চাটমোহরে জোরপূর্বক কিস্তি আদায়ের অভিযোগ বিভিন্ন এনজিওর বিরুদ্ধে
সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরী অথরীটির নির্দেশনা অমান্য করে পাবনার চাটমোহরে গ্রাহকদের কাছ থেকে চাপ প্রয়োগে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন এনজিও’র বিরুদ্ধে। করোনা মহামারি শুরুর পর এমনিতেই উপার্জন কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তার ওপর এনজিও’র কিস্তি তাদের কাছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, কখনও মোবাইল ফোনে, কখনও বাড়িতে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য গ্রাহককে নানাভাবে চাপ দিয়ে হয়রানী ও হুমকী দিচ্ছেন এনজিওগুলোর মাঠকর্মীরা।
চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের স্ত্রী মলিনা বেগম। ৬ মাস আগে ব্র্যাক ও পাবনা প্রতিশ্রুতি এনজিও থেকে ৩০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে একটি ব্যাটারীচালিত অটোভ্যান কিনে দিয়েছিলেন। ছেলের অটোভ্যানের উপার্জনেই চলে চারজনের সংসার ও এনজিও’র কিস্তি। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর অঘোষিত লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ে তার সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে সরকার এনজিওগুলোর কিস্তি আদায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা হওয়ায় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তিনি। কিন্তু সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকতেই গত ১ জুন থেকে আবারও কিস্তি আদায় শুরু করেছে এনজিওগুলো। কখনও বাড়িতে গিয়ে, কখনও ফোনে রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে হুমকি দিয়ে কিস্তি আদায় করছে এনজিওগুলো মাঠকর্মীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন মলিনা বেগম।
শুধু মলিনা বেগমই নন, তার মতো উপজেলার খেটে খাওয়া মানুষগুলো এই হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। করোনা সংকটে এমনিতেই কমে গেছে উপার্জন। তার ওপর কিস্তির টাকা পরিশোধের চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, কখনও মোবাইল ফোনে, কখনও বাড়িতে গিয়ে কিস্তি পরিশোধের জন্য গ্রাহককে নানাভাবে চাপ দিয়ে হয়রানী ও হুমকী দিচ্ছেন এনজিওগুলোর মাঠকর্মীরা।একইগ্রামের শহিদুল ইসলাম ও তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘করোনার পর থেকে কাজ কাম নাই। ব্যবসা বাণিজ্যও তেমন নাই। কিভাবে চলবো সেটা ভাবতিই দিন যায়। এহন কিস্তি দেয়া তো জুলুম হয়া গ্যাছে।
গৃহবধূ জমশেদা খাতুন বলেন, আমি এনজিও’র স্যারে কইলেম স্যার আমি কিস্তি দিবের পারবোনানে, স্যার আমাক সেই ঝারি দিছে। এহন টেকা না থাকলি চুরি কইরে আইনে দেবো নাকি। আমারে ছাওয়ালপালেক ভাত দিবের পারিন্যা, কিস্তি দেবো কোনথেনে। এহন আমরা চাই সরকার লকডাউন করিছে, এর কি ব্যবস্থা করবি সরকার করুক।’গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাাক, আশা, পিসিডি, পাবনা প্রতিশ্রুতি, সিদীপ, জাগরনী চক্র ফাউন্ডেশন, টিএমএসএস, উদ্দীপন, এনডিপি, সেতু সহ বিভিন্ন এনজিওর অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসে কেউ নেই, মাঠকর্মী ছাড়াও কিস্তি আদায়ে মাঠে নেমেছেন শাখা ব্যবস্থাপকরাও।
সম্প্রতি সরকারি একটি নির্দেশনায় সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেয়ার একটি চিঠিকে পুঁজি করে জোরপূর্বক কিস্তি আদায় শুরু করেছে তারা। অপরদিকে মাইক্রোকেডিট রেগুলেটরী অথরীটি কর্তৃক এক পত্রে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো ধরনের কিস্তি আদায় করা যাবেনা মর্মে নির্দেশনাও জারি রয়েছে। তারপরও তারা প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে গিয়ে কিস্তি আদায়ে গ্রাহকদের চাপ সৃষ্টি করে হয়রানী করছেন এনজিওগুলোর মাঠকর্মী ও শাখা ব্যবস্থাপকরা।