‘৩০ সেকেন্ডে উল্টে যায় লঞ্চটি, আমার বন্ধু উঠতে পারেনি’
মুন্সিগঞ্জের সত্যরঞ্জন বণিক আর আবদুর রউফ দুই বন্ধু। ২০ বছর ধরে রোজ লঞ্চের যাত্রী হয়ে সকালে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। কাজ শেষে আবার ঢাকা থেকে বিকেলে মুন্সিগঞ্জে চলে যান। প্রতিদিনের মতো আজও সকাল সাড়ে সাতটায় মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে মর্নিং বার্ড নামের লঞ্চটিতে দুই বন্ধু ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট টারমিনালের কাছাকাছি চলে আসে। লঞ্চটি তখন ঘাট থেকে ২০০ হাত দূরে ছিল। লঞ্চের যাত্রীরা নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঠিক তখন সদরঘাটের একটি লঞ্চ পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি তলিয়ে যায়।
আবদুর রউফের বন্ধু সত্যরঞ্জন মারা গেছেন। ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন রউফ। কীভাবে লঞ্চটি ডুবে গেল, সে ব্যাপারে আবদুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লঞ্চটি সদরঘাটের একেবার কাছে চলে আসে। আমরা নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে ঘাটের খালি একটি লঞ্চ আমাদের লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়। ভয়ে আমরা সবাই চিৎকার দিই। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের লঞ্চটি উল্টে যায়। আমরা ছিলাম লঞ্চের নিচের তলায়। পানিতে হাবুডুবু খেতে থাকি। দম আমার বের হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমি পানির ওপরে উঠতে পারি। বেঁচে যাই। কিন্তু আমার বন্ধু সত্যরঞ্জন উঠতে পারেনি, সে মারা গেছে।’
আবেগাপ্লুত আবদুর রউফ জানান, লঞ্চের যারা মারা গেছেন বা ডুবে গেছেন, তাঁদের অনেককে তিনি ভালো করে চেনেন। কারণ এসব মানুষ মুন্সিগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসেন। কাজ শেষে আবার মুন্সিগঞ্জে চলে যান।’ আবদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের লঞ্চটতে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী ছিল। নিয়ম মেনে ঘাটে ভেড়াচ্ছিল। হঠাৎ করে অন্য লঞ্চটি ধাক্কা দিয়ে এই মানুষগুলোকে মেরে ফেলল। আমিও মরে যেতে পারতাম।’
সত্যরঞ্জনের বড় মেয়ে দোলা বণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবার মিটফোর্ডে দোকান আছে। আমি থাকি ঢাকায়। আমার বাবা প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। আবার কাজ শেষে চলে যান। গত পরশু দিন আমার বাবা আমার বাসায় আসেন। আমি বাবাকে বলি, বাবা, এখন করোনা ভাইরাস। তুমি লঞ্চে করে যাতায়াত কোরো না। আমার বাসায় থেকে ব্যবসা করো। কিন্তু আমার বাবা কথা শুনল না। চলে গেল।’