ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গড়ে প্রতিদিন তিন মামলা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এখন প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে মামলা হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এই মামলার সংখ্যা ৬০ ভাগ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কটূক্তিমূলক’ পোস্ট দেওয়া, পোস্ট শেয়ার করা, কার্টুন বা ব্যঙ্গাত্মক চিত্র আঁকা, ই-মেইলে যোগাযোগ করা এবং নিজেদের মধ্যে চ্যাট করার দায়ে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ এ বছর গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮ জন সাংবাদিক।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, মামলাগুলো হয়েছে অনলাইন বা ডিজিটাল প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা, গুজব রটানো ও মিথ্যাচার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি চেষ্টার মতো সাইবার অপরাধের অভিযোগে। গত বছর এই আইনে ৭৩২ টি মামলায় ১১৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১৬৫ মামলায় ৩৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই হিসেবে গড়ে প্রতিদিন প্রায় তিনটি মামলা হয়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পরিস্থিতি একই রকম। এই হারে মামলা হলে বছর শেষে মামলার হার গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দশটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে মামলার পরিসংখ্যান রাখে। গত বছর মানবাধিকার সংগঠনটি ২৪ টি মামলার খবর সংগ্রহ করেছে। এ বছর প্রথম ছয় মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ টিতে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মামলার আসামিদের বড় একটি অংশ ত্রাণ চুরি, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অনিয়ম, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন বা কার্টুন এঁকেছেন। তাঁদের কাউকে কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তুলে নিয়ে যায়। পরে ডিজিটাল প্রযুক্তি মামলায় তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক, কার্টুনিস্ট ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের পর মানবাধিকার কর্মীরা আইনটি বাতিলের দাবি তুলছেন। তাঁরা প্ল্যাকার্ডে দাবির কথা লিখে ছবি পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভার্চুয়াল আলোচনা করছেন। রাষ্ট্রচিন্তা ফেসবুকে তার দেয়ালে লিখেছে, ‘আমি চোরকে চোর, ভোট চোরকে ভোট চোর, ডাকাতকে ডাকাত, খুনিকে খুনি, আর দুর্নীতিবাজকে দুর্নীতিবাজ বলতে চাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করো।’
রাজনৈতিক মঞ্চ রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূইয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। ত্রাণ বণ্টন নিয়ে অনিয়ম নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে তাঁর ফেসবুক পেজে লিখে আসছিলেন।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, এই আইনের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে হয়রানি করা। ত্রাণ চুরির অভিযোগ উঠলে চোরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, যিনি চুরির কথা বলছেন তাঁকে ধরা হচ্ছে। অনেকে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন, নারীরা যখন প্রতারণার শিকার হবেন তখন এই আইন তাঁকে রক্ষা করবে। অথচ, এই অন্যায়ের প্রতিকার পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে হতে পারে। এমনকি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ সংশোধন করার সুযোগ ছিল। যে যে ধারায় মামলাগুলো হচ্ছে সেগুলোর কোনোটিই নারীর সুরক্ষার জন্য ব্যবহার হয় না।