ড. আসিফ লড়াই অব্যাহত থাকুক; হীনমন্যতার পরাজয় হোক
সেই কতযুগ আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তান রে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।' তারপর দীর্ঘকালের লড়াই সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের পর বাঙালির জাগরণের মহাজাদুকর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তারই উত্তর দিয়েছিলেন তার স্বপ্নের স্বাধীন দেশে পা রেখেই ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘কবিগুরু দেখে যান আপনার সাত কোটি মানুষ আজ মানুষ হয়েছে, তারা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে।' কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের কথা নির্মমভাবে সত্য প্রমাণ করেছিলেন কিছু বাঙালি ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালো রাতে পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়ে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। আজ এতো বছর পরেও নিশ্চয় কবিগুরু উপর থেকে হাসছেন আমাদের হীনমন্যতা আর সংকীর্ণতার নগ্নরুপ দেখে!
দুইদিন আগে গ্লোব বায়োটেকের গবেষক ড. আসিফ মাহমুদ করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে আমাদের কিছু মানুষকে ভীষণভাবে গর্বিত করলেও কিছু মানুষের নাক ছিটকানতে লজ্জাও পেয়েছি। পৃথিবীর কত বড় বড় ধনবান দেশ ঘোষণা করেও এখনো সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে আসতে পারেনি। কিন্তু সেই ঘোষণা আসার সাথে সাথে আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি কত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছি। আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের জন্য প্রার্থনা আর শুভ কামনার বার্তায় ভরে উঠেছে আমাদের ফেসবুক টাইমলাইনে। কিন্তু আমাদের দেশের সন্তান ড. আসিফ মাহমুদ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টার খবরে সকলকে কেন গর্বিত করতে পারেনি ?
করোনাভাইরাসের আতঙ্কের সারা পৃথিবী যখন কাঁপছে, তখন বাংলাদেশর সন্তান আসিফ মাহমুদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছি বারবার। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এটি কেবলই প্রাথমিক ধাপ সফলভাবে শেষ হয়েছে চূড়ান্ত সফলতার জন্য আরও কয়েক ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সেটি আরও কঠিন ও জটিলতা রয়েছে, সেখানে সফলও হতে পারি আবার আমাদের সফলতা নাও আসতে পারে। আর সেই ঘোষণা নিয়ে আমরা কি না করলাম। আমরা তো জানি পৃথিবীতে সব গবেষণা সফল হওয়ার ইতিহাস নেই। তাই বলে মানুষ আর বিজ্ঞানের প্রচেষ্টা থেমে থাকতে পারে না। সভ্যতার ইতিহাসও তাই বলে । কথাগুলো বলতে বলতে তার চোখের জল গড়িয়ে পড়ার দৃশ্যগুলো আমার কাছে দ্রেশপ্রেম আর মানবতাবোধের প্রতীক মনে হয়েছে। মানুষের জীবন বাঁচানোর আবেগ, দায়িত্ববোধ ও চেষ্টা তাকে এমন সাহসী কাজের দিকে নিয়ে এসেছে বলে মনে করি।
ড. আসিফের চোখের জল নিয়ে যারা ট্রল করেছেন তাদের তেমন কোন দোষ নেই। কারণ এটি ছিল আমাদের মূল্যবোধ ও দেশ প্রেমের অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। যেখানে রাষ্ট্রের উঁচু থেকে নিচু পর্যন্ত বিভক্তির কালো রেখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতিদিন, যে দেশে আদর্শবান দেশপ্রেমিক মানুষকে ঘরে বাইরে তিরস্কার শুনতে হয়। যেখানে এমন ট্রল খুব বেমানান নয়! যে দেশে নিজের সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে বিদেশি শুনলে হুমড়ি খেয়ে পড়ি পড়িমরি করে। যে সমাজের নেতৃত্ব দেয়া তথাকথিত শিক্ষিতজনেরা বিদেশি পণ্য, পোশাক আর খাবার নিয়ে গর্ববোধ করে সেই সমাজে কিছু মানুষ এমন আচরণ আমাদের বিচলিত করে না। যেখানে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আমলারা বিদেশে একাধিক বাড়ি না থাকলে বিষণ্ণতায় ভোগেন ডিপ্রেশনের ওষুধ খান, সেখানে এমনটাই কাম্য!