সমাবর্তনের গল্প শোনাল বিটিএস
ইউটিউব আয়োজিত ‘ডিয়ার ক্লাস অব ২০২০’ নামের বিশেষ ভার্চ্যুয়াল আয়োজনে অংশ নিয়েছে কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস। পুরো বিশ্বে আলোড়ন তোলা এই দক্ষিণ কোরীয় গানের দলের সদস্যরা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জানিয়েছেন বর্তমান সময়ে তাঁদের মনের অবস্থা ও নিজেদের সমাবর্তনের স্মৃতি।
৮ জুন ‘ইউটিউব অরিজিনালস’ চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়। এই অনুভূতি আজীবন ধরে রাখতে চাই: আরএম১০ বছর আগে, আমার মাধ্যমিক স্কুলের সমাবর্তনের দিন প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছিল। দিনটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। সেদিন আমি বন্ধুদের সঙ্গে একটা ছবি তুলেছিলাম, শিক্ষাজীবনের বাকি দিনগুলোয় সেই ছবি আমার মেসেঞ্জার প্রোফাইলে ছিল। তখন আমি কম বয়সী এক ছেলে, যে জীবনের একটা অধ্যায় শেষ করে আরেকটা নতুন অধ্যায় শুরু করেছি মাত্র। স্পষ্ট মনে আছে সেই অনুভূতি। ওই মুহূর্তে আমি যেন সত্যিকারের আমি ছিলাম। এই অনুভূতি আমি আজীবন ধরে রাখতে চাই। কোরিয়ার সিউল থেকে তোমাদের জানাচ্ছি অভিনন্দন।
তোমাদের সামনের দিনগুলো নিয়ে আমরা খুবই রোমাঞ্চিত। তোমরা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকো না কেন, আশা করব আমাদের গল্পগুলো আজ তোমাদের স্বস্তি দেবে, একটু হলেও প্রেরণা জোগাবে। প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখছি: জাংকুকআমার সমাবর্তনের ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে আছে, ইউটিউবে বাংতান বোম-এ। হাইস্কুলের বছরগুলোয় আমার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তে ছিল আমার বিটিএসের সঙ্গীরা। মনে আছে, সমাবর্তনের দিন তারা বলেছিল, ‘তুমি সমাবর্তন পাওয়ার মতো এত বড় হলে কবে!’ সমাবর্তন শেষে আমরা সবাই জাজাংমেয়ন (কোরিয়ার একধরনের নুডলস) খেতে যাই। কিছুদিন আগে আমি আবার সেই ভিডিওটা দেখলাম। দেখে অবাক লাগল, ‘সেদিনের সেই ছোট ছেলেটা আজ বড় হয়েছে? আমিতে পরিণত হয়েছে?’ \
কিছুক্ষণ আগে আরএম বলল, সে এখনো তার সমাবর্তনের ছবিতে থাকা ছেলেটাকে নিজের ভেতর খুঁজে পায়। কিন্তু আমার মনে হয়, আমি অনেক দূর চলে এসেছি। আমার পথচলা থেমে নেই, বরং আমি প্রতিদিনই এগোচ্ছি, প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু শিখছি। আজ আমার সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে, নিজেদের ওপর, পৃথিবীর ওপর আস্থা রেখে বলতে চাই, আমি আশা করব তোমরাও আমার মতো নিজের ওপর বিশ্বাস রাখবে, আর যেকোনো পরিস্থিতিতে জীবনে এগিয়ে যাবে। তাড়াহুড়া কোরো না, লম্বা দম নাও: জিনবয়স তখন ২০, হাইস্কুল পেরিয়ে সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছি। সেই বয়সে ‘বড়’ হয়ে যাওয়া নিয়ে একটা ভয় কাজ করত। নিজেকে একটা অচেনা দুনিয়ায় খাপ খাওয়াতে পারব তো! মাঝেমধ্যেই অস্থির হয়ে উঠতাম, যখন দেখতাম আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হাঁপিয়ে যেতাম।
কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, তাঁদের আর আমার পথচলা এক নয়। আমি নিজের গতিতে ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম। তখন থেকে নিজের জন্য একটু বাড়তি সময় নেওয়াটা আমার অভ্যাসে পরিণত হলো। যেমন ধরো, কোনো নতুন কোরিওগ্রাফি শেখার সময় আমি মহড়া শুরু করি অন্য দিনের চেয়ে আগে। যদি তোমাদের মধ্যেও কেউ আমার মতো অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে গেলে বিভ্রান্ত হও, অথবা নতুন কিছু শুরু করতে গেলে চাপ বোধ করো, তাহলে তাড়াহুড়া কোরো না। লম্বা দম নাও। একসময় উপলব্ধি করবে, জীবনের যেকোনো মুহূর্তকেই একটা নতুন সুযোগে বদলে ফেলা যায়। যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা থেকে সরে আসো: সুগাইদানীং মনে হয়, আমি যেন কোনো একটা রেসের মাঠে মুখ থুবড়ে পড়ে গেছি। ধুলোবালি ঝেড়ে আবার উঠে দাঁড়াই, কিন্তু আশপাশে আমার সঙ্গে কাউকে খুঁজে পাই না। যেন আমি কোনো জনশূন্য দ্বীপে আটকে আছি। তোমরা হয়তো এমন সমাবর্তনের কথা কোনো দিন কল্পনাও করোনি। নতুন একটা দিনের শুরু হয়তো অনেক দূরের ব্যাপার মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি তোমাদের বলতে চাই: ভয় পেয়ে না, দুশ্চিন্তা কোরো না। শেষ আর শুরু, শুরু আর শেষ—একে অপরের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে; যা তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা থেকে সরে আসো। যা তুমি বদলাতে পারবে, নিজেকে সেখানে জড়াও।