কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

আমার বাবা

প্রথম আলো প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২০, ০৯:৪৮

জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালন করা হয় বাবা দিবস। সে হিসাবে আগামীকাল ২১ জুন, এবারের বাবা দিবস। করোনাকালে সম্মুখসারিতে দায়িত্ব পালন করছেন, এমন চারজন বাবাকে নিয়ে ছুটির দিনের এবারের আয়োজনে লিখেছেন তাঁদের সন্তানেরা। জানিয়েছেন বাবার প্রতি ভালোবাসার কথা। পাশে থেকেও যেন দূরে আহির হোসেন, ঢাকা কষ্টের মুহূর্তও অনেক সময় আনন্দের আবরণে ধরা দেয়। ঘরবন্দী অবস্থায় এবারের ঈদের দিনেই তেমন একটা অভিজ্ঞতা হলো।

একে তো বাবার সঙ্গে রোজকার দেখাসাক্ষাৎ নেই, এক টেবিলে বসে খাওয়ার সুযোগ নেই; একই বাসায় থাকি, কিন্তু মনে হয় দূরের কোনো জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন বাবা। ঈদের দিন আমাদের দুই ভাইয়ের সঙ্গে বাবা সেলফি তুলবেন। আম্মুসহ আমরা ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বাবা মুঠোফোনটা ডান হাতে উঁচু করে ক্যামেরা ধরলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যতটুকু দূরে থাকাকে বলেছে সামাজিক দূরত্ব, সে দূরত্ব মেনে সেলফি তোলা হলো। হাসতে হাসতে বাবা তাকালেন পর্দার দিকে। মনে হচ্ছিল অনেক দিন পর যেন বাবাকে সামনাসামনি হাসতে দেখলাম। সেই মার্চের শেষ দিনগুলোতে সরকার যখন ছুটি ঘোষণা করল, তখন থেকে বাবা আলাদা হয়ে গেছেন। তিনি বাসায় আসেন, বাইরের ঘরে একা থাকেন। নিজের কাপড়চোপড় নিজে পরিষ্কার করেন। তাঁর খাবার সেখানে দেওয়া হয়, মাঝেমধ্যে মা মাস্ক পরে তরকারির বাটি নিয়ে যান। বাবা খাবার শেষ করে থালা–বাসন পরিষ্কার করে রাখেন।

বাবার সঙ্গে আমাদের দেখা হয় না, কথা হয় ফোনে। আমার বাবা ডা. শাহজাদ হোসেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের প্রধান। এখানকার নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) চলে তাঁরই তত্ত্বাবধানে। অনেকের জানা, এটি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল। অনেক মানুষ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেখানে আসেন, বাবা তাঁদেরই সেবা দেন। বাবাকে নিয়েও চিন্তা হয়। তাঁর কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে, যা কিনা করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষকে বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। বাবা জানেন সেসব। কিন্তু এ–ও জানেন, সবকিছুর আগে নিজের দায়িত্ব। আর দায়িত্বের ব্যাপারে সব সময় অনড় তিনি। যে দায়িত্বের শিক্ষা আমরাও পেয়েছি প্রতিনিয়ত। আমার মা আফরোজা আক্তারও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদার চিকিৎসক। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কর্মরত। আমি নিজেও মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি।

চিকিৎসক পরিবারে বড় হওয়ায় পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা তো একেবারে নতুন।  নতুন বলেই সুদিনের অপেক্ষা করছি। বাবা আবার স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসবেন। সকালে নাশতার টেবিলে আমরা নতুন কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যে আলোচনার ছেদ পড়বে বাবার অফিসে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে।  অনুলিখিত  করোনার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছ লামিয়া আক্তার,এমবিবিএস প্রথম বর্ষ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা  আমার বাবা মো. সাইদুর রহমান, একজন পুলিশ সদস্য। সবাই জানি, পুলিশ সদস্যরা সব সময় সামনে থেকে শত্রুর মোকাবিলা করেন। এই করোনা দুর্যোগে সারা বিশ্ব যেখানে ঘরে অবস্থান করছে, সেখানে তাঁদের ঘরে বসে থাকার সময় নেই। তারা তাঁদের কর্মে অবিচল।

এবারের বাবা দিবসে আমি আমার বাবাকে উল্লেখ করে এই কথাই বলতে চাই, ‘বাবা, আমি মনে করি, তুমি একজন সাহসী যোদ্ধা। তুমি করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছ। এই করোনার হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছ, যে রকম বাঁচিয়ে এসেছ প্রতিটি বিপদ থেকে।’ এই কথা বলার উদ্দেশ্য, আমার বাবাসহ পরিবারের সব সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলাম কিছুদিন আগে। তখন কোনো আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কেউ ছিল না পাশে। ছিল না একটুও সহানুভূতি। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে কঠোর হাতে করোনা রোগী হয়েও পরিবারের হাল ধরেছিল যে মানুষ, তিনি আমার বাবা।  আমার বাবার মতো নিঃস্বার্থভাবে যাঁরা মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, আমার বাবাসহ সেসব বাবাকে জানাই শত সালাম ও শ্রদ্ধা।  আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি। শুভ বাবা দিবস-২০২০ আব্বা আবার হাসপাতালে যাক মামুন হাওলাদার, বরিশাল যে আশঙ্কা করছিলাম, সেটাই ঘটল ১৫ জুন। সাতসকালে আব্বার কল পেয়ে মুঠোফোন হাতে নিই। ছয়টা বাজে তখন। জানি, আব্বা হাসপাতালে তখন। ওপাশ থেকে ‘হ্যালো’ বলতেই বুঝলাম তিনি অসুস্থ।

জানালেন, রাতে হঠাৎ শরীর খারাপ করেছে, তখন শীতে কাঁপছেন। তারপর বাসায় এলেন। তাঁকে আলাদা ঘরে রাখা হলো। আমার আব্বা জালাল উদ্দিন হাওলাদার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি বিভাগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। আর সাত মাস পর অবসরে যাবেন তিনি। সারা জীবন এই কাজটিই করে গেলেন। দায়িত্বে অবহেলা করতে দেখিনি কখনো। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শঙ্কা ছিল, তিনি অসুস্থ হতে পারেন। তাই বাড়তি সতর্কতা ছিল। পয়পরিষ্কার থাকতেন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে। তারপরও অসুস্থ হলেন। এর মধ্যে কষ্টের অভিজ্ঞতাও হলো। ১৭ জুন চিকিৎসা নিতে গিয়েও আশানুরূপ চিকিৎসা পাননি। হাসপাতালের একজন কর্মী হিসেবেও তিনি প্রাপ্যটুকু পেলেন না। করোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করাতে পারেননি। যাই হোক, পরিবারে আমি সবার বড়।

আমি ছাড়া দুই ভাই আর এক বোন আছে। যৌথ পরিবারে আমাদের বসবাস। বড় বলে ছেলেবেলায় বাবার আদর বেশি পেয়েছি। ছোটবেলায় আব্বার হাত ধরে বাজারে যাওয়ার স্মৃতি এখনো জীবন্ত। তখন প্রতি শুক্রবারে সাগরদী বাজারে যেতেন আব্বা, আমি হাতটা ধরে সঙ্গে যেতাম। সেই দিনগুলো স্বপ্নের মতো মনে হয়। বড় হতে হতে অবশ্য আব্বার সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে ভয় পাই। আসলে সে দূরত্ব কিছুটা সংকোচের। হয়তো মুখে কিছু বলতে পারি না, কিন্তু আব্বা বুঝে যান, আমরাও তাঁর ভালোবাসাটা অনুভব করি। বরিশাল শহরে আমার একটা ছোট দোকান আছে। আব্বা দোকানে সময় দেন।

ব্যবসাটা বড় করার পরিকল্পনা তাঁরও আছে। আমাদের প্রতিটি কাজে বাবার পরামর্শ, বাবার উদ্যোগ থাকে। এখনো কোনো সঙ্কটে বাবাই আমাদের শেষ ভরসা, আশ্রয়। সত্যি বলতে বাবা ছাড়া আমরা অচল। তাই এই দুর্দিনে শুধু এটুকুই প্রত্যাশা, আব্বা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। তিনি যেন দায়িত্বের টানে হাসপাতালে ফিরে যান। অনুলিখিত * বাবা জালাল উদ্দিন হাওলাদারের সঙ্গে ছেলে মামুন হাওলাদারের কখনো ছবি তোলা হয়নি। কথা ছিল, ছুটির দিনের জন্য বাবা-ছেলে ছবি তুলে পাঠাবেন। কিন্তু জালাল উদ্দিন হাওলাদার অসুস্থ হয়ে পড়ায় ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। -বি.স.  বাবা সুস্থ থাকুন সুবর্ণা শারমীন, পাবনা পাবনা জেনারেল হাসপাতালের যখন কোনো অ্যাম্বুলেন্স ছিল না, শুনেছি, আমার বাবা আবুল হাসান সেই সময় থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন। বাবার বয়স এখন ৫৯ বছর। এখনো তিনি রোজ বের হন কোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে। আর আমরা পথ চেয়ে থাকি সুস্থতার সঙ্গে বাবার ফিরে আসার।

ছোটবেলা থেকেই বাবাকে নিয়ে আমাদের তিন ভাইবোনের এই অপেক্ষা। একমাত্র ভাইটা গত বছর সেই অপেক্ষা ঘুচিয়েছে, সে নিজেই এখন আমাদের চিরকালের অপেক্ষা। এই সময়ে এসে বাবাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা হয়। তাঁর বয়সজনিত শঙ্কার সঙ্গে অসচেতন মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের জন্যই বেশি চিন্তা হয়। আতঙ্ক কাজ করে, কখন যেন তিনিও করোনায় আক্রান্ত হন। এই তো কয়েক দিন আগের ঘটনা। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে থেকে একজন সংকটাপন্ন রোগীকে নিয়ে ছুটলেন রাজশাহীতে। মাঝরাস্তায় বুঝলেন রোগীর করোনার উপসর্গ রয়েছে। পথে কী আর করবেন। রোগীকে রাজশাহীর একটি হাসপাতালে রেখে বাসায় ফিরে দূরে থাকলেন। তাঁর কয়েকটা দিন কাটল একাকী। যখন জানলেন, রোগীর নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, তখন আবার স্বাভাবিক জীবন শুরু হলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে