কারাদণ্ড হতে পারে শাকিব খানের
কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন চিত্রনায়ক ও প্রযোজক শাকিব খান। দিলরুবা খানের গাওয়া ‘পাগল মন’ গানের কিছু অংশ হুবহু শাকিব খান প্রযোজিত ছবি ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে ব্যবহার করা এবং তা বাণিজ্যিকভাবে মুঠোফোনের ইন্টারনেট প্যাকেজে অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করায় শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে তাকে। গানটির স্বত্ত্বাধিকারী হিসেবে গীতিকার প্রয়াত আহমেদ কায়সার, সুরকার আশরাফ উদাস ও কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খানকে ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর কপিরাইট সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।
কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, শাকিব খান সনদপ্রাপ্ত স্বত্ত্বাধিকারীদের অনুমতি ছাড়া ‘পাগল মন’ গানের ‘পিক লাইন’ ও সুর তার ‘পাসওয়ার্ড’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করে থাকলে তা হবে কপিরাইট আইনের ৭১ ধারার লঙ্ঘন। আর অভিযোগ প্রমাণিত হলে কপিরাইট আইনের ৮২ ধারায় ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ‘পাসওয়ার্ড’ চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক শাকিব খান দাবি করেছেন, গানের রেকর্ডিংয়ের আগে শিল্পী দিলরুবা খানের কাছ থেকে ‘মৌখিকভাবে’ অনুমতি নেয়া হয়েছিল। তবে তা উড়িয়ে দিয়ে দিলরুবা খান বলেছেন, শাকিব খানকে তিনি কোনো অনুমতি দেননি। গানের সুরকার আশরাফ উদাসও একই কথা বলেছেন।
কপিরাইট অফিস বলছে, কপিরাইট হিসেবে নিবন্ধিত কোনো গান ব্যবহারের জন্য স্বত্ত্বাধিকারীর স্বাক্ষরসহ লিখিত চুক্তি থাকতে হবে; মৌখিক অনুমতির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। শাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাসওয়ার্ড’ ছবির শুটিংয়ের সময় ফোনে কথা হয় দিলরুবা খানের সঙ্গে। ছবিটির আরেকজন প্রযোজক ইকবাল, পরিচালক মালেক আফসারী এবং চিত্রনাট্যকার আবদুল্লাহ জহির বাবু উপস্থিত ছিলেন। তারা সাক্ষী আছেন, আমি দিলরুবা খানের কাছ থেকে ‘পাগল মন’ গান ফিউশনের জন্য অনুমতি নিয়েছি। তিনি খুশিও হয়েছিলেন। আমাকে দোয়া করেন। এত মাস পর এসে কেন অস্বীকার করছেন, কীই–বা তার উদ্দেশ্য, কিছুই বুঝতে পারছি না! দেশের একজন জ্যেষ্ঠ শিল্পী হয়ে এখন এসে মিথ্যা বলে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করছেন। শাকিব খান বলেন, দিলরুবা খান অনুমতি না দিলে আমি কেনই–বা ওই গানের মাত্র দুই লাইন নেব? আমি গানটি দুই লাইন ব্যবহার করছি জেনে তিনি খুশিও হয়েছিলেন। বলেছিলেন, শ্রোতাদের আবার নতুন করে গানটির ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হবে। আরো বেশি শ্রোতার কাছে গানটি পৌঁছাবে। এখন তার মতো বড়মাপের একজন শিল্পী মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করছেন।
শাকিব খান বললেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গেল বছরের ঈদে। মুক্তির আগেই ইউটিউবে গান প্রকাশ হয়েছিল। যখন গান মুক্তি পেয়েছিল, তখন তিনি কেন চুপ ছিলেন? আমাকে যদি বলতেন, তাহলে তো ওই দুই লাইন ফেলে দিতাম, এমনকি গানও রাখতাম না। কোটি টাকায় সিনেমা বানাব, একটা গান নিয়ে কেন ঝুঁকি নেব! আর বিষয়টা এমন না যে, ‘পাগল মন’-এর ওই দুই লাইন না রাখলে ছবির বিরাট ক্ষতি হয়ে যেত! গানের অধিকার ইস্যুতে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন গায়িকা দিলরুবা খান। গত সোমবার রাজধানীর গুলশান থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দিলরুবা খান।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন শাকিব খান। তিনি বলছেন, দিলরুবা খান মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। সাধারণ ডায়েরিতে দিলরুবা খান লিখেছেন, আমি ৯০ দশকে ‘পাগল মন মন রে মন কেন এত কথা বলে’ গানে কণ্ঠ দিই। এই গানটি সর্বপ্রথম প্রচারিত হয় বাংলাদেশ বেতারে। কপিরাইট আইন ২০০০–এর ধারা ১৫(১)(ক) অনুযায়ী গানটি একটি সংগীতকর্ম এবং কপিরাইটের আওতাভুক্ত। আমার গাওয়া এই ‘পাগল মন’ গানটি জনপ্রিয়তা পায়। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্যাসেট বিক্রি হয়। তারপর আইনগতভাবে আমি গানটির কপিরাইট সনদ সংগ্রহ করি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস হতে, যাহার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৬৩৪৪ সিওপিআর।
সাধারণ ডায়েরিতে দিলরুবা খান আরো উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বিভিন্ন মারফতে তিনি জানতে পারেন, চলচ্চিত্র অভিনেতা শাকিব খান এসকে ফিল্মসের ব্যানারে ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে গানটি রিমেক করিয়েছেন। তারপর শাকিব খান তার ইউটিউবে আপলোড করেছেন। বর্তমানে গানটির ভিউ ১ কোটি ৮০ লাখ অতিক্রম করেছে, যা কপিরাইট আইন ২০০০–এর ধারা ৭১ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ধারা ২৩–এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দিলরুবা জানান, শাকিব খান ও তার প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে গানটি করার অনুমতি নেয়নি এবং তারা এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে চাইলেও অগ্রাহ্য করে। দিলরুবা খান সাধারণ ডায়েরিতে বলেন, এ বিষয়ে আগে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাই এবং কোনো সুরাহা না হওয়ার কারণে আমি গীতিকার ও সুরকারের পক্ষে সাধারণ ডায়েরি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি। সাধারণ ডায়েরি করার আগে দিলরুবা খান ও তার আইনজীবী ওলোরা আফরিন অনুমতি ছাড়া ‘পাগল মন’ গানের দুই লাইন পাসওয়ার্ড ছবিতে ব্যবহার করার কারণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ইউনিটে হাজির হন।