জামায়াতের সঙ্গে এবি পার্টির দ্বন্দ্ব এবার প্রকাশ্যে
দলের সাবেক নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সঙ্গে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়ালো জামায়াতে ইসলামী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীকারী এ দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের বিরোধ এবার সামনে এসেছে। গত ২২ শে জুন অনলাইনে (জুম) অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে একজন কর্মীর প্রশ্নের প্রেক্ষিতে এবি পার্টি প্রসঙ্গে কয়েক মিনিট কথা কথা বলেন জামায়াতের আমির। সেখানে তিনি বলেন, ‘তাদের ((এবি পার্টি) কর্মসূচিতে তাদের এজেন্ডায় ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের এই চাপ্টার থাকবে না। এটাকে বাদ দিয়েই হবে তাদের সবকিছু। ফলে আমাদের আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভাইয়েরা একেবারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কারণ দ্বীন (ধর্ম) তাদের সাবজেক্ট নয়। আর দ্বীনটাই আমাদের সাবজেক্ট।’ ডা. শফিকুর রহমানের প্রায় তিন মিনিটের ভিডিও বক্তব্যটি এখন অন্তর্জালে ঘুরছে। একে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনাও তৈরি হয়েছে এখন জামায়াত ও এবি পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ।
জামায়াত ও এবি পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবি পার্টি গঠনের পর আগে থেকেই নতুন দল গঠনের বিষয়টি নিয়ে জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তাপ ছিলো। নামে-বেনামে আইডি থেকে অনেক দায়িত্বশীলরাও এবি পার্টি গঠন ও সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতাদের নিয়ে নানামুখী মতামত জানিয়ে এসেছেন। যদিও জামায়াত আমিরের ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য নিয়ে এবি পার্টির নেতাকর্মীরা ‘ওভার রিঅ্যাক্ট’ করার চেষ্টা করছে। তার বক্তব্য কেবল এবি পার্টি নিয়ে জামায়াতের অবস্থান কী, সে বিষয়ে।’
এবি পার্টির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জামায়াতের আমিরের বক্তব্যটি পার্টির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন। সংগঠনটির সিনিয়র-পর্যায়ের এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এবি পার্টি গঠনের আগে যখন জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন থেকেই ডা. শফিকুর রহমান দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সংগঠন সম্পর্কে নানা ধরনের মূল্যায়ন করে এসেছেন, কিন্তু প্রকাশ হয়নি। এবারই প্রথম তার বক্তব্য প্রকাশ্যে এলো।
এ প্রসঙ্গে পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবি পার্টি গঠনের শুরু থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শ্রেণির উগ্র জামায়াত সমর্থক এবি পার্টিকে ধর্মহীন, সেক্যুলার, আদর্শহীন হিসেবে উল্লেখ করে নানা অপপ্রচার চালিয়ে এসেছে। জামায়াত দলীয়ভাবে কখনওই তাদের এই উগ্রকর্মীদের দায়িত্ব স্বীকার করেনি। ফলে দলের আমীরের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে এই উস্কানিমূলক অপপ্রচারের পেছনে দলীয় হাই কমান্ডের মনোভাবই মূল কারণ।’
কী বলেছেন জামায়াতের আমির
২২ জুন অনলাইন জুম বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এবি পার্টি সম্পর্কে দলের মূল্যায়ন তুলে ধরেন। বাংলা ট্রিবিউনের কাছে ভিডিওক্লিপটি সংরক্ষিত আছে। সেখানে তিনি জুম বৈঠকে উপস্থিত আরেক নেতার প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার এই ভাইটি জানতে চেয়েছেন এবি পার্টি সম্পর্কে। কিছু লোক এই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে তাদের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি? এই পার্টিটা গঠন হয়েছে গত মে মাসের ২ তারিখে। তারা তাদের দলীয় মেনিফেস্টো ঘোষণার সময় ঐদিনই বলেছেন- এই পার্টির নীতি হবে কর্মকৌশল হবে তিনটি জিনিসের ওপর ভিত্তি করে। সেগুলো হচ্ছে সাম্য, সামাজিক সুবিচার ও মানবাধিকার। এটার ওউপরে তারা কাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্মানিত ভাইয়েরা, তারা পরিষ্কার করে বলেছে যে, তাদের কর্মসূচিতে তাদের এজেন্ডায় ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধের এই চাপ্টার থাকবে না। এটাকে বাদ দিয়েই হবে তাদের সবকিছু। ফলে আমাদের আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমাদের ভাইয়েরা একেবারে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কারণ দ্বীন তাদের সাবজেক্ট নয়। আর দ্বীনটাই আমাদের সাবজেক্ট। এই জায়গায় এই ভাইদের সাথে আমাদের আদর্শিক পথ একেবারে আলাদা হয়ে গেল। এখন তারা একসময় আমাদের ভাই ছিলেন, আমাদের প্রিয় মানুষ ছিলেন। এখন আমরা কী করবো এই ভাইদের ব্যপারে?’’