করোনায় পোশাকশ্রমিক ছাঁটাই বাড়ছে
করোনাভাইরাসের কারণে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার জের ধরে শ্রমিক ছাঁটাই বাড়ছে। কেবল চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ৪৬ পোশাক কারখানার ১০ হাজার ৯০৯ জন শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন। তাতে প্রতিদিন গড়ে ৫১৯ জন শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বস্ত্র খাতের ছাঁটাই ধরলে সংখ্যাটি দিনে ৫৩১-এ দাঁড়ায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে শ্রম মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকবার মালিকদের অনুরোধ করলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও মালিকপক্ষের নেতারা সুবিধা আদায়ে দলবেঁধে গত দুই মাসে একাধিকবার শ্রম ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লম্বা সময় বৈঠক করেছেন। কিন্তু শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় মালিকদের অনুরোধ করেও বৈঠকে আনতে পারেনি। অথচ নতুন করে তিন মাসের (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) মজুরি দেওয়ার জন্য আবারও অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে একজোট হয়ে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ১ জুন পর্যন্ত বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর ৬৯ কারখানা ৯ হাজার ১০ জন শ্রমিক ছাঁটাই করে। তার মধ্যে চাকরির বয়স ১ বছরের কম এমন শ্রমিকের সংখ্যা ৭ হাজার ৭২৪। এরপরের ২১ দিনে নতুন করে ৪৮ পোশাক কারখানার ১১ হাজার ১৫৮ জন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হন। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৩৮ কারখানার ৯ হাজার ১৯৭ জন শ্রমিক, বিকেএমইএর ৮ কারখানার ১ হাজার ৭১২ এবং বিটিএমএর ২ কারখানার ২৪৯ জন শ্রমিক রয়েছেন। প্রথমদিকে চাকরির বয়স ১ বছরের কম এমন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার বেশি হলেও জুনের ২ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত উল্টোটা হয়েছে। চাকরির বয়স ১ বছরের বেশি, এমন ৬ হাজার ৪৪ জন শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন।
জানতে চাইলে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন সপ্তাহে ১১ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই তথ্যভিত্তিক নয়। তা ছাড়া ৩০ লাখ শ্রমিকের তুলনায় সংখ্যাটি আনুপাতিকভাবে খুব বড় বলা যাবে না। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে মালিকদের বারবার অনুরোধ করছি।’
তবে শ্রম সংগঠনগুলোর অভিযোগ, করোনার সুযোগ নিয়ে পুরোনো শ্রমিক, ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ও যাঁরা প্রতিবাদী, তাঁদেরই বেশি ছাঁটাই করা হচ্ছে। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকেরা আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। শ্রম মন্ত্রণালয় অনুরোধ না করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ হতো বলে মনে করেন শ্রমিকনেতারা।
বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও ছাঁটাই করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকে চাকরির বয়স ১ বছরের কম, এমন শ্রমিকদের ছাঁটাই করার কথা বলেছিলেন মালিকেরা। তবে বর্তমানে ৫-৬ বছরের পুরোনোদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকেরা আইন অনুযায়ী যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা, তার চেয়ে কম দেওয়া হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনার কারণে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার জেরে গত এপ্রিল থেকে পোশাকশিল্পে ছাঁটাই শুরু হয়। শ্রম মন্ত্রণালয় তখন ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে অনুরোধ করেছিল। ওই এপ্রিলেই কারখানা বন্ধের সময় ৬৫ শতাংশ মজুরি দেওয়ার বিষয়ে শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে পোশাকশিল্পের মালিকেরা প্রতিশ্রুতি দেন যে ঈদের আগে শ্রমিক ছাঁটাই হবে না। এমনকি ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেন তাঁরা। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে অল্পসংখ্যককে পুনর্বহাল করা হয়। এরপর নিয়মিতভাবেই শ্রমিক ছাঁটাই করছে বিভিন্ন পোশাক কারখানা।