You have reached your daily news limit

Please log in to continue


করমর্দন আজ নিরাপদ নয়, নমস্কারেই ভারতীয়দের বাঁচার উপায়

নানা জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে রয়েছে অভিবাদনের হরেক রকম প্রথা। নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনজাতির মানুষ অতিথির নাকে নাক ঘষে স্বাগত জানান, ইথিয়োপিয়ায় কাঁধে কাঁধ স্পর্শ করে। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর অধিবাসী পুরুষরা পরস্পরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে অভিবাদন জানান। জাপান ও অন্যান্য কয়েকটি এশীয় দেশে ঝুঁকে অভিবাদন জানানোই রীতি, যাকে ‘বাও’ করা বলে। থাইল্যান্ডে ‘বাও’-এর মতোই দেহ ঝুঁকিয়ে হাতের তালু মাথায় চেপে ধরে, মুখে বলে ‘সাওয়াদ্দী’— এর নাম ‘ওয়ে’। ভারতে হাতজোড় করে নমস্কার ও বড়দের পা ছুঁয়ে প্রণাম করার রীতি। আরব দেশগুলোতে পুরুষরা মহিলাদের সঙ্গে করমর্দন করেন না, তবে আলিঙ্গন ও গালে গাল ছুঁয়ে মুখে চুম্বনের শব্দ করে অভিবাদন জানান। চুম্বনে ফরাসিরা অগ্রণী ভূমিকায়। চেনা-অচেনা সব অতিথিকেই চুম্বন দান করেন তাঁরা। বাঙালিদের মধ্যে পুরুষদের পরস্পরকে আলিঙ্গন প্রথা আছে, যার নাম কোলাকুলি। তর্জনী ও মধ্যমা দ্বারা ‘ভি’ চিহ্ন দেখানো ছিল প্রাচীন ইউরোপে অভিবাদনের আরেক প্রথা। শোনা যায়, আগিনকোর্টের যুদ্ধে (২৫ অক্টোবর, ১৪১৫) ফরাসি সৈন্যরা ইংরেজ সৈন্যদের তিরন্দাজি রুখে দিতে তাদের তর্জনী ও মধ্যমা কেটে নেয়। যে সৈন্যরা নিজেদের বাঁচিয়ে পালাতে পেরেছিল, তারা ফরাসি সৈন্যদের কাঁচকলা দেখানোর জন্য চালু করল এই ‘ভি চিহ্ন’ অভিবাদন। লিবেরিয়ানরা আঙুলে তুড়ি মেরে অভিবাদন করেন। তুভালুর অধিবাসীরা অতিথি যখন প্রথম বার আসেন, বা তুভালু থেকে বিদায় নেন, তাঁদের গালে নাক ঠেকিয়ে নস্যি নেওয়ার মত জোরে শোঁকেন, এর নাম ‘সোগি’। বিশ্ব জুড়ে এই নানা অভিবাদনের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রচলিত রীতি হল করমর্দন। সব রীতির মতো করমর্দন বা হ্যান্ডশেক-এর নেপথ্যেও আছে ইতিহাস। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে অ্যাসিরিয়ার সম্রাট তৃতীয় শালমানেসার, ব্যাবিলনের শাসকের সঙ্গে সিংহাসনের অধিকার সংক্রান্ত চুক্তি করেন। উভয়ে করমর্দন করেছিলেন, অ্যাসিরিয়ান সম্রাটের সিংহাসনে এটি খোদিত হয়েছিল। তবে করমর্দনের ইতিহাস তারও আগেকার। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে প্রাচীন গ্রিসে এই প্রথার উদ্ভব, ‘ডেক্সিওসিস’ নামে যার সাক্ষ্য মেলে বার্লিনের পারগেমন মিউজ়িয়ামে সংরক্ষিত একটি সমাধি-প্রস্তর ফলকে প্রজ্ঞার দেবী আথেনার সঙ্গে করমর্দনরত জিউসের স্ত্রী হেরা। মাথা ঝুঁকিয়ে অথবা অন্য ভাবে অভিবাদন না করে হাতে হাত মেলানোর এই প্রথার উদ্ভব মূলত এটি প্রমাণ করতে যে, ‘আমরা উভয়েই নিরস্ত্র, অতএব পরস্পরের বন্ধু হয়ে একত্রে আহার করতে পারি।’ কিন্তু ঠান্ডার দেশে লম্বা কোট, গাউন বা ট্রাউজারের পকেটে লুকিয়ে রাখা গুপ্ত অস্ত্র বাঁ দিকেও তো থাকতে পারে? বিশেষত, বিভিন্ন প্রস্তর ফলক ও মুরালে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে বাঁ হাতে ঢাল কিম্বা বল্লম জাতীয় কিছু, ডান হাত করমর্দনে অগ্রসর। তাই কয়েকটি ইউরোপীয় যোদ্ধা সম্প্রদায় ও স্কাউটদের মধ্যে বাঁ হাতে করমর্দনের প্রথা চালু হয়, বাঁ হাতে সুরক্ষা ঢাল নেই, তা প্রমাণ করবার জন্য। রকমফেরে করমর্দনের হরেক নাম পাই, ‘ফিস্ট বাম্প’ (পরস্পরের মুঠো স্পর্শ করা), ‘হাই ফাইভ’ (লাফিয়ে পরস্পরের হাতের করতলে তালি দেওয়া), খেলোয়াড়দের মধ্যে এটি জনপ্রিয়। এ ছাড়াও প্রাচীন কাল থেকেই জনপ্রিয় ছিল স্যালুট, টুপি খুলে অভিবাদন ইত্যাদি। কিন্তু শরীর নোয়ানো অথবা মাথার টুপি খোলায় রাজা-রাজড়াদের আত্মসম্মানে বাধত। তাই করমর্দন চালু হল, এ কথাও অনেক ইতিহাসবিদ বলেন। এখানে উভয় পক্ষ সমান সমান। কেউ ছোট কেউ বড় নেই। অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, করমর্দনকে সপ্তদশ শতকের কোয়েকার সম্প্রদায়ই ব্যাপক ভাবে নিত্যদিনের অভিবাদন রীতিতে শামিল করেছে, পরে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে রোমে করমর্দন সংক্রান্ত নির্দেশিকা (এটিকেট ম্যানুয়াল) লিপিবদ্ধ হয়। তিব্বতিদের মধ্যে রয়েছে অভিবাদনের এক অদ্ভুত প্রথা। তারা পরস্পরকে জিভ বার করে দেখায়। এরও নেপথ্যে আছে ইতিহাস। নবম শতকে তিব্বতে এক অত্যাচারী রাজা ছিলেন, নাম লাং দারমা। তাঁর জিভের রং ছিল কালো। লাং দারমার পুনর্জন্মে বিশ্বাসী তিব্বতিরা অতিথির জিভের স্বাভাবিক রং দেখে নিঃসংশয় হতে চান। আগন্তুকের দেহে লাং দারমার আত্মা থাকলে তার জিভের রং হবে কালো, তা না হলে অতিথি স্বাগত। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে লক্ষ করা যায়, প্রত্যেক প্রথা উদ্ভাবনের নেপথ্যে থাকে বিশেষ কোনও আর্থ-সামাজিক অথবা ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট। আলিঙ্গন, চুম্বন, করমর্দন সবই মানুষের সুবিধার্থে। আজ বিশ্ব জুড়ে মহামারি হয়ে উঠেছে কোভিড-১৯। এই রোগ এতটাই সংক্রামক যে, মানুষকে মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থে। আলিঙ্গন-চুম্বনের তো প্রশ্নই নেই, করমর্দনের হস্ত-স্পর্শও আজ নিরাপদ নয়। নমস্কারেই বাঁচার উপায়। করমর্দন প্রথার ইতিহাস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আগন্তুক অতিথির প্রতি অবিশ্বাস ও ভয় থেকেই তার উদ্ভব। সে দিক থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু জনজাতি গোষ্ঠীর আদর্শ আমাদের শিক্ষণীয়। অতিথির অভিবাদনে তাঁরা বলেন, ‘সউবোনা’— এর আক্ষরিক অর্থ হল, ‘তোমার ভালমন্দ সব কিছু-সহ তুমি যেমনটি, আমি ঠিক তেমন ভাবেই তোমাকে গ্রহণ করলাম, আমার কাছে তুমি আদরণীয়, আমি তোমার কদর করি।’ উত্তরে অতিথি বুকে হাত দিয়ে ঝুঁকে বলবেন, ‘শিবোকা’, অর্থাৎ, ‘আমি জেনে নিশ্চিন্ত হলাম যে আমি তোমার কাছে গ্রহণযোগ্য ও আদরণীয়।’
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন