করোনা জয় : ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

নয়া দিগন্ত প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২০, ০৭:৩০

করোনা নামক মহামারী সারা বিশ্বে এক কঠিন আঘাত হেনেছে। আমাদের বাংলাদেশেও এই মহামারী আমাদের কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছে। এখানে গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। তবে অনেকেই সুস্থও হয়ে উঠছেন। এই সুস্থ হওয়া লোকগুলো মহান রাব্বুল আলামিনের একান্ত দয়ায় করোনামুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু আমরা একে করোনা জয় বা সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিকে করোনাজয়ী বলছি।

জ্ঞানত বা অজ্ঞানত অথবা বুঝে বা না বুঝেই আমরা সুস্থ হওয়া ব্যক্তিটিকে করোনাজয়ী হিসেবে আখ্যায়িত করছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের শিক্ষা-সংস্কৃতি, দর্শন, নীতি-আদর্শ, কুরআন-সুন্নাহ কোনো কিছুই আমাদের এই ভাবধারাকে সমর্থন করে না। আসুন দেখি পবিত্র কুরআন আমাদের কী শিখায় :  ক. দুর্যোগ- মহামারীর কারণ : চীনের পশু-পাখির বাজার বা গবেষণাগার অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জীবাণু অস্ত্র তৈরির কারখানা যেখান থেকেই করোনাভাইরাস সৃষ্টি হোক না কেন তা প্রকৃতপক্ষে মানুষেরই কর্মকাণ্ডের ফল।

প্রাকৃতিক পরিবেশের ধ্বংস অথবা মানুষের স্বাভাবিক চরিত্রের সীমালঙ্ঘন যে কোনো ভাবেই হোক না কেন, কুরআনের মতে এটা আমাদের নিজ কৃতকর্মেরই অর্জন। (২:২০২, ৩০:৪১ এবং ৪২:৩০) আসলে মানুষের সীমালঙ্ঘনমূলক কার্যকলাপের শাস্তিস্বরূপ মানুষের প্রভু আল্লাহ্ তায়ালা দুর্যোগ মহামারী দিয়ে মানুষকে ঔদ্ধত্য ও অহঙ্কার পরিত্যাগ করে বিনয়ী হওয়ার সুযোগ দান করেন। (৬:৪২-৪৩ এবং ২৩:৭৬-৭৭) আর এই শাস্তি যখন আসে তা শুধু সীমালঙ্ঘনকারীকেই ধরে না বরং জনপদের সবাইকেই আক্রান্ত করে। (৮:২৫) এভাবেই মহান রব বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন।

বিপদে করণীয় : আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ধরনের পরীক্ষা বা বিপদ যখন আসে তখন মানুষকে সাধ্যমতো এর থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। মানুষ নিজে আগে চেষ্টা করলে তবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। (৬:১৩২, ১৩:১১ এবং ৫৩:৩৯) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সাথে সাথে আমাদের সীমালঙ্ঘনমূলক কার্যকলাপ থেকে ফিরে এসে নিজেদের সংশোধন করে নিতে হবে। (২:১৬০) আর ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।

(২:১৫৩) কারণ, যারা এই বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করার সাথে সাথে আল্লাহর পথে প্রত্যাবর্তন করে তারাই সফলতা লাভ করে। (২:১৫৬-১৫৭) গ. একমাত্র উদ্ধারকারী আল্লাহ তায়ালা : এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র মহান রাব্বুল আলামীন। (৬৭:১) এমনকি করোনাভাইরাস যত ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্রই হোক না কেন তার ওপর মহান সৃষ্টিকর্তার রয়েছে একচ্ছ আধিপত্য। (১০:৬১) এমতাবস্থায় এই ভাইরাসকে পরাজিত করতে হলে একমাত্র তাঁর সাহায্যেই সম্ভব।

(৩:১৬০) কাজেই আমাদের একমাত্র আল্লাহর ওপরই নির্ভর করতে হবে এই মহাবিপদ থেকে বাঁচার জন্য। (২৬:২১৭, ৩৩:৩ ও ৪৮) কারণ, আমরা সবাই একমাত্র আল্লাহ্রই মুখাপেক্ষী। (৩৫:২৫) আর আল্লাহর পথে ফিরে আসলে অবশ্যই আল্লাহ্ তায়ালা দয়া করবেন। (২৭:৭৩) ঘ. করোনাকে কেউ জয় করেনা বরং আল্লাহর অনুগ্রহেই করোনামুক্ত হয় : মানুষের জীবন-মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহর তায়ালা। (৬৭:২, ৫৩:৪৪) তিনিই আমাদের হাসি-কান্নার মালিক। (৫৩:৪৩) আসলে প্রত্যেক মানুষের জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা আল্লাহ্ পাক শবে ক্বদরের রাতেই নির্ধারণ করে দেন। (৪৪:৪) এভাবে প্রত্যেকের জীবনে যে বিপর্যয়ই আসুকনা কেন তা আল্লাহর তরফ থেকেই আসে।

(৯:৫১, ১৭:১৩ এবং ৫৭:২২) আবার আল্লাহ্ পাকই মানুষকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু সমস্যা হলো আমরা মানবজাতি বিপদে আল্লাহকে মন-প্রাণ দিয়ে ডাকি আর বিপদ কেটে গেলে নিজেদেরই বাহাদুরি দিয়ে থাকি। (১০:১২, ১১:১০, ১৬:৫৩-৫৪, ৩০:৩৬, ৩৯:৮ ও ৪৯, এবং ৪১:৫১) ঙ. করোনামুক্ত হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা কর্তব্য : উপরের আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম ‘কোভিড-১৯’ রোগ দেয়ার মালিক আল্লাহ আর এই রোগ থেকে মুক্তি দেয়ার মালিকও সেই রাব্বুল আলামিন।

কারণ, মহান রব কাউকে অনুগ্রহ করলে অথবা রোগ-শোক দিলে তা রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই। (৩৫:২) এ জন্যই যেকোনো সাফল্যেই কুরআনের শিক্ষা হলো সফলতা দানের জন্য আল্লাহর শোকর করা, তাঁর তাসবিহ করা এবং নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। (১১০:১-৩) কাজেই কেউ ‘কোভিড-১৯’ থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলে আমাদের উচিত মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। এই শুকরিয়া আদায় করতে হবে আমাদের নিজেদের কল্যাণের জন্যই। (২:১৫২, ৪:১৪৭ এবং ৩১:১২) এতে আল্লাহর কোনো লাভ-ক্ষতি নেই, এর ফায়দা হবে আমাদেরই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে