গান নিয়ে ছিনিমিনি, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কিং অব পপ জানে আলম
জঘন্য! একজন শিল্পী, সুরকার, গীতিকার গান করেছেন। সেই গান মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই গানগুলো তার অনুমতি ছাড়া তো অন্য কেউ গাইতেই পারে না। পৃথিবীর কোথাও এই সিস্টেম নাই। এটা ডাকাতির পর্যায়ে পড়ে। কোনোভাবেই এই বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো না। আমার বিখ্যাত গান ‘একটি গন্ধমের লাগিয়া’, ‘ইস্কুল খুইলাসে রে মওলা’, ‘দয়াল বাবা কেবলা কাবা’, ‘গ্রামের নওজোয়ান’ একটি গানও যদি কেউ অবৈধভাবে রেকর্ড করে আমি ওদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে মামলা করবো।
কথাগুলো বলছিলেন কিং অব পপ খ্যাত দেশবরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী জানে আলম। দেশীয় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র শিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালকরা অধিকার আদায়ে জোট বাঁধছেন। কিছু সংখ্যক শিল্পী মূল শিল্পীর অনুমতি না ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন, রেডিও, স্টেজ শোতে গাইছেন। সিনিয়র শিল্পীদের অভিযোগ অনেকে মূল শিল্পী, সুরকার, গীতিকারদের নাম বলতেও নারাজ। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। এ নিয়ে আরটিভি নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় খোলামেলা কথা বলেছেন বাংলাদেশের পপ গানের চার স্থপতির একজন জানে আলম।
সত্তরের দশকে পপ গানের চার স্থপতি ছিলেন ফিরোজ সাই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ ও জানে আলম। আজম খান ও ফিরোজ সাই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আর এখনও স্টেজ মাতিয়ে যাচ্ছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ ও জানে আলম।
অবৈধভাবে গান রেকর্ড করা নিয়ে জানে আলম বলেন, কিছু সংখ্যক বেয়াদব শিল্পী মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে সঙ্গীতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তারা আজম খান, জানে আলমদের গান স্টেজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে আবার রেকর্ডও করছে এটা ক্রাইম। আমার নিজের লেখা, সুর ও কণ্ঠ দেয়া গান অন্য কাউকে গাইতে হলে লিখিত পারমিশন নিতে হবে। আর পারমিশন নিলেও তো হবে না। এখানে কপি রাইটের বিষয় জড়িত। তারা চাইলেই আমাদের গান গাইতে পারে না।
ফিরোজ সাই, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ এবং আপনার গান যারা গাইছেন তা শুনে আপনার অভিমত কী? জবাবে কিংবদন্তি এই শিল্পী বলেন, ওরা তো চর্চা করে শিল্পী হয়নি। দুই একটি রিয়েলিটি শোতে নাম লিখে, কিছু সিনিয়র শিল্পীর গান মুখস্থ করে মনে করেছে শিল্পী হয়ে গেছে। অথচ সঙ্গীত হলো একটি সমুদ্র। এখানে শিখে আসতে হবে। আর এই শিক্ষার কোনো শেষ নাই। শিল্পী হতে হলে সাধনা লাগে। শিল্পী হতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তারপরে একজন শিল্পী হয়। কিন্তু এরা মনে করেছে শিল্পী হওয়া খুবই সহজ। জানে আলমের দুইটা গান স্টেজে গেয়ে মনে করে শিল্পী হলাম। এটা শুধু বাংলাদেশেই হয়। পৃথিবীর আর কোথাও হয় না। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমি অনুরোধ করবো, সরকার যেন এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
করোনায় শিল্পীদের সংকট নিয়ে মতামত জানতে চাইলে জানে আলম বলেন, করোনাকালে সবচেয়ে অসুবিধায় আছেন দেশের শিল্পীরা। কারণ বিগত কয়েক মাস ধরে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ। সবার আর্থিক অবস্থা একরকম নয়। আমিসহ অনেকেই হয়তো করোনার এই ধাক্কা সামাল দিতে পারছি। কিন্তু আমাদের অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী ভাই-বোনরা কঠিন সময় কাটাচ্ছেন। একজন শিল্পী তো কষ্টে থাকলেই কারো কাছে গিয়ে হাত পাততে পারে না। তাইতো সরকার শিল্পীদের বিষয়টি ভাববেন বলে আশা করছি। প্রয়োজনে শিল্পীদের জন্য লোনের ব্যবস্থা করার দাবি রইলো। এই সংকট কবে কাটবে তার কোনো ঠিক নেই। তাইতো শিল্পীদের প্রতি নজর দেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।