অনলাইনে করোনা টেস্টের সিরিয়াল যেন সোনার হরিণ
রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা রাকিব হোসেন একজন হৃদরোগী। ইউনাইটেড হাসপাতালে ৬ মাস আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। সম্প্রতি তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গে কাশিও ছিল। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহে পরিবারের সদস্যরা বিচলিত হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে করোনা ফিভার ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য অনলাইনে সিরিয়াল পেতে যোগাযোগ করেন। এ প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাপকালে রাকিব হোসেনের সহধর্মিণী জানান, টানা চার দিন চেষ্টা করেও তিনি অনলাইনে সিরিয়াল পাননি। প্রতিদিনই অনলাইনে নাম-ঠিকানা, জন্ম-তারিখ-বয়স ইত্যাদি লিখে সিরিয়াল পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকলেও বারবার ওই তারিখের নির্ধারিত সংখ্যক রোগীর সিরিয়াল দেয়া শেষ হয়েছে মর্মে লেখা দেখতে পান। তিনি জানান, প্রতিদিন সকালবেলা একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনলাইনে সিরিয়াল নেয়া হয়।
মাত্র ১০ মিনিটেই সিরিয়াল নেয়ার কাজ শেষ হয়ে যায়। টানা চার দিন চেষ্টা করে পঞ্চম দিনে তিনি ফিফার ক্লিনিকে রোগীকে দেখানোর এবং পরীক্ষা করার সুযোগ পান। তিনি বলেন, 'অনলাইনে সিরিয়াল পাওয়াও যেন সোনার হরিণ।' করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজধানীবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক বেড়েছে। সামান্য জ্বর-কাশি হলেই মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন সন্দেহে নমুনা পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে তারা হাসপাতালগুলোতে নমুনা পরীক্ষা করতে ভিড় করছেন। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যতসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক নমুনা পরীক্ষার জন্য আসেন। ফলে অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করতে পারেন না কিংবা পরীক্ষা করতে অনেক সময় লেগে যায়। সরকারিভাবে এ পরীক্ষাটি বিনামূল্যে করা হয়।
বেসরকারিভাবে নমুনা পরীক্ষার জন্য ৩ হাজার ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। গত ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বেতার ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত করোনাভাইরাস ল্যাবরেটরি চালু হয়। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। গত শনিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। আজ (বুধবার) সকালে সরেজমিন শাহবাগ বেতার ভবনের সামনে দেখা যায়, অনলাইনে সিরিয়াল নিয়ে অনেকেই পরীক্ষা করতে এসেছেন।
ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও রয়েছেন। সবার চোখে-মুখে এক ধরনের আতঙ্ক। একটি কাগজ হাতে সিরাজগঞ্জের এক বৃদ্ধ বাসিন্দা রাস্তায় বসেছিলেন। তিনি তিন দিন আগে গ্রাম থেকে এসেছেন। গত কয়েকদিন যাবৎ জ্বর, কাশিতে ভুগছেন। অনলাইনে সিরিয়াল না দিয়ে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি গ্রামের মানুষ, অনলাইন বুঝি না। ' হাসপাতালের একজন ডাক্তার এ কাগজটি নিয়ে এখানে আসতে বলেছেন। বলতে লাগলেন, 'জানি না এ কাগজে কি লেখা আছে, আজ পরীক্ষা করাতে পারব কি না।' এমইউ/জেডএ/জেআইএম