কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

প্রবাহ

দৈনিক আজাদী সম্পাদকীয় প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০৬:৩৫

.tdi_2_475.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_475.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});হযরত ইমাম বোখারী (রহ.)’র যেয়ারত পবিত্র কুরআন মাজীদের পর সর্বাধিক স্বীকৃত মর্যাদাপূর্ণ হাদীস গ্রন্থ বোখারী শরীফ। তাঁর রচিয়তা ইমাম বোখারী (রহ.)। মূল নাম মুহাম্মদ। নামকে পূর্ণাঙ্গভাবে লিখতে হলে তাঁর নাম হল মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিসবাহ। উপনাম আবু আবদুল্লাহ। তিনি বিশ্বের বুকে ইমামুল মোহাদ্দেসীন। আমিরুল মোমেনীন ফিল হাদীস হল তাঁর উপাধি। পবিত্র নগরী বুখরাতে তাঁর জন্ম বলেই বুখারী হিসেবে বিশ্বের বুকে তিনি সমধিক পরিচিত। সম্প্রতি উজবেকিস্তান সফরকালে ৩ ও ৪ নভেম্বর রবিবার ও সোমবার সমরকন্দের অনতিদূরে তাঁর যেয়ারত করার সৌভাগ্য হয়। ৮ দিনের জন্য উজবেকিস্তান সফরের প্রোগ্রামে দিল্লি থেকে তাশখন্দ হয়ে বুখারা চলে যাই। এখানে যেয়ারতের উদ্দেশ্যে ৩ রাত ছিলাম। অতঃপর ৩ নভেম্বর রবিবার সকালে ট্যুর অপারেটর ব্যবস্থাপনায় ৪টি বড় বড় বাস ২টি তার চেয়ে কিছুটা ছোট গাড়ি নিয়ে আমরা ১৮৫ জন যেয়ারতকারীর বহর প্রায় ৩ শ’ কি.মি দূরত্বে সমরকন্দের উদ্দেশ্যে রওনা হই। পথে যাত্রা বিরতি। অতঃপর আবার রওনা। সমরকন্দ উজবেকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ শহরের প্রায় ২০/২৫ কি.মি দূরত্বে ইমাম বুখারী (রহ.)’র মাজার কমপ্লেক্স। আমরা ২ নং বাসের যাত্রী। কয়েকজন উর্দু ভাষীসহ সবাই বাংলাদেশি। দিল্লি থেকে রাতের যাত্রায় রাজধানী তাশখন্দ পৌঁছায়। এখান থেকে সকালের ট্রেনে বুখারা গমন। ৩ দিন ব্যাপী যথাযথ বিশ্রামবিহীন যেয়ারত। যেয়ারতকারীগণ অনেকটা কাহিল । আমাদের বাসের গাইডকে অনেক যেয়ারতকারী বলতে থাকেন আমাদেরকে যাতে সমরকন্দের হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে যোহরের নামাজ, খাবার ও বিশ্রাম নিয়ে বিকালের দিকে হযরত ইমাম বুখারী (রহ.)’র যেয়ারতে আসলে যেয়ারতকালীন প্রশান্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু ট্যুর অপারেটর সিদ্ধান্তে অটল। মূলতঃ হোটেলে রাত্রিযাপন এবং সকালে চা নাস্তা (ঈড়সঢ়ষবসবহঃধৎু নৎবধশভধংঃ) বাদে দুপুর ও রাতের খাবার তারা অন্যত্র আয়োজন করে রেখেছে। এত বড় আয়োজন তাদের পক্ষে নাড়াচড়া সম্ভব নয়। সম্ভবত ২টার পর মাজার কমপ্লেক্সের নিকটে পৌঁছি। বুখারা থেকে এখানে ঠান্ডা আরও বেশি মনে হচ্ছিল। হয় তাপমাত্রা ২/৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হবে। এখানেই যার যার মত করে স্বাধীনভাবে যেয়ারতে সময়ক্ষেপন করতেছেন। তাঁর জন্ম বুখারায়,প্রাথমিক জীবন বুখারায় কাটে। বিশ্বখ্যাত বুখারা মাদ্‌রাসায় তিনি শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর ইন্তেকাল এখানে হওয়ায় এখানেই তিনি শায়িত। সে এক ঘটনা প্রবাহ ইতিহাস। মূলত মাজার কমপ্লেক্স ২০/৩০ একর এরিয়া নিয়ে হতে পারে। ২/৩ দিকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল সহ অবকাঠামো চিন্তা করলে প্রায় ১ বর্গ কি.মি হবে । আগেই অন্য প্রবন্ধে উল্লেখ করেছি উজবেকিস্তানে মহান ইমাম ,অলি,দরবেশগণের কবরকে মধ্যখানে রেখে চারদিকে খোলা জায়গা। অতঃপর কবরের দিকে খোলা তিন দিকের অবকাঠামো। এখানে পেছনের দিকে থাকে লম্বা লম্বা টুল, চেয়ার। তারা টুলে চেয়ারে বসেই আরামে যেয়ারত করে থাকে। এখানে এসেও তা প্রত্যক্ষ করলাম। মাজার এরিয়ার পশ্চিম পাশে একতলা বিশিষ্ট বিশাল দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। বিশ্বের বহু দেশের মত উজবেকিস্তানে একতলা বাদে দ্বিতল বা উপরে দিকে আরও অবকাঠামো নিয়ে মসজিদ চোখে পড়তেছে না, হয়তবা নাই। এখানকার ওলি, দরবেশগণের মাজার কমপ্লেক্স বা মসজিদের ওযুখানা টয়লেট কিছুটা দূরত্বে। অনেকটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলা যাবে। তবে তা শতভাগ নয়। শীত এসে গেছে বিধায় ঠান্ডার সাথে গরম পানির ব্যবস্থা পাচ্ছিলাম। এখানে টয়লেট সেরে ওযু করে প্রথমে যোহরের নামাজ পড়ে নিই। অতঃপর যেয়ারতে আসি। সময় সীমিত তার পরেও যতটুকু পারি যেয়ারতে সময় কাটাই। অনেকটা বিকালের দিকে আয়োজকের বাসে মূল মাজার কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিকে একটি হল রুমে আমাদেরকে নিয়ে যায় সেখানে প্যাকেট লাঞ্চ সরবরাহ করে। অতঃপর ভিতরের সোজা রাস্তা দিয়ে ৩/৪ শত মিটার দূরত্বে আবারও মাজার এরিয়ায় চলে আসি। আবারও যেয়ারতে সময় কাটাই। এখানে শেষ বেলা আছরের নামাজ পড়ে আয়োজকের বাসে সমরকন্দ শহরে চলে যাই। পুরাতন সমরকন্দে হযরত ওবাইদুল্লাহ আহরার (রহ.)’র যেয়ারতে। এখানে শেষ টাইমে মাগরিব ও এশা পড়ি। খাজা নক্‌শবন্দ বাহাউদ্দিন (রহ.)’র খলিফা ও জামাতা খাজা আলা উদ্দিন আত্তার (রহ.)। তাঁর খলিফা হযরত ইয়াকুব চরখী, তাঁর খলিফা হযরত খাজা ওবাইদুল্লাহ আহরার। অতঃপর অন্যখানে রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার। রাত ১০ টার পর হোটেলে। এখানে যেয়ারতকারীগণকে দু’হোটেলে রাখা হয়েছে। ইমাম বুখারী (রহ.)’