জগন্নাথপুরে ফের সক্রিয় অস্ত্রবাজরা

মানবজমিন জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

ফের সক্রিয় সিলেটের জগন্নাথপুরের অস্ত্রবাজরা। এক সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুরে। এলাকায় আধিপত্য, হাওর-বিল দখল সহ নানা কারণে সংঘর্ষে গোলাগুলি ও খুনের ঘটনা ঘটতো। ওয়ান-ইলেভেনের সময় পুলিশ ও র‌্যাব’র অভিযানে অস্ত্রবাজরা পিছু হটেছিলো। এ কারণে শান্ত ছিল অস্ত্রবাজদের ঘাঁটি সৈয়দপুর-শাহারপাড়া এলাকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জগন্নাথপুরে আবার সক্রিয় হয়েছে অস্ত্রবাজরা। গত ২রা আগস্ট তারা  সৈয়দপুর বাজারে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। এ সময় তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে এলাকায় ভীতির সৃষ্টি করে। এসব অস্ত্রবাজদের প্রকাশ্য অস্ত্র প্রদর্শনের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। সক্রিয় হয়েছে জগন্নাথপুরের পুলিশও। ঘটনার পর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে গত ৪ঠা আগস্ট এলাকার শীর্ষ অস্ত্রবাজ সৈয়দ সাইদুল হককে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার স্বীকারোক্তি মতো পুলিশ একটি কালো রঙের আগ্নেয়াস্ত্র (পাইপগান) উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জগন্নাথপুর থানার এসআই রাজীব রহমান বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলার এজাহারে তিনি জানান- স্থানীয় সৈয়দপুরের মল্লিকপুর থেকে সাইদুলকে গ্রেপ্তারের পর সে জানায়- এলাকার রুম্মান, মিজান ও শিব্বিরের সহযোগিতায় সে একটি আগ্নেয়াস্ত্র স্থানীয় মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী স্থানে রেখেছে। পুলিশ তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ওই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাইদুল জানায়- প্রায় দেড় বছর আগে সে ওই অস্ত্র টিয়াগাঁওয়ের আব্দুস শহীদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছে। এজাহারে বাদী এসআই মিজান উল্লেখ করেন- এই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সাইদুল ও তার সহযোগীরা এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত রয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর থেকে এলাকার চিহ্নিত অস্ত্রবাজ রুম্মান, মিজান ও শিব্বির পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ রুম্মান, শিব্বির ও রুমানের নামেও মামলা করেছে। এদিকে- এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার সূত্রপাত গত ২রা আগস্টের ঘটনা। ওইদিন সৈয়দপুর বাজারের আগুনকোনা এলাকায় প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়া ছাড়াও ২০ থেকে ২৫ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। গুলির শব্দে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সৈয়দপুর বাজারের আগুনকোনা এলাকায় গত এক যুগ ধরে এ ধরনের অস্ত্রের মহড়া দেখা যায়নি। ওয়ান-ইলেভেনের পর অস্ত্রবাজরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল। কিন্তু ২রা আগস্ট আবারো ঘটলো সেই পুনরাবৃত্তি। এ ঘটনা স্থানীয় সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালেহ আহমদ ছোটো মিয়া বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে এলাকার আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসানকে। মামলার এজাহারে সালেহ আহমদ ছোটো মিয়া ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকা আবুল হাসানকে অস্ত্রের যোগানদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এজাহারে তিনি আবুল হাসান ছাড়াও মামলার আসামি করেন মনোয়ার আলী, গ্রেপ্তার হওয়া অস্ত্রবাজ সাইদুল ইসলাম, পলাতক অস্ত্রবাজ রুম্মান, মিজান, আশরাফুল, জুম্মান, শাহবির, মমশাদ, নুরুল হক সহ কয়েক জনকে। এই এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন- আসামিরা অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ী। আসামিরা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। এ সময় তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ২রা আগস্ট বিকালে আবুল হাসানের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসী তার বাসভবনে হামলা করে। এ সময় সাইদুর, রুম্মান, মিজান সহ অন্তত ৫ জন সন্ত্রাসীর হাতে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তার বসতঘর লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এ সময় তিনি দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে প্রাণ রক্ষা পান বলে জানান। তিনি আরো উল্লেখ করেন- আসামি আশরাফুল তার ঘর লক্ষ্য করে পাইপগান দিয়ে গুলি ছুড়ে। খবর পেয়ে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে অস্ত্রবাজরা চলে যায় বলে জানান তিনি। গত বুধবার রাতে বাদী সালেহ আহমদ ছোটো মিয়া জানিয়েছেন- এলাকা ৫-৬টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখন এই অবৈধ অস্ত্রের কারণে এলাকায় স্বস্তি ফিরছে না। আর অস্ত্রবাজরা গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে এই আতঙ্ক আরো বাড়ছে। জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর-শাহারপাড় ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তৈয়ব কামালী ১৫ দিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। মানবজমিনকে জানিয়েছেন- অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলাকায় এখন সত্যি সত্যিই আতঙ্ক। এসব অস্ত্র উদ্ধার না হলে এলাকায় স্বস্তি ফিরবে না। প্রশাসন মাত্র একটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এজন্য তিনি প্রদর্শিত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধারে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার আহবান জানান। এদিকে- সুনাগঞ্জ পুলিশের জগন্নাথপুর সার্কেটের এএসপি মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন- অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি বর্ষণের ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাইদুলকে আগ্নেয়াস্ত্র গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় আরো তিন আসামি মামলা দায়েরের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন- অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রবাজদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযানে রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও