২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেও নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনিত হন তিনি!
নোবেল পুরস্কার বিশ্বের সবচেয়ে বড় এক সম্মাননা। এই পুরস্কার কেবল বিশেষ মানুষেরাই পেয়ে থাকেন। এই পুরস্কার পাওয়া একেবারেই সহজ নয়। বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই পুরস্কার। কয়েকটি ক্যাটাগরিতে দেয়া হয় নোবেল পুরস্কার। এর মধ্যে শান্তি অন্যতম। এই পুরস্কারের যোগ্যতা তারাই রাখেন যারা অকাতরে মানুষের জন্য কাজ করেন। সমাজের অন্য মানুষদের সুখ শান্তিতে কাজ করেন নিরসল, স্বার্থহীনভাবে।
তবে জানেন কি? ইতিহাসের একজন কুখ্যাত গণহত্যাকারী পেয়েছিলেন এই সর্বোচ্চ সম্মানের মনোনয়ন। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়! হ্যাঁ হিটলার এবং মাও সে-তুংর পর তিনিই সবচেয়ে বেশি গণহত্যা চালিয়েছিলেন। বলছি, জোসেফ স্ট্যালিনের কথা।
তার শাসনামলে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষকে তিনি হত্যা করেন। এদের মধ্যে দুই মিলিয়ন হলো দুর্ভিক্ষ পিড়িত ইউক্রেনিয়ান কৃষক। এছাড়াও তিনি রাশিয়ান আর্মির সেনা সদস্য এবং বুদ্ধিজীবিদের পাঠিয়েছিলেন নির্বাসনে এবং হত্যা করেছিলেন নির্বিচারে। তার মতে, তিনি সামাজিকভাবে ক্ষতিকর মানুষগুলোকে সমাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
১৮ ডিসেম্বর ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই কুখ্যাত মানুষটি। যদিও জন্মের সময় তিনি কুখ্যাত ছিলেন না। জীবদ্দশায় নানা অপকর্মে অর্জন করেছেন এই তোকমা। রুশ ভাষায় ‘স্ট্যাল’ অর্থ ইস্পাত ‘স্ট্যালনোই’ অর্থ ইস্পাত কঠিন! ‘লৌহমানব’ খ্যাত নিষ্ঠুর শাসক জোসেফ স্ট্যালিন। তিনি ছিলেন একজন রুশ সাম্যবাদী রাজনীতিবিদ। ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন স্ট্যালিন।
ইতিহাস সোভিয়েত ইউনিয়নের এ নেতার ভয়ঙ্কর সব অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে আছে। একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলেন স্ট্যালিন। দরিদ্র মুচির ঘরে জন্ম নেয়া স্ট্যালিন ছেলেবেলা থেকেই ডানপিঠে। তিনি মূলত জর্জিয়ান। তার আসল নাম জোসেফ বেসারিওনি জুগাসভিলি। বহু কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতার মতো স্ট্যালিন হলো তার ছদ্ম নাম। স্ট্যালিন ছদ্মনামের আগে তাকে কোবা এবং সোসেলো নামে ডাকা হতো।
সাত বছর বয়সে পক্সে আক্রান্ত হন তিনি। ১০ বছর বয়সে মিশন চার্চ স্কুল দিয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু। স্কুলে জর্জিয়ান শিশুদের রুশ ভাষা শিখতে বাধ্য করা হতো। ১২ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাম হাতটি চিরদিনের জন্য অচল হয়ে যায় স্ট্যালিনের। ১৬ বছর বয়সে জর্জিয়ান অর্থাডক্স বৃত্তি পান। তবে সেখানে তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও ধর্মীয় শাসনের বিরুদ্ধাচরণ করেন। ১৮৯৯ সালে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় তিনি বহিষ্কার হন। তবে সোভিয়েত নথি থেকে জানা যায়, তৎকালীন নিষিদ্ধ বই পড়ার দায়ে এবং গণতান্ত্রিক পাঠচক্র গড়ে তোলায় তাকে বহিষ্কার করা হয়।
স্কুল ছাড়ার পর লেনিনের লেখা পড়ে মার্কসবাদী বিপ্লবী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসের এই সময়ে স্ট্যালিনের নেতৃত্বে প্রচলিত রাজনৈতিক মতবাদ ‘স্ট্যালিনবাদ’ নামে পরিচিতি পায়।