র যেয়ারত করে আসার পথে বাসে সহযাত্রীরা বললেন, মূল কবর নিচে। এ রকম উজবেকিস্তানসহ বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে। হোটেলে কক্ষ বরাদ্দ নিয়ে রুমে পৌঁছতে পৌঁছতে গভীর রাত। অতিক্লান্ত দেহ। তারপরও ফজরের নামাজের পর টেক্সী নিয়ে পুনঃ যেয়ারতের উদ্দেশ্যে যেতে মন থেকে তাড়িত হই। ফলে ফজরের নামাজের পর পর সহযাত্রী এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াস, আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম ও আলহাজ্ব মুহাম্মদ শরীফকে সাথে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। গত রাতে বৃষ্টি ও বাতাস ছিল। ভোরে হালকা বৃষ্টি, কনকনে ঠান্ডা, তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রী। হোটেলের সম্মুখে বড় সড়ক নয়। দ্রুততার সাথে ২/৩ শ’ মিটার দূরে বড় সড়কে গিয়ে একটি টেক্সী ভাড়া করি। ইমাম বুখারী (রহ.)’র মাজারে যাওয়া আসা ২০ ডলার। উজবেকিস্তানে তাদের ব্যবহৃত সোমের পাশাপাশি ডলারও ব্যবহৃত হয়। এখানকার জনগণ খুব আন্তরিক, তেমনি টেক্সী ড্রাইভারও। আমরা ৪ জন ২০/২৫ মিনিট ব্যবধানে শহর থেকে অনতিদূরে ইমাম বুখারী (রহ.)’র যেয়ারতে পৌঁছলাম। গাড়ি থেকে হেঁটে যেতে কষ্ট হচ্ছিল কনকনে ঠাণ্ডায় অনভ্যস্ত বিধায়। পায়ে জুতা-মোজা ,গরম কাপড়ের পাঞ্জাবী, পাঞ্জাবীর উপরে সুয়েটার, অতঃপর কোট; মাথার উপর টুপি, মাফলার। হেঁটে হেঁটে যেতে দেখতে পাচ্ছি গত রাতে বৃষ্টির সাথে বাতাস থাকায় হালকা স্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩/৪ ‘শ’ মিটার পর মূল কবরে গিয়ে পৌঁছলাম। ঐ সময়ও যেয়ারতকারীদের আগমন দেখতে পাচ্ছিলাম। ধার্মিক বয়স্ক মহিলারা গাছের পাতা সরানোসহ পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত। অনুমানে স্থানীয় এক লোক থেকে জানতে চাইলাম, মূল কবরের ওখানে যেয়ারতে যেতে চাবি কোথায় পাওয়া যায়। তিনি বললেন, সামনে মূল গেইটের পাশে ইমামের কক্ষ রয়েছে, চাবি ইমামের হাতে। যা এখান থেকে ১৫০/২০০ মিটার দূরত্বে। দ্রুত হেঁটে ইমাম সাহেবের কক্ষে যেতেও কাঁপতেছিলাম ঠাণ্ডায় । সাথে এডভোকেট মুহাম্মদ ইলিয়াসও, ইমাম বা মুয়াজ্জিন যে হউক তিনি চা খাওয়ার প্রস্তুতিরত। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে তাকে অতি বিনয়ে করুণ সুরে বললাম, আমরা বাংলাদেশের কয়েকজন যেয়ারতকারী এসেছি। ইনি চায়ের কাজ বন্ধ রেখে চাবি নিয়ে বের হয়ে আসেন। এখানে এসে মূল কবরের দরজা খুলে দেন। নিচে গাঢ় সবুজ কার্পেট। মূল কবর শরীফও সবুজে আবৃত। মূল কবর শরীফের কক্ষ এরিয়া উত্তর দক্ষিণ ১৫/১৬ ফুট পূর্ব পশ্চিম ১০/১২ ফুট হবে মাত্র । এখানেও পশ্চিমপাশে দেওয়ালের সাথে ৫/৭টি চেয়ার আছে। আমরা কেউ দাঁড়িয়ে,কেউ ফ্লোরে বসে কিছুক্ষণ যেয়ারতে সময় ক্ষেপন করলাম। ভক্তি সহকারে দোয়া দরূদ শরীফ পড়তেছিলাম। কিছুক্ষণের ব্যবধানে ইমাম/ মুয়াজ্জিন সাহেবের ইঙ্গিত পেয়ে যেয়ারত সমাপ্ত করি। বিদায়কালীন ইমাম /মুয়াজ্জিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হাতের ভিতর কিছু সোম /টাকা ঢুকিয়ে দিলাম। অতঃপর কয়েক ‘শ’ মিটার দূরে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির নিকটে চলে আসি। জানলাম এখন তাপমাত্রা শূন্যের ২ ডিগ্রি নিচে। আমাদের আবাসিক হোটেলটি বুখারার হোটেল থেকে দুর্বল। এখানে হোটেলে এসে সকালে চা/নাস্তা (ঈড়সঢ়ষবসবহঃধৎু নৎবধশভধংঃ) করতে দেখলাম খুব দুর্বল আয়োজন। মোটেও সন্তোষজনক হতে পারে না। ইহা আমাদের সহিত দেশ থেকে আসার আগে প্রতিশ্রুতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তারপরেও তাদের উছিলায় এ মহান ইমাম, সুফি দরবেশগণের যেয়ারতে আসতে পেরেছি বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইমাম বুখারী ১৩ শাওয়াল ১৯৪ হিজরি ৮১০ খ্রিস্টাব্দে বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১ শাওয়াল ২৫৬ হিজরি ৩১ আগস্ট ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ৬২ বছর বয়সে সমরকন্দ মহানগরীর অনতিদূরে ইন্তেকাল করেন। বস্তুতঃ হযরত ইমাম বোখারী (রহ.)’র মাজার কমপ্লেক্স সমরকন্দ-বুখারা মহাসড়কের ৮/১০ কি.মি দূরত্বে সমতলভূমিতে। এখানে শুধুমাত্র হযরত ইমাম বোখারী (রহ.)’র মাজার কেন্দ্রিক অবকাঠামো। যেমন-এক গম্বুজে মাজার, গম্বুজের নিচে সাজানো মাজার অবকাঠামো, মূল মাজার নিচে। প্রবেশের জন্য দরজা আছে। তবে তা সার্বক্ষণিক তালা বন্ধ থাকে। এ মাজারের চতুর্দিকে খোলা চত্বর। অতঃপর দক্ষিণে প্রধান প্রবেশ দিক বাদে অপর তিন দিকে সামনের দিকে খোলা রেখে বারান্দা টাইপের বলা যাবে। এখানে পেছনের দেয়ালের সাথে অসংখ্য টুল চেয়ার বসানো আছে। প্রায় ২/৩ একর এরিয়ার অবকাঠামোর চতুর্দিকে খোলা জায়গা। এখানে রয়েছে গাছ,নানান ফুলের বাগান। অতঃপর পশ্চিমপার্শ্বে একতলা বিশিষ্ট প্রকান্ড মসজিদ। অন্যান্য দিকে নানান অফিসাদি। হয়ত গেস্ট হাউস, মুসাফিরখানা ইত্যাদি থাকতে পারে। দক্ষিণ দিকে প্রবেশের পথে পানির ফোয়ারা। এর দক্ষিণে প্রকান্ড গেইটের দু’পাশে মাজার মসজিদ কেন্দ্রিক খতিব ইমামসহ নানান কক্ষাদি। এর বাহিরে রাস্তার পরে পশ্চিমপার্শে ওযুখানা, টয়লেট। উজবেকিস্তানের মাজার বা মসজিদ টয়লেটগুলো কিছুটা দূরত্বে হয়ে থাকে। অতঃপর এর চতুর্দিকে রাস্তা, গাছ ও বাগানাদি। এরপর দক্ষিণ দিক বাদে অপর তিন দিকে ৩/৪ তলা বিশিষ্ট প্রকান্ড প্রকান্ড দালানাদি। এখানে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,গবেষণা কেন্দ্র,কনফারেন্স হল, গেস্ট হাউস ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রায় ১ বর্গ কি.মি এর কাছাকাছি এরিয়া নিয়ে হয়ত ইমাম বোখারীর মাজার কমপ্লেক্স বাদে নিকটে শহর উপশহর ত নয়ই কোন ঘর-বাড়ি অবকাঠামো চোখে পড়েনি। লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট.tdi_3_507.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_507.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও