কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

রাজধানীতে করোনার মধ্যেই ডেঙ্গু আতঙ্ক

মানবজমিন ঢাকা মেট্রোপলিটন প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু এখনো চলছে। মার্চ থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধির দিকেই রয়েছে। দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশ ঢাকার। এমন পরিস্থিতিতে নগরীর মানুষের দিন কাটছে ভয় আর আতঙ্কে। এরই মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করছে ডেঙ্গু। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বেশকিছু এলাকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে এডিশ মশা। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী। গত বছর স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ডেঙ্গু। ২০১৯ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করেছে বাংলাদেশ। সে বছর এপ্রিল থেকে দেখা দেয়া ডেঙ্গু জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে মহামারি রূপ ধারণ করে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে এক লাখে পৌঁছে ছিল। এর মধ্যে তখন মারা গেছেন ১২১ জন। যদিও বেসরকারি হিসেবে সারা দেশে লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে তিনশ’র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ কারণেই চলতি বছরে করোনাভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রভাব সর্বত্র দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ঈদের পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মশকনিধন অভিযান চালিয়েও এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত করেছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত কয়েক দিনে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ২ সপ্তাহে ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ জন। যা গত মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসের রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীতে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে। বাসাবাড়ির আনাচে-কানাচে ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন স্থাপনায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। ঈদের সময় সিটি করপোরেশন কোরবানির পশুর বর্জ্য নিষ্কাশনে ব্যস্ত থাকায় কয়েকদিন মশক নিধন অভিযান বন্ধ থাকে। ফলে এই সময়ে এডিস মশা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিস্তার লাভ করে। এতে করে আগস্টের প্রথম থেকেই ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকে। ১লা আগস্ট থেকে ১৪ই আগস্ট পর্যন্ত ৩৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সরকারি হিসাব মতে, চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ১৬ই আগস্ট পর্যন্ত ৩৮৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৬৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন এখনো ২০ জন। ঢাকায় ১৫ই আগস্ট থেকে ১৬ই আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে আরো ৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।নগরীর বাসিন্দারা জানান, সিটি করপোরেশন মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করলেও তা বাস্তবতার তুলনায় নগণ্য। সিটি করপোরেশনের চেষ্টা থাকলেও মশককর্মীদের দায়িত্বে অবহেলায় ডেঙ্গু আতঙ্ক বাড়ছে। এদিকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে নারাজ। যার ফলে এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ পাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, গত মার্চে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ৩০ জন, জুনে ২০ জন ও জুলাই মাসে ২৩ জন। আগস্ট মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ জন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশক নিধনে ব্যাপক কার্যক্রম চালাচ্ছে ও গত কয়েকদিন যাবত প্রতিদিনই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন অনেকেই। এদিকে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড এখনো ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে এমন তথ্য প্রকাশ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি এডিস মশা নিয়ে ‘ডিসেমিনেশন অন মুনসুন এডিস সার্ভে-২০২০’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা। প্রতিবেদন বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট ১০০টি এলাকায় দুই হাজার ৯৯৯টি বাড়িতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের ভেক্টরের ওপর এই জরিপ কাজ পরিচালিত হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এরমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশনের ভেতরে রয়েছে ১০, ১১, ১৭, ১৯, ২১, ২৩, ২৪, ২৯, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২, ৪, ৮, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২৫, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪৫ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে। তবে উত্তরে ১৭ নম্বর এবং দক্ষিণে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বলছে, গত ৮ই আগস্ট থেকে দশ দিনব্যাপী শুরু হওয়া চিরুনি অভিযানে নামে ডিএনসিসি। অভিযান চালিয়ে এডিসের লার্ভা শনাক্ত করে জরিমানাও আদায় করছে সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। চিরুনি অভিযান চলাকালে সম্ভাব্য সকল এডিস মশার প্রজননস্থলে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনাপূর্বক কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। জনসাধারণকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে। নগরীতে বসবাসকারীরা একটু সচেতন থাকলেই এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারবে না। এতে করে ডেঙ্গুর আতঙ্ক কেটে যাবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন মানবজমিনকে বলেন, এডিস মশা ও তার লার্ভা নষ্ট করতে ডিএনসিসি নিয়মিতভাবে ওষুধ ছিটিয়ে আসছে। মে মাস থেকে তৃতীয় ধাপে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অভিযান এখনো চলমান। উত্তর সিটি করপোরেশনের মশক নিধণ অভিযান নিয়মিত পরিচালনা অব্যাহত থাকায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এডিস মশার প্রকোপ অনেক কম। ঢাকা উত্তরে আমরা ফ্রি ডেঙ্গু টেস্ট করাচ্ছি। টেস্টে ২ থেকে ৪ শতাংশ পজেটিভ আসে। এ বছর ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক কম। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি নগরবাসী সুফল পাবে। অন্যদিকে কিউলেক্স মশার নিয়ন্ত্রণ করতে আগামী মাস থেকে নতুন কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. রাসেল সাবরিন মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশা নিয়ন্ত্রণ রোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ১৬ই আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনসহ তিনটি মোবাইল কোর্ট চিরুনি অভিযান শুরু করছে। যাদের বাড়ি ও স্থাপনায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে নগরবাসীকে এই বিষয়ে বেশ সতর্ক করা হয়েছে। মেয়রের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী এখন মশক নিধন কার্যক্রমকে গতিশীল করা হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত