‘আগে তো জীবনটা বাঁচাই’
রাজধানীর দক্ষিণখান থানার প্রেমবাগান এলাকার ভাড়াটিয়া মো. সুজাউদ্দিন সুজা পেশায় একজন ছোটখাটো ঠিকাদার। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নির্মিতব্য ভবনে রড, বালু, ইট ও সিমেন্ট সরবরাহ করেন। বাকিতে মালামাল দিয়ে পরে বিল নেন। ১৩ হাজার টাকা বাসাভাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেমেয়েসহ তিন সন্তান এবং স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের সব খরচ মিটিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন কাটাচ্ছিলেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন ভাড়া বাসা ছেড়ে রাজধানীতে নিজের ফ্ল্যাটে উঠবেন। ফ্ল্যাট বুকিংও দিয়েছিলেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের কার নিজের ফ্ল্যাটে ওঠার স্বপ্নসহ সব আশায় গুড়েবালি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিজনিত কারণে গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন।
যেসব ভবনে ইট, বালু সরবরাহ করতেন সেখানে কাজ বন্ধ। বকেয়া বিলও পাচ্ছেন না। আয় না থাকায় তিনমাসের বাড়িভাড়াও বাকি পড়েছে। কোনো উপায় না দেখে আপাতত ঢাকা শহর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়িওয়ালার কাছে করোনা পরিস্থিতির কারণে ভাড়া দিতে না পারার অক্ষমতার কথা জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে ভাড়া মাফ করিয়ে আজ বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সুজাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে তা কখন কল্পনাও করেননি। আপাতত গাজীপুরের পুবাইলে শ্বশুর বাড়িতে একটি মাটির ঘরে উঠব। বাড়ির আশপাশে শাকসবজি চাষ করা হয়েছে।
কোনোভাবে খেয়ে-পরে এ দুর্যোগকালীন সময়টা পার করে দেব। আগে তো জীবনটা বাঁচাই।’ অনেক কষ্ট করে বড় ছেলেকে বনানীর সাউথ ইস্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়াচ্ছিলেন। ছোট ছেলে আশকোনার কেসি মেমোরিয়াল স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। মেয়েটি নার্সারিতে পড়ে। করোনার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছেলেমেয়েদের পড়াশুনাও এখন বন্ধ রাখতে হবে তাকে।
ঠিকাদার সুজাউদ্দিন বলেন, মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অনেক পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আসলে সবার আর্থিক টানাপড়েনের কারণে এমনটি করছেন বুঝতে পারলেও তাদের অবহেলা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে বাড়িওয়ালা মানবিকতা দেখিয়ে তিন মাসের বাড়িভাড়া মাফ করে দেয়ায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এই ঠিকাদার।