ঠন বা যুব বিদ্রোহের পর বেশির ভাগ বিপ্লবী আত্মগোপনে চলে গেলেন। ১৯৩০ সালের ১ ডিসেম্বর চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ কর্মকর্তা মি. ক্রেগকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলক্রমে পুলিশ ইন্সপেক্টর তারিণী মুখোপাধ্যায়কে হত্যা করেন বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও কালীপদ চক্রবর্তী। ২ ডিসেম্বর তাঁরা দুজনেই ধরা পড়েন।বিচারে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসি এবং বয়সের কারণে কালীপদ চক্রবর্তীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পত্রিকায় তাঁদের সম্বন্ধে পড়ে রামকৃষ্ণকে দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠেন প্রীতিলতা। সূর্য সেন এর নির্দেশ পেয়ে প্রীতিলতা ফাঁসির আগে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে চল্লিশ বার দেখা করেন। এই রামকৃষ্ণই প্রীতিলতাকে আত্মদানের পথে অনেকটা এগিয়ে দেন। প্রীতিলতার ভাষায়, “তাঁর সুসংযত দৃষ্টি, ভগবানে অগাধ বিশ্বাস, শিশুসুলভ সারল্য, আবেগপূর্ণ অন্তর, গভীর জ্ঞান ও বিপ্লবের আদর্শ আমাকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে। আমি আগের চেয়ে আরও দশগুণ বেশি শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাবার প্রেরণা তাঁর কাছ থেকে পাই।” ১৯৩২ সালের ১৩ জুন ধলঘাট সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে সূর্য সেন এবং নির্মল সেনের সাথে এক গোপন বৈঠকে বসেন প্রীতিলতা। কিন্তু এ বৈঠকে হানা দেয় ক্যাপ্টেন ক্যামেরুন এর নেতৃত্বে এক বিরাট গুর্খাবাহিনী। এখানে মুখোমুখি যুদ্ধে ক্যাপ্টেন ক্যামেরুন নিহত, নির্মল সেন এবং অপূর্ব সেন শহিদ হন। সূর্য সেন এবং প্রীতিলতা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ যুদ্ধের পর সূর্য সেনকে ধরিয়ে দিতে ১০০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রীতিলতাকেও ধরিয়ে দিতে ২৫০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কাউকে ধরা সম্ভব হলো না। ১৯৩২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কাট্টলির এক বাড়িতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব সূর্য সেন প্রীতিলতার ওপর ন্যস্ত করেন।২৩ সেপ্টেম্বর রাত দশটায় নিজেকে পুরুষবেশে সাজিয়ে প্রীতিলতা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে এ ক্লাবে আক্রমণ করেন। তখন ক্লাবের ভেতরে শতাধিক বিদেশি নরনারী আনন্দ উল্লাসে মত্ত ছিল। অতর্কিত আক্রমণে তারা দিগ্‌িবদিক পালাতে থাকে। এ হামলায় একজন মহিলা নিহত এবং প্রায় পঞ্চাশজনের মতো আহত হয়।হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে প্রীতিলতার বুকে।গুলিটি নালার মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক ইংরেজ তরুণ ছুঁড়েছিল। পুলিশি নির্যাতনের চেয়ে আত্মদানকেই শ্রেয় মনে করলেন এই বীরকন্যা। পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে রাখা পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে তিনি আত্মদান করলেন। তাঁর পকেট থেকে উদ্ধার করা হয় স্বাধীনতার জন্য কেন তিনি প্রাণ উৎসর্গ করার সংকল্প নিলেন সে সম্পর্কিত একটি বিবৃতি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি ছাত্রীনিবাসের নাম প্রীতিলতার নামে নামকরণ করে তাঁকে সম্মান জানানো হয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শুধু চট্টগ্রাম নয়,সমগ্র ভারত কাঁপানো আরেক নারীর নাম কল্পনা দত্ত,পরবর্তীতে যিনি কল্পনা যোশী হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন।তাঁর জন্ম বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে ১৯১৩ সালের ২৭ জুলাই। বাবা বিনোদবিহারী দত্ত,মা শোভানাবালা দত্ত। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন রায়বাহাদুর, মাও ছিলেন জমিদারকন্যা। অত্যন্ত অভিজাত পরিবারের মেয়ে অপূর্ব সুন্দরী কল্পনা নিজের সমগ্র জীবনটাই দেশের কাজে উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯২৯ সালে তিনি অংক এবং সংস্কৃতে লেটার নিয়ে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। তিনি মেয়েদের মধ্যে চতুর্থ হয়ে মাসিক ১৫ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এরপর বেথুন কলেজে ভর্তি হয়ে তিনি ছাত্রী সংঘে যোগদান করেন এবং রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।বিপ্লবী দলের বিভিন্ন বই পড়ে তিনিও প্রীতিলতার মতো নিজেকে বিপ্লবের কাজে সঁপে দেওয়ার জন্য মনস্থির করেন।কিন্তু তাঁর পারিবারিক আভিজাত্য এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিপ্লবীদের ধারণা ছিল ওরকম অভিজাত পরিবারের কেউ বিপ্লবী হতে পারে না। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল যুববিদ্রোহের পর কল্পনা বিপ্লবের কাজে অংশগ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম চলে আসেন,এবং অনেক চেষ্টা তদ্বির করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।এ কলেজ থেকেই তিনি আইএসসি পাশ করে বিএসসিতে ভর্তি হন। অনেক চেষ্টার পর এক রাতে তিনি সূর্য সেনের সাথে দেখা করতে সমর্থ হন। এ প্রসঙ্গে কল্পনা দত্ত বলেন,”মাস্টারদার সাথে প্রথম সাক্ষাতে আমি অভিভূত হয়েছিলাম,আমি অনুভব করেছিলাম এক ধরনের আনন্দ,গভীর শ্রদ্ধা, বিস্ময় এবং ছিল ভয়ের ছোঁয়া-মনে হচ্ছিল আমাকে দিয়ে যাই করাতে চায় না কেন এক মুহূতের্র নোটিশে আমি তা করে দিতে পারব। “সত্যি সত্যি তিনি তাই করেছিলেন। বিজ্ঞানের ছাত্রী বলে তাঁর ওপর দায়িত্ব ছিল বোমা তৈরির মালমশলা আনা এবং বাড়িতে বসে বারুদের খোল তৈরি।এ ছাড়াও বিপ্লবীদের অস্ত্রও তিনি নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখতেন। কল্পনা দত্ত এতটাই দুঃসাহসী ছিলেন যে বিপ্লবী কর্তৃক জেলে ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার যে মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল,তাতে তার ওপর ভার ছিল ডিনামাইট বিস্ফোরণের। এ কাজটি করার কথা ছিল জেলখানার কাছাকাছি একটি বাড়িতে বসে সুইচ টিপে।যদিও পুরো ব্যাপারটি ভেস্তে যায় গোয়েন্দা তৎপরতায়।এ ঘটনায় কল্পনা জড়িত থাকার প্রমাণ না পেলেও পুলিশ তাঁকে গৃহবন্দি করে। তারপরও কল্পনা ঠিকই চালিয়ে যেতে থাকেন তাঁর বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড। ১৯৩২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গোপন সংবাদ পেয়ে ছদ্মবেশে বৈঠকে যাওয়ার পথে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন কল্পনা দত্ত। এ বৈঠকটি ছিল ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের প্রস্ততি নেবার জন্য। যদিও কিছু প্রমাণ করতে না পেরে দুই মাস পরে কল্পনাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে পুলিশের তৎপরতা প্রচণ্ড রূপ ধারণ করলো।সূর্য সেনের নির্দেশে বিপ্লবীরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে আত্মগোপন করলেন। কল্পনা, সূর্য সেন এবং আরও কয়েকজন বিপ্লবী আশ্রয় নিলেন গৈরলা গ্রামের ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে। সময়কাল ১৯৩৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। এ গ্রামেরই জমিদার নেত্রসেন পনেরো হাজার টাকার লোভে পুলিশকে জানিয়ে দেয় সূর্য সেনের আশ্রয়স্থলের ঠিকানা। যদিও তার ছোটভাই ব্রজেন সেন ছিলেন একজন বিপ্লবী।১২ ফেব্রুয়ারি রাত নয়টায় এক ইংরেজ ক্যাপ্টেন থানার দারোগাসহ অসংখ্য মিলিটারি পুলিশ দিয়ে বাড়িটা ঘিরে ফেলে। এর আগেও অসংখ্যবার সূর্য সেন এরকম বেষ্টনি থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পালিয়ে গেছেন,কিন্তু এবার পারলেন না। শান্তি চক্রবর্তী, সুশীল দাশগুপ্ত,মনীন্দ্র দত্ত এবং কল্পনা দত্ত পালাতে পারলেও সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন। কল্পনা দত্ত সেদিন পালাতে পারলেও শেষ রক্ষা হলো না।১৯৩৩ সালের ১৯ মে গহিরা গ্রামে পূর্ণ তালুকদার ও প্রসূন তালুকদারের বাড়িতে ধরা পড়েন। তবে ধরা পড়ার আগে বিপ্লবীদের সাথে মিলিটারি পুলিশের ভয়ংকর সন্মুখ যুদ্ধ হয়।এতে শহিদ হন পূর্ণ তালুকদার ও মনোরঞ্জন। সব গুলি ফুরিয়ে গেলে আশ্রয়দাতাদের বাঁচাতে কল্পনা দত্তসহ অন্যান্য বিপ্লবীরা আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন প্রকাশ্যে বিপ্লবীদের বেধড়ক পেটানো হয়। ১৫ জুন সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তকে আসামী করে শুরু হয় তৃতীয় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা। প্রহসনমূলক এ বিচারের রায় ঘোষিত হয় ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি। রায়ে সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির হুকুম হয় এবং কল্পনা দত্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জনমতের প্রবল চাপে ১৯৪১ সালে কল্পনা দত্তকে মুক্তি দেওয়া হয়।মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কমিউনিস্ট পাটির্র সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেন। ১৯৪৩ সালে তিনি বম্বেতে কমিউনিস্ট পাটির্র সম্মেলনে চট্টগ্রাম এর প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। সেখানে ভারতের কমিউনিস্ট পাটির্র সম্পাদক পূর্ণচাঁদ যোশীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়।বিয়ের পরও সাধারণ মানুষের হয়ে লড়ে যাওয়ার জন্য তিনি চট্টগ্রাম চলে আসেন।চট্টগ্রাম এর প্রতিটি আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী ভূমিকায়। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই তাঁকে “আমাদের মেয়ে” বলে সম্বোধন করতেন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ হলে তিনি স্বামীর কারণে ভারতে চলে যান। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে আসেন। তিনি ভারতে থাকলেও তাঁর হৃদয়ে ছিল চট্টগ্রাম। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য জননী হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি একজন সুলেখিকাও ছিলেন।”চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান” তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বই। ১৯৯৫ সালে এই মহীয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন। কুন্দপ্রভা সেন ছিলেন সূর্য সেনের আশীর্বাদপুষ্ট আরেক বিপ্লবী নারী। তিনি ছিলেন বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের অধিবাসী। বিপ্লবের মন্ত্রে নিজেকে তিনি দীক্ষিত করেন। বিপ্লবের কাজে বাধা আসবে বলে তিনি নিজের বিয়েও ভেঙে দেন। সূর্য সেনের নিজের হাতে লেখা কিছু দুর্লভ চিঠির মধ্যে একটি হলো কুন্দপ্রভাকে লেখা। সে চিঠিতে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন,”মানুষের জীবনপথে আসে বহু বাধা।বহু সংঘাত।সবকিছুই পায়ে দলতে হবে। জানি বিপদ আছে,দুঃখ আছে।তাই তো বক্ষে পরান নাচে। জানি তোর মাঝে সে সাহস, উদ্যম ও উৎসাহ আছে। তোকে বলতে ভালো লাগে।তাই বলি।এগিয়ে চল।এগিয়ে চল।”সূর্য সেনকে আশ্রয় দেবার অপরাধে কুন্দপ্রভা সেনকে কারাবরণ করতে হয়। তিনি একজন সুলেখিকাও ছিলেন। “কারাস্মৃতি” তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ। অগ্নিযুগের চট্টগ্রামের নারীদের কথা বলতে গেলে আরেকটি নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হয়,তিনি হলেন সাবিত্রী দেবী।১৮৮৭ সালে তাঁর জন্ম।পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামের তাঁর বাড়িটি ছিল বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এ দরিদ্র বিধবা এখানে বাস করতেন তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে। যখন সূর্য সেনের মাথার দাম ১০০০০ টাকা তখনো তিনি পরম মমতায় সূর্য সেনকে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। সূর্য সেনসহ অন্যান্য বিপ্লবীদের আশ্রয় দেবার অপরাধে তাঁকে তাঁর পুত্র কন্যাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর মেয়ে স্বামীর প্রলোভনে রাজসাক্ষী হয়ে বেঁচে গেলেও সাবিত্রী দেবী এবং তাঁর পুত্র রামকৃষ্ণের জেল হয়। জেলে যক্ষাক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যান পু্‌ত্র। তবুও মাকে দমানো যায়নি। আমৃত্যু তিনি সূর্য সেনের আদর্শকে ধারণ করে কাটিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি বিপ্লবীদের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাঁরা যেন তাঁর পুত্র হত্যার প্রতিশোধ নেন।প্রেমলতা ছিলেন বিপ্লবী স্বামীর আদর্শে উজ্জীবিত সাহসী আরেক নারী। খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া প্রেমলতার বিয়ে হয়েছিল বিপ্লবী কালী দে এর সাথে। বিপ্লবীদের বিয়ে করা বারণ থাকলেও পারিবারিক চাপে কালী দেকে বিয়ে করতে হয়। বিয়ের পর তিনি স্ত্রীকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। প্রেমলতা অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন প্রীতিলতা,কল্পনা দত্তের সাথে। ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে তাঁরও যাওয়ার কথা ছিল। পরে কল্পনা দত্ত ধরা পড়াতে তা ভেস্তে যায়। বিপ্লবী স্বামীর সাথে সাথেই থাকতেন তিনি। কিন্তু একসময় কালী দে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং তাঁর দশ বছরের জেল হয়। এ চাপ নিতে পারেন না প্রেমলতা। ততদিনে সূর্য সেন,তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি হয়ে গেছে।প্রীতিলতা আত্মদান করেছেন।কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন হয়েছে। নিঃসঙ্গ, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত প্রেমলতা এক পর্যায়ে আত্মহত্যা করেন। কল্যাণী দাশ এবং বীনা দাশ ছিলেন চট্টগ্রাম এর প্রখ্যাত শিক্ষক বেণীমাধব দাশের কন্যা। বাবার প্রভাবে তাঁরা দুজনেই বিপ্লবী ছিলেন। তাঁরা দুজনে অস্ত্র প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। পলাতক কর্মীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন,বেআইনী জিনিসপত্র বহন,সংগঠন পুনর্গঠনের দায়ে কল্যানী দাশ জেল খেটেছিলেন ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত।গভনর্রকে হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে বীনা দাশের নয় বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল।পরবর্তীতে দুই বোন মিলে “মন্দিরা” নামে একটি রাজনৈতিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। প্রমীলা দাস এবং আরতি রক্ষিত ছিলেন মাসী বোনঝি। দুজনেই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।সূর্য সেন এর সাথে তাঁদের দেখাও হয়েছিল। দলের নির্দেশ পেয়ে তাঁরা চিঠিপত্র, ঔষধ, গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র আদানপ্রদান করতেন।টাকাপয়সা জোগাড় ও অস্ত্র আদানপ্রদানের দায়িত্বও তাঁদের ওপর ছিল। ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাস আরেক মহীয়সী নারীর নাম।যখন সূর্য সেনের মাথার দাম পনেরো হাজার টাকা তখন তিনি লোভকে জয় করে তাঁকে অন্যান্য বিপ্লবীসহ নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। জমিদার নেত্র সেনের বিশ্বাসঘাতকতায় তাঁরই বাড়িতে ধরা পড়ে সূর্য সেনসহ অন্যান্য বিপ্লবীরা। মাস্টারদাকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে তাঁর চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। ইন্দুমতী সিংহ ছিলেন বিপ্লবী অনন্তলাল সিংহের বোন। ১৮৯৮ সালে চট্টগ্রাম শহরের নন্দনকাননে তাঁর জন্ম। তিনি নিজেও বিপ্লবী ছিলেন।তিনি মেয়েদের লাঠি খেলা,ছুরি চালানো, মুষ্টিযুদ্ধ ইত্যাদি শেখাতেন। তিনি চমৎকার পিস্তল চালাতে জানতেন। বিপ্লবীদের মামলাগুলো লড়ে যাওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহের ভার ছিল তাঁর ওপর। তিনি এ কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে পারতেন। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মি.স্টিভেন্সকে হত্যার দায়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও এই হত্যাকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন না, তবুও তাঁর ছয় বছরের কারাদণ্ড হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আরেকজন নারী খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন,তিনি হলেন অনিমা দাশ চৌধুরী।স্বামী বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় দাশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিপ্লবীদের আশ্রয়কেন্দ্র ছিল তাঁর বাড়িটি। পুলিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি রাতের আঁধারে তাঁর বাড়িতে বিপ্লবীদের আশ্রয় এবং খাবার দিতেন। ১৯২৩ সালে চট্টগ্রামের গৈরলা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের আরও অনেক নারীর ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে শত শত বিপ্লবীর মা,বোন,ভ্রাতৃবধূরা ছিলেন তাঁদের পরোক্ষ সহযোগী। তাঁদের সমর্থন ছাড়া বিপ্লবীরা দিনের পর দিন পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আত্মগোপনে থাকতে পারতেন না। তাছাড়া গ্রামে এবং শহরে সাধারণ পরিবারের অনেক অপরিচিত নারীও পরম মমতায় বিপ্লবীদের নিজগৃহে আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন। যাঁদের নাম ইতিহাসে হয়তো আজ লেখা নেই। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের মুসলিম মেয়েদের ভূমিকা পাওয়া যায় না।কারণ সে সময় চট্টগ্রাম এর মুসলিম সমাজ ছিল অত্যন্ত রক্ষণশীল। পর্দাপ্রথা ভেদ করে মেয়েরা তখন শিক্ষার ক্ষেত্রেই এগিয়ে আসতে পারেনি। তবে বিপ্লবীদের স্মৃতিচারণমূলক বইগুলো থেকে জানা যায় অনেক মুসলিম পরিবারে তারা বিপদের সময় আশ্রয় পেয়েছেন এবং সে পরিবারের মাদের কাছ থেকেও সন্তানের মতো স্নেহ পেয়েছেন। ব্রিটিশদেরকে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে সূর্য সেন এবং তাঁর বিপ্লবী দল চট্টগ্রামের বুকে যে গৌরবগাথা এঁকে দিয়েছেন এবং সেই রক্ষণশীল সমাজেও নারীদেরকে বিপ্লবীমন্ত্রে দীক্ষিত করে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে যেভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন সেই ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না।তাই সে ইতিহাস বেশি বেশি চর্চা হওয়া উচিত। সেই সময়ের নারীদের অপরিসীম সাহসের বীরত্বগাথা বর্তমান প্রজন্মের কাছে পোঁছে দেওয়ার জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। একদিন যে নারীরা সমস্ত ভয়কে জয় করে,সমস্ত প্রতিকূলতাকে পায়ে দলে তাঁদের জীবনকে এ দেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁদের স্মৃতিকে অমরত্ব দানের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা,সড়ক তাঁদের নামে নামকরণ করা আজ সময়ের দাবী। আমাদের মনে রাখতে হবে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। যার যতটুকু স্থান,ইতিহাস তাকে একদিন তা ফিরিয়েই দেয়। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের নারী সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু নারী সংগঠন নয়, চট্টগ্রামের প্রতিটি মানবতাবাদী মানুষই এ কাজে এগিয়ে আসুক,এটাই আজকের প্রত্যাশা। সহায়ক গ্রন্থ : ১.ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের নারী- আনোয়ারা আলম, ২.চট্টগ্রাম বিদ্রোহের কাহিনী-আনন্দ প্রসাদ গুপ্ত, ৩.অগ্নিযুগের কথা-সতীশ পাকড়াশী, ৪.সূর্য সেনের সংলাপ- সম্পাদনা -শেখ রফিকলেখক : প্রাবন্ধিক, কাথাসাহিত্যিক; সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ।.tdi_3_ff5.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_ff5.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});.tdi_4_c00.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_4_c00.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